ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন কেনার আগে যা জানা জরুরি

একটি নীল রঙের  ব্র্যান্ডের টপ-লোডিং ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন, পাশে ভাঁজ করা রঙিন তোয়ালে রাখা রয়েছে।

আধুনিক জীবনযাত্রায় ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন একটি অপরিহার্য গৃহস্থালী পণ্য। এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে সহজ করে তোলে। তবে সঠিক পণ্য নির্বাচন করা বেশ জটিল বিষয়। কেননা বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মডেল।

ওয়ালটন বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড। এই কোম্পানি গুণগত মানের পণ্য তৈরি করে। কিন্তু কেনার আগে কিছু বিষয় জানা দরকার। এতে করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আর পরবর্তীতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন এর দাম

বাজারে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন এর দাম বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। ওয়ালটনের মেশিনগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। সাধারণত ১৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মডেল পাবেন।

দাম নির্ধারণে ক্যাপাসিটি একটি প্রধান বিষয়। ছোট পরিবারের জন্য ৬-৭ কেজির মেশিন যথেষ্ট। অন্যদিকে বড় পরিবারের জন্য ৯-১২ কেজির দরকার। উপরন্তু, ফিচারের সংখ্যা বাড়লে দামও বাড়ে।

বাজেট নির্ধারণ করুন আগে। তারপর সেই অনুযায়ী মডেল খুঁজুন। অনেক সময় অফার থাকে। সেগুলো কাজে লাগান। এতে আপনি ভালো দামে ভালো পণ্য পাবেন।

স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং মেশিন

স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং মেশিন আজকালের জনপ্রিয় পছন্দ। এগুলো ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ। শুধু কাপড় ঢুকিয়ে বাটন চাপলেই হয়। বাকি সব কাজ মেশিন নিজেই করে।

ওয়ালটনের অটোমেটিক মেশিনগুলো আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে রয়েছে বিভিন্ন ওয়াশ প্রোগ্রাম। কটন, সিল্ক, ডেলিকেট – প্রতিটির জন্য আলাদা সেটিংস। ফলে কাপড়ের ক্ষতি হয় না।

তবে এই মেশিনগুলো একটু বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে। কিন্তু সময় ও শ্রম বাঁচায় অনেক। কাজের চাপ বেশি থাকলে এগুলো আদর্শ। কেননা এক বার সেট করলে আর কিছু করতে হয় না।

সেমি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন

সেমি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। এগুলো কম দামে পাওয়া যায়। আর বিদ্যুৎ খরচও কম। তবে ব্যবহার করতে একটু কষ্ট হয়।

এই মেশিনে দুটি টাব থাকে। একটিতে ধোয়া হয়, অন্যটিতে পানি ঝরানো হয়। আপনাকে নিজেই কাপড় এক টাব থেকে অন্য টাবে নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া পানিও নিজেকে দিতে হয়।

ওয়ালটনের সেমি অটোমেটিক মেশিনগুলো টেকসই। এগুলো লোডশেডিং এলাকায় বেশি উপযোগী। কারণ কম সময়ে কাজ শেষ হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চমৎকার অপশন।

ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্স

ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগ নানা ধরনের গৃহস্থালী পণ্য তৈরি করে। তাদের ওয়াশিং মেশিনগুলো বিশেষ জনপ্রিয়। কেননা এগুলো দেশীয় চাহিদা মাথায় রেখে ডিজাইন করা।

কোম্পানিটি ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করছে। দীর্ঘ এই অভিজ্ঞতা তাদের পণ্যের মানে প্রতিফলিত হয়। তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলে। ফলে পণ্যের গুণমান নিশ্চিত থাকে।

সার্ভিস সেন্টার রয়েছে সারাদেশে। যেকোনো সমস্যায় সহজেই সেবা পাওয়া যায়। যন্ত্রাংশের দাম তুলনামূলক কম। তাই রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি হয় না। এই সুবিধাগুলোর জন্য গ্রাহকরা ওয়ালটনকে পছন্দ করেন।

কাপড় ধোয়ার মেশিন

কাপড় ধোয়ার মেশিন নির্বাচনে সবার প্রয়োজন আলাদা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কী ধরনের কাপড় বেশি ধোয়া হয় তাও দেখতে হয়।

ওয়ালটনের মেশিনগুলোতে বিভিন্ন ওয়াশিং অপশন আছে। সাধারণ ধোয়া, গভীর পরিষ্কার, দ্রুত ধোয়া – সব ধরনের সুবিধা। কিছু মডেলে গরম পানির ব্যবস্থা থাকে। এটি জেদী দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

ড্রাম টাইপ ও টপ লোড – দুই ধরনের মেশিন পাওয়া যায়। ড্রাম টাইপ কাপড়ের যত্ন বেশি নেয়। কিন্তু টপ লোড ব্যবহার সহজ। আপনার সুবিধা অনুযায়ী বেছে নিন।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন রিভিউ

