জরুরি পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচের সহজ গাইড

বিদেশ যাত্রার জরুরি প্রয়োজনে পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। তবে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য জরুরি পাসপোর্ট পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকলে আপনি সহজেই কম সময়ে পাসপোর্ট পেতে পারেন।

জরুরি পাসপোর্ট করার নিয়ম জানা আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা, সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় এর প্রক্রিয়া ও খরচ ভিন্ন। আর এই গাইডে আমরা সব ধাপ সহজ ভাষায় তুলে ধরেছি।

জরুরি পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া

জরুরি পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া, অনলাইন আবেদন ধাপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

জরুরি পাসপোর্ট আবেদনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো সঠিক কারণ নির্ধারণ। আপনার কাছে চিকিৎসার প্রয়োজন, কূটনৈতিক কাজ কিংবা জরুরি ব্যবসায়িক সফরের প্রমাণ থাকতে হবে। এই কারণগুলো ছাড়া জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন।

প্রথমে আপনাকে নিকটস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে জরুরি পাসপোর্টের জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে। অতঃপর, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে আপনার জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করুন।

আবেদনের সময় আপনার জরুরি কারণের সমর্থনে সকল প্রমাণপত্র উপস্থাপন করুন। যেমন, হাসপাতালের রিপোর্ট, সরকারি চিঠি কিংবা কোম্পানির পত্র। এই নথিগুলো ছাড়া আপনার আবেদন অগ্রাহ্য হতে পারে।

জরুরি পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন

ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে জরুরি পাসপোর্টের জন্যও অনলাইন আবেদন করা যায়। তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে সম্পন্ন হয় না। বরং, প্রাথমিক আবেদন অনলাইনে করে পরবর্তী ধাপগুলো সশরীরে সম্পন্ন করতে হয়।

অনলাইন আবেদনের জন্য প্রথমে www.passport.gov.bd সাইটে ভিজিট করুন। সেখানে ‘Express Service’ অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করুন। ফর্ম পূরণের পর একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি পাবেন।

এরপর আপনাকে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সাথে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি নিয়ে যান। অনলাইনে আবেদন করলেও জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

জরুরি পাসপোর্ট করার খরচ

জরুরি পাসপোর্টের খরচ সাধারণ পাসপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে ৩৬ পৃষ্ঠার জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৫০০০ টাকা এবং ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৬০০০ টাকা খরচ হয়। এই ফি প্রতি বছর সামান্য বাড়তে পারে।

ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে এই ফি পরিশোধ করতে হবে। নগদ টাকা গ্রহণ করা হয় না। সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক কিংবা অগ্রণী ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে ড্রাফট করতে পারেন। ড্রাফটে পেয়ি হবে “Pay and Accounts Officer, [নিজ জেলার নাম] এর পক্ষে।”

এছাড়া ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ বাবদ অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। তাই মোট খরচ হিসেবে ৫৫০০-৬৫০০ টাকা বাজেট রাখা ভালো। তবে এই খরচ এলাকাভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

জরুরি পাসপোর্ট কাগজপত্র

জরুরি পাসপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রয়োজন। প্রথমত, আপনার জন্মনিবন্ধন সনদ কিংবা অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কপি লাগবে। এটি আপনার বয়স ও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

দ্বিতীয়ত, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এর মূল কপি ও ফটোকপি প্রয়োজন। যদি এনআইডি না থাকে, তাহলে চেয়ারম্যান/পৌর মেয়রের প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। এছাড়া ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি লাগবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জরুরি প্রয়োজনের কাগজ। যেমন, চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট, কূটনৈতিক কাজের জন্য সরকারি আদেশ, কিংবা ব্যবসায়িক জরুরি কাজের জন্য কোম্পানির চিঠি। এই প্রমাণপত্র ছাড়া জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়।

জরুরি পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায়

সাধারণত জরুরি পাসপোর্ট ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে এটি আপনার জরুরি কারণের ওপর নির্ভর করে। যদি খুবই জরুরি হয় এবং সঠিক প্রমাণ থাকে, ৩-৫ দিনেও পেতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যেও পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, সরকারি ছুটির দিনগুলো গণনায় আসে না। তাই আবেদনের সময় সরকারি ছুটির দিন বিবেচনায় রাখুন। রমজান মাস কিংবা ঈদের সময় প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হতে পারে।

পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে জানানো হবে। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। সংগ্রহের সময় আপনার আবেদনের রসিদ ও পরিচয়পত্র সাথে রাখুন।

জরুরি পাসপোর্ট অফিস

ঢাকায় আগারগাঁওয়ে প্রধান পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহে আঞ্চলিক অফিস আছে।

জরুরি পাসপোর্টের জন্য সকল অফিসে সুবিধা নেই। তাই আবেদনের আগে সংশ্লিষ্ট অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন। ঢাকার প্রধান অফিসে সবচেয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়। তবে ভিড়ও বেশি থাকে।

প্রতিটি অফিসের কাজের সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে অফিস বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজনে কখনো কখনো ছুটির দিনেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।

জরুরি পাসপোর্ট ট্র্যাক করার নিয়ম

আবেদনের পর আপনি অনলাইনেই পাসপোর্টের অবস্থা জানতে পারবেন। www.passport.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘Track Application’ অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে আপনার আবেদন নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।

ট্র্যাকিং সিস্টেমে বিভিন্ন পর্যায় দেখানো হয়। যেমন ‘Application Received’, ‘Under Process’, ‘Police Verification’, ‘Ready for Delivery’ ইত্যাদি। প্রতিটি পর্যায়ের তারিখ ও সময় দেখতে পাবেন।

যদি অনলাইনে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে পাসপোর্ট অফিসের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন। ঢাকার প্রধান অফিসের হটলাইন: ০২৯৬১১৬১৬। এছাড়া প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসের আলাদা ফোন নম্বর রয়েছে।

জরুরি পাসপোর্ট ফি

জরুরি পাসপোর্টের ফি কাঠামো সাধারণ পাসপোর্ট থেকে আলাদা। ৩৬ পৃষ্ঠার ইমিগ্রেশন পাসপোর্টের জন্য ৫০০০ টাকা এবং ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৬০০০ টাকা ফি নির্ধারিত। এছাড়া ১৫% ভ্যাট যোগ হবে।

ব্যাংক ড্রাফটে অবশ্যই সঠিক পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। বেশি কিংবা কম হলে আবেদন গৃহীত হবে না। ড্রাফটের সাথে ব্যাংক চার্জও যোগ হবে। সাধারণত ১০০-২০০ টাকা ব্যাংক চার্জ নেয়।

এই ফি শুধুমাত্র নির্ধারিত ব্যাংকগুলোতে পরিশোধ করতে হবে। প্রাইভেট ব্যাংকে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যায় না। তাই সময় নিয়ে সরকারি ব্যাংকে গিয়ে ড্রাফট করান।

জরুরি পাসপোর্টের জন্য কি কি লাগে

জরুরি পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা বেশ দীর্ঘ। সবার প্রথমে দরকার বৈধ জরুরি কারণের প্রমাণ। এটি ছাড়া অন্য কোনো কাগজ কাজে আসবে না। চিকিৎসা, কূটনৈতিক কাজ, জরুরি ব্যবসা – এগুলোর জন্য আলাদা আলাদা প্রমাণপত্র লাগবে।

ব্যক্তিগত কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ। এর সাথে যুক্ত হবে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি। ছবি অবশ্যই সাম্প্রতিক হতে হবে, পুরনো ছবি গ্রহণযোগ্য নয়।

আর্থিক প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিংবা আয়ের সনদ দিতে হবে। যদি চাকরিজীবী হন তাহলে অফিস থেকে NOC (No Objection Certificate) আনতে হবে। ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স ও ট্যাক্স সার্টিফিকেট লাগবে।

জরুরি পাসপোর্ট ফর্ম পূরণের নিয়ম

জরুরি পাসপোর্টের ফর্ম পূরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ফর্মে কোনো ভুল থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই খুব সাবধানে প্রতিটি ঘর পূরণ করুন। কোনো জায়গা ফাঁকা রাখা যাবে না।

ব্যক্তিগত তথ্যের ঘরগুলো জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পূরণ করুন। নাম, বয়স, ঠিকানা সব কিছুতে মিল থাকতে হবে। বাবা-মায়ের নামও এনআইডি অনুযায়ী লিখুন। ভিন্ন তথ্য দিলে যাচাইয়ের সময় সমস্যা হবে।

জরুরি কারণের ঘরটি বিস্তারিত পূরণ করুন। শুধু ‘চিকিৎসা’ লেখা যথেষ্ট নয়। বরং কোন রোগের জন্য, কোন দেশে, কবে যেতে হবে – এসব তথ্য দিন। এতে কর্মকর্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

বাংলাদেশে জরুরি পাসপোর্ট, আবেদন প্রক্রিয়া ও দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার ধাপ

বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। জরুরি পাসপোর্ট সেবা এর একটি উদাহরণ। তবে এই সুবিধা অপব্যবহার রোধে কঠোর নিয়ম রয়েছে। যথাযথ কারণ ছাড়া জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বিশ্বের ১০৪তম শক্তিশালী পাসপোর্ট। ৩৪টি দেশে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায়। আর ৩৯টি দেশে অন ভিসা সুবিধা রয়েছে। তাই জরুরি প্রয়োজনে এই পাসপোর্ট পেলে অনেক সুবিধা।

সরকার পাসপোর্ট সেবার মান উন্নয়নে ক্রমাগত কাজ করছে। ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর ফলে প্রক্রিয়া আরো দ্রুত হয়েছে। ভবিষ্যতে জরুরি পাসপোর্ট আরো কম সময়ে পাওয়া যেতে পারে।

জরুরি পাসপোর্টের সময়সীমা

জরুরি পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণ পাসপোর্টের মতোই ৫ বছর কিংবা ১০ বছর। তবে প্রক্রিয়াকরণের সময়সীমা আলাদা। সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস সময় লাগে। অতি জরুরি প্রয়োজনে এটি আরো কমানো যায়।

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যেও জরুরি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তবে এর জন্য খুবই গুরুতর কারণ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সুপারিশ লাগে। এমন সুবিধা সবার জন্য নয়।

সময়সীমা নির্ভর করে আপনার কাগজপত্রের সম্পূর্ণতা ও যাচাইয়ের ওপর। পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেশি সময় লাগলে পাসপোর্টও দেরি হয়। তাই সব কাগজপত্র ঠিকঠাক রাখুন।

জরুরি পাসপোর্টে প্রয়োজনীয় ছবি

জরুরি পাসপোর্টের ছবির নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ছবি অবশ্যই সাম্প্রতিক হতে হবে। ৬ মাসের পুরনো ছবি গ্রহণযোগ্য নয়। ছবির সাইজ হবে ৩৫x৪৫ মিমি। রঙিন ছবি বাধ্যতামূলক।

ছবির পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা কিংবা হালকা নীল হতে হবে। চোখে চশমা থাকলে চশমার কাঁচে কোনো রিফ্লেকশন যেন না থাকে। মুখের এক্সপ্রেশন স্বাভাবিক রাখুন। হাসি কিংবা গোমড়া মুখ করা যাবে না।

ধর্মীয় কারণে মাথা ঢাকা যায়। তবে মুখ সম্পূর্ণ দৃশ্যমান থাকতে হবে। পোশাক অবশ্যই শালীন হতে হবে। টি-শার্ট কিংবা অশালীন পোশাকে ছবি তোলা যাবে না। মনে রাখবেন, এই ছবিই আপনার পাসপোর্টে থাকবে।

জরুরি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে

জরুরি পাসপোর্টের সম্পূর্ণ খরচ হিসাব করলে বেশ কিছু টাকা লাগে। পাসপোর্ট ফি ছাড়াও অন্যান্য খরচ আছে। ৩৬ পৃষ্ঠার জন্য মোট খরচ প্রায় ৬০০০-৭০০০ টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৮০০০-৯০০০ টাকা লাগবে।

মূল ফির সাথে ১৫% ভ্যাট যোগ হয়। ব্যাংক ড্রাফটে ১০০-২০০ টাকা চার্জ দিতে হয়। ছবি তোলা, ফটোকপি, যাতায়াত খরচ মিলে আরো ৫০০-১০০০ টাকা লাগে। সব মিলে একটা বাজেট করে রাখুন।

এই খরচ এলাকাভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। ঢাকার বাইরে সাধারণত খরচ কম। তবে যাতায়াত খরচ বেশি হতে পারে। তাই আগে থেকেই একটা সম্পূর্ণ বাজেট তৈরি করে রাখুন।

জরুরি পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়ার উপায়

জরুরি পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়ার জন্য কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। সবার আগে সব কাগজপত্র সম্পূর্ণ রাখুন। একটা কাগজ বাদ পড়লেই দেরি হবে। তাই একটা চেকলিস্ট বানিয়ে প্রস্তুতি নিন।

ভোর বেলা পাসপোর্ট অফিসে যান। সকালে ভিড় কম থাকে। সিরিয়াল তাড়াতাড়ি পাবেন। দুপুরের দিকে গেলে অনেক সময় সিরিয়াল পেতেই দেরি হয়ে যায়।

যদি সত্যিই খুব জরুরি হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। উচ্চপদস্থ কারো সুপারিশ থাকলে প্রক্রিয়া আরো দ্রুত হয়। তবে অযথা হয়রানি করবেন না। সবার পরেও আপনার কাজ হবে।

উপসংহার

জরুরি পাসপোর্ট করার নিয়ম জানা থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে এর অপব্যবহার রোধে কঠোর নিয়ম রয়েছে।

মনে রাখতে হবে, জরুরি পাসপোর্ট শুধুমাত্র সত্যিকারের জরুরি প্রয়োজনেই করা উচিত। অহেতুক এই সুবিধা নিলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। সঠিক কারণ থাকলে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

আশা করি এই গাইড অনুসরণ করে আপনি সহজেই জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি প্রস্তুত রেখে সঠিক সময়ে আবেদন করুন। দেশের সেবায় নিয়োজিত পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা আপনাকে সাহায্য করবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

জরুরি পাসপোর্ট পেতে সর্বনিম্ন কত দিন লাগে?

খুবই জরুরি প্রয়োজনে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব। তবে সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবস সময় লাগে। এটি নির্ভর করে আপনার জরুরি কারণ ও কাগজপত্রের সম্পূর্ণতার ওপর।

কোন কোন কারণে জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া যায়?

প্রধানত চিকিৎসা সেবা, কূটনৈতিক কাজ, জরুরি ব্যবসায়িক সফর এবং পারিবারিক জরুরি অবস্থার জন্য জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। প্রতিটি কারণের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রমাণপত্র প্রয়োজন।

জরুরি পাসপোর্টের মেয়াদ কত?

জরুরি পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণ পাসপোর্টের মতোই। ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট পেতে পারেন। শুধু প্রক্রিয়াকরণের সময় কম লাগে।

জরুরি পাসপোর্ট করতে কি পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে?

হ্যাঁ, জরুরি পাসপোর্টের জন্যও পুলিশ ভেরিফিকেশন আবশ্যক। তবে এটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে ভেরিফিকেশন শেষ হয়ে যায়।

কোন ব্যাংকে জরুরি পাসপোর্টের ফি জমা দিতে হয়?

শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংকে ফি জমা দিতে পারবেন। ব্যাংক ড্রাফট করে ফি পরিশোধ করতে হবে। নগদ টাকা গ্রহণ করা হয় না।

জরুরি পাসপোর্টের ছবি কেমন হতে হবে?

ছবি অবশ্যই সাম্প্রতিক, রঙিন এবং ৩৫x৪৫ মিমি সাইজের হতে হবে। সাদা কিংবা হালকা নীল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। মুখের এক্সপ্রেশন স্বাভাবিক রাখুন।

অনলাইনে জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করা যায়?

প্রাথমিক আবেদন অনলাইনে করা যায়। তবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হয় না। পরবর্তী ধাপগুলো সশরীরে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে করতে হয়।

জরুরি পাসপোর্টে কি বিশেষ কোনো চিহ্ন থাকে?

না, জরুরি পাসপোর্ট দেখতে সাধারণ পাসপোর্টের মতোই। কোনো আলাদা চিহ্ন থাকে না। শুধুমাত্র প্রক্রিয়াকরণের সময় কম লাগে।

পুরনো পাসপোর্ট থাকলেও কি জরুরি পাসপোর্ট করা যায়?

হ্যাঁ, পুরনো পাসপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে কিংবা পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেলে জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে বৈধ জরুরি কারণ থাকতে হবে।

জরুরি পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কী করতে হবে?

জরুরি পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানায় জিডি করুন। তারপর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিন। এরপর নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সন্তানের জন্য জরুরি পাসপোর্ট করা যায়?

অবশ্যই। নাবালক সন্তানের জন্যও জরুরি পাসপোর্ট করা যায়। তবে বাবা-মা উভয়ের সম্মতি ও উপস্থিতি প্রয়োজন। সন্তানের জন্মনিবন্ধন অবশ্যই থাকতে হবে।

জরুরি পাসপোর্টের খরচ কি ফেরত পাওয়া যায়?

না, একবার ফি জমা দিলে তা ফেরত পাওয়া যায় না। এমনকি আবেদন বাতিল হয়ে গেলেও ফি ফেরত দেওয়া হয় না। তাই আবেদনের আগে ভালো করে চিন্তা করুন।

জরুরি পাসপোর্ট পেতে কারো সুপারিশ লাগে?

সাধারণত কোনো সুপারিশের প্রয়োজন নেই। তবে সরকারি কর্মকর্তা কিংবা গণ্যমান্য ব্যক্তির সুপারিশ থাকলে প্রক্রিয়া আরো দ্রুত হতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অনুমোদন লাগতে পারে।

বিদেশে থেকে জরুরি পাসপোর্ট করা যায়?

বিদেশে অবস্থানকারীরা সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা জরুরি প্রয়োজনে ট্রাভেল ডকুমেন্ট কিংবা পাসপোর্ট নবায়নের ব্যবস্থা করেন।

জরুরি পাসপোর্ট দিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায়?

জরুরি পাসপোর্ট দিয়ে সব দেশেই যাওয়া যায়। এটি সাধারণ পাসপোর্টের মতোই কার্যকর। তবে গন্তব্য দেশের ভিসা নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। কিছু দেশে ভিসার জন্য পাসপোর্টের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হয়।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top