
আধুনিক যুগে ভ্রমণের জন্য ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের সুবিধার জন্য এই ডিজিটাল পাসপোর্ট চালু করেছে। তবে অনেকেই জানেন না এর সঠিক খরচ কত।
বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকরা দুই ধরনের পাসপোর্ট পেতে পারেন। প্রথমত, পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট। দ্বিতীয়ত, দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট। যাইহোক, দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য বেশিরভাগ মানুষ ১০ বছরের পাসপোর্ট বেছে নেন।
ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া বেশ সহজ এবং স্বচ্ছ। প্রথমে আপনাকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন।
তারপর আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করবেন। নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এছাড়াও আপনার ছবি তোলা হবে। আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। চোখের স্ক্যান করা হবে। সবশেষে ফি জমা দিন। এই প্রক্রিয়া সাধারণত এক ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়।
১০ বছরের পাসপোর্ট ফি
১০ বছরের পাসপোর্ট ফি নির্ধারিত হয় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী। সাধারণ ডেলিভারির জন্য খরচ ৩,৫০০ টাকা। জরুরি ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৫,৫০০ টাকা।
তবে এই ফি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। সরকার নতুন নীতি ঘোষণা করলে দাম বাড়তে বা কমতে পারে। তাই আবেদনের আগে সর্বশেষ তথ্য জেনে নিন।
অতিরিক্ত পৃষ্ঠার জন্য আলাদা চার্জ রয়েছে। প্রতি অতিরিক্ত পৃষ্ঠার জন্য ২০০ টাকা। যদি আপনি ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট চান তাহলে অতিরিক্ত ১,২০০ টাকা লাগবে।
ই-পাসপোর্ট অনলাইন ফরম
ই-পাসপোর্ট অনলাইন ফরম পূরণ করা খুবই সহজ। www.epassport.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘নতুন আবেদন’ ক্লিক করুন। তারপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিন।
নাম, পিতার নাম, মাতার নাম লিখুন। জন্ম তারিখ এবং স্থান উল্লেখ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিন। বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা লিখুন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশার তথ্য দিন। জরুরি যোগাযোগের জন্য কারো নাম ও ঠিকানা লিখুন। সবশেষে ফরম সাবমিট করুন। একটি রেফারেন্স নম্বর পাবেন যা সংরক্ষণ করুন।
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম জানা থাকলে কাজটি অনেক সহজ হয়। প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি। নাবালকদের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি লাগবে।
আবেদনের সময় সব তথ্য সঠিক দিন। ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।
অনলাইন আবেদনের পর নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হন। দেরি করলে নতুন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। পোশাক-আশাক সাধারণ এবং ভদ্র রাখুন। চশমা পরা থাকলে খুলে ছবি তুলতে হবে।
ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি সময়
ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি সময় নির্ভর করে আপনার বেছে নেওয়া সেবার ওপর। সাধারণ ডেলিভারি নিলে ২১ কার্যদিবস সময় লাগে। জরুরি ডেলিভারি নিলে ৭ কার্যদিবস।
তবে কিছু ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে। উৎসবের সময় অফিস বন্ধ থাকে। আবহাওয়া খারাপ হলেও দেরি হয়। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী আগেই আবেদন করুন।
ডেলিভারির পর এসএমএস পাবেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়। অথবা নিজে গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেন। সংগ্রহের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যান।
ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

ই-পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম জানা জরুরি। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রথমে সব তথ্য মিলিয়ে নিন। নাম, জন্ম তারিখ, ছবি সঠিক আছে কিনা দেখুন।
পাসপোর্ট নম্বর এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ চেক করুন। কোনো ভুল থাকলে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। ভুল সংশোধনের জন্য আলাদা ফি দিতে হতে পারে।
চিপ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করুন। এয়ারপোর্টে মেশিনে চেক করিয়ে নিশ্চিত হন। সমস্যা থাকলে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন।
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ নির্ভর করে আপনার বেছে নেওয়া প্যাকেজের ওপর। পাঁচ বছর এবং দশ বছর – এই দুই ধরনের মেয়াদ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষ দশ বছরের পাসপোর্ট নেন।
দশ বছরের পাসপোর্ট নিলে বার বার রিনিউ করতে হয় না। অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। একবার খরচ করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন। অনেক দেশ ছয় মাসের কম মেয়াদ থাকলে ভিসা দেয় না। তাই সময়মতো রিনিউ করুন।
ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণ
ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণ করার সময় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। সব তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী দিন। নাম বানানে কোনো ভুল করবেন না।
ইংরেজি বানানে বিশেষ খেয়াল রাখুন। কারণ পাসপোর্টে ইংরেজি নাম ব্যবহার হয়। জন্ম তারিখ সঠিক দিন। ভুল তারিখ দিলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে।
ঠিকানা স্পষ্ট এবং পূর্ণাঙ্গ লিখুন। ডাকঘর, থানা, জেলার নাম উল্লেখ করুন। মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিক দিন। এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা হবে।
পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা
পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা জানা থাকলে সময় বাঁচে। ঢাকায় মোট পাঁচটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আছে। আগারগাঁও, উত্তরা, গুলশান এলাকায় অফিস রয়েছে।
জেলা পর্যায়েও পাসপোর্ট অফিস আছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুরে আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। নিকটতম অফিসে যোগাযোগ করুন।
অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্দিষ্ট অফিসে যেতে হবে। ভুল অফিসে গেলে সেবা পাবেন না। তাই আগে থেকে ঠিকানা এবং রুট জেনে নিন।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টের সুবিধা অনেক। প্রথমত, এটি আন্তর্জাতিক মানের। বিশ্বের যেকোনো দেশে স্বীকৃত। ইমিগ্রেশনে সময় কম লাগে।
চিপযুক্ত পাসপোর্ট হওয়ায় জাল করা কঠিন। নিরাপত্তা বেশি। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে। ই-গেট ব্যবহার করা যায়।
ডিজিটাল পাসপোর্ট হওয়ায় দ্রুত যাচাই হয়। কাগজের পাসপোর্টের চেয়ে টেকসই। পানি লাগলে নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম সহজ। পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে তা জমা দিতে হবে। নতুন করে আবেদন করতে হবে।
সব প্রক্রিয়া নতুন পাসপোর্টের মতোই। তবে কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন। আগের তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যাচাইয়ের সময় কম লাগে।
ই-পাসপোর্ট পাওয়ার পর পুরাতন পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়। তাতে বাতিল সিল দেওয়া থাকে। স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারেন।
অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন
অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। ঘরে বসে আবেদন করা যায়। কোনো দালালের প্রয়োজন নেই। স্বচ্ছ প্রক্রিয়া।
অনলাইনে আবেদন করলে সময় এবং অর্থ দুটোই বাঁচে। ট্রাকিং সিস্টেম আছে। যেকোনো সময় অগ্রগতি দেখা যায়। এসএমএস আপডেট পাওয়া যায়।
পেমেন্টও অনলাইনে করা যায়। বিকাশ, নগদ, রকেট দিয়ে পেমেন্ট করুন। ব্যাংক কার্ডও ব্যবহার করা যায়। রসিদ সংরক্ষণ করুন।
পাসপোর্ট ফি কত
পাসপোর্ট ফি কত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য ৩,৫০০ টাকা। জরুরি ডেলিভারির জন্য ৫,৫০০ টাকা।
৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য ২,৫০০ টাকা। জরুরি ডেলিভারির জন্য ৪,৫০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ মানুষ ১০ বছরের পাসপোর্ট নেন।
অতিরিক্ত পৃষ্ঠার জন্য আলাদা টাকা। প্রতি ১৬ পৃষ্ঠার জন্য ২০০ টাকা। সর্বোচ্চ ৬৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নেওয়া যায়।
ই-পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক

ই-পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার সুবিধা রয়েছে। www.epassport.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘স্ট্যাটাস চেক’ ক্লিক করুন। রেফারেন্স নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিন।
তাহলে আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা দেখতে পাবেন। কোন পর্যায়ে আছে তা জানা যাবে। কতদিন আরও সময় লাগবে সে তথ্যও পাবেন।
এছাড়া ফোনে কল করেও স্ট্যাটাস জানা যায়। হটলাইন নম্বর ১৬৩। যেকোনো সময় কল করুন। তবে ব্যস্ত থাকতে পারে।
ই-পাসপোর্ট করতে কী কী লাগবে
ই-পাসপোর্ট করতে কী কী লাগবে এই তালিকা জানা জরুরি। প্রথমত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। মূল কপি সাথে নিন।
জন্ম নিবন্ধন সনদ বা সার্টিফিকেট। এসএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেট। যদি বিবাহিত হন তাহলে বিয়ের সার্টিফিকেট।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে লাগতে পারে। নো অবজেকশন সার্টিফিকেট সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য।
পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে না। অফিসে গিয়ে ছবি তোলা হয়। তবে অনলাইন আবেদনের সময় ডিজিটাল ছবি আপলোড করতে হয়।
উপসংহার
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। একবার খরচ করলে দশ বছর ব্যবহার করা যায়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য এটি অত্যাবশ্যক।
সাধারণ ডেলিভারির জন্য ৩,৫০০ টাকা খরচ। জরুরি প্রয়োজনে ৫,৫০০ টাকা দিতে হয়। অনলাইনে আবেদন করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।
আবেদনের পর ধৈর্য রাখুন। সঠিক সময়ে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। পাওয়ার পর সব তথ্য যাচাই করুন। ভুল থাকলে তাড়াতাড়ি সংশোধন করান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
সাধারণ ডেলিভারির জন্য ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে ৩,৫০০ টাকা এবং জরুরি ডেলিভারির জন্য ৫,৫০০ টাকা লাগে।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পেতে কতদিন সময় লাগে?
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট সাধারণ ডেলিভারিতে ২১ কার্যদিবস এবং জরুরি ডেলিভারিতে ৭ কার্যদিবস সময় লাগে।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন করার ওয়েবসাইট কোনটি?
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর জন্য www.epassport.gov.bd এই সাইটে অনলাইন আবেদন করা যায়।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট স্ট্যাটাস কিভাবে চেক করব?
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে রেফারেন্স নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করা যায়।
অতিরিক্ত পৃষ্ঠার জন্য কত টাকা লাগে?
প্রতি ১৬ পৃষ্ঠার জন্য ২০০ টাকা অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এ কি কি সুবিধা আছে?
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের, নিরাপদ, দ্রুত যাচাই, ই-গেট ব্যবহারযোগ্য।
নাবালকদের জন্য কি বিশেষ নিয়ম আছে?
হ্যাঁ, নাবালকদের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি এবং উপস্থিতি প্রয়োজন।
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করব?
প্রথমে পুলিশে জিডি করুন। তারপর জিডি কপিসহ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন। অতিরিক্ত ১০০০ টাকা ফি দিতে হবে।
বিদেশে থাকলে কিভাবে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট রিনিউ করব?
নিকটতম বাংলাদেশি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করুন। সেখানে পাসপোর্ট রিনিউয়ের সুবিধা আছে। তবে সময় বেশি লাগতে পারে।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