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন রিভিউ দেখে কিনলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। গ্রাহকদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

ওয়ালটনের মেশিন সম্পর্কে বেশিরভাগ রিভিউ পজিটিভ। ব্যবহারকারীরা এর টেকসই গুণমান নিয়ে সন্তুষ্ট। কম শব্দে কাজ করা আরেকটি প্রশংসিত বিষয়। অনেকে এর সাশ্রয়ী দামের কথাও বলেছেন।

তবে কিছু সমালোচনাও আছে। কোনো কোনো মডেলে অতিরিক্ত ফোম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্পিন ড্রাইং পর্যাপ্ত না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে মোটের ওপর মানুষ সন্তুষ্ট।

ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স

ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের অন্যতম বড় কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। তাদের ওয়াশিং মেশিন বিভাগ বেশ উন্নত। এরা নিরন্তর গবেষণা করে নতুন প্রযুক্তি যোগ করেছে।

কোম্পানির নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি রয়েছে। এতে গুণমান নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। প্রতিটি পণ্য কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। ফলে বাজারে আসার আগেই ত্রুটি সংশোধন হয়।

তারা আফটার সেলস সার্ভিসে গুরুত্ব দেয়। প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান সবসময় প্রস্তুত থাকে। ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে সব সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। এই বিশ্বস্ততার কারণে গ্রাহক আস্থা অটুট থাকে।

কম দামে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন

কম দামে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। ওয়ালটনের এন্ট্রি লেভেল মডেলগুলো বেশ সাশ্রয়ী। এগুলো মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। অতিরিক্ত ফিচার কম থাকলেও প্রয়োজনীয় কাজ ভালো করে।

বাজেট মডেলগুলোতে সাধারণত ম্যানুয়াল কন্ট্রোল থাকে। অটোমেটিক প্রোগ্রাম কম। কিন্তু বেসিক ওয়াশিং ও স্পিনিং ভালো হয়। নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট।

শিক্ষার্থী বা নতুন পরিবারের জন্য এগুলো চমৎকার। একবার অভ্যাস হলে পরে আপগ্রেড করা যায়। তাই কম বাজেটে শুরু করতে দ্বিধা নেই। গুণমান ভালো থাকলে দাম কম হলেও সমস্যা নেই।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের নিয়ম

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের নিয়ম মেনে চললে মেশিনের আয়ু বাড়ে। প্রথমত, পানির মান দেখতে হবে। খুব শক্ত পানি হলে ফিল্টার ব্যবহার করুন। এতে মেশিনের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ সুরক্ষিত থাকে।

কাপড় বাছাই করে দিন। ভারী ও হালকা কাপড় আলাদা করুন। রঙিন ও সাদা কাপড়ও পৃথক রাখুন। পকেট খালি করতে ভুলবেন না। মুদ্রা বা অন্য কিছু থাকলে মেশিন নষ্ট হতে পারে।

ডিটারজেন্টের পরিমাণ সঠিক রাখুন। বেশি সাবান দিলে ফেনা হয়। আর কম দিলে কাপড় পরিষ্কার হয় না। প্রতি কিলো কাপড়ে ১ চা চামচ পাউডার যথেষ্ট।

ব্যবহারের পর ভেতর শুকিয়ে রাখুন। ঢাকনা খোলা রাখুন কিছুক্ষণ। এতে দুর্গন্ধ হয় না। মাসে একবার খালি অবস্থায় হট ওয়াশ চালান। এতে জীবাণু মরে যায়।

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন অফার

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন অফার নিয়মিত আসে। বিশেষ করে উৎসবের সময় বড় ছাড় দেওয়া হয়। ঈদ, পূজা, নববর্ষে সবচেয়ে ভালো ডিল পাওয়া যায়।

অনলাইন ও অফলাইন দোকানে আলাদা অফার থাকে। অনেক সময় বান্ডেল প্যাকেজ দেওয়া হয়। যেমন ফ্রিজ বা টিভির সাথে কম দামে ওয়াশিং মেশিন। এতে সামগ্রিক খরচ কমে যায়।

কিস্তির সুবিধা পাওয়া যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। ব্যাংক কার্ডে ইএমআই সুবিধা থাকে। এতে একসাথে পুরো টাকা দিতে হয় না। মাসিক কিস্তিতে মেশিন কিনতে পারেন।

ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থাকলে তাদের কোড ইউজ করুন। এতে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট পাবেন। সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করলে এরকম অফারের খবর পাবেন।

উপসংহার

আধুনিক গৃহস্থালীতে ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন একটি নির্ভরযোগ্য সাথী। এটি শুধু কাপড় পরিষ্কার করে না, সময়ও বাঁচায় প্রচুর। তবে সঠিক মডেল নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার পরিবারের আকার বিবেচনা করুন। ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করুন সেই অনুযায়ী। বাজেট ঠিক করুন আগেই। তারপর ফিচার দেখুন। সব কিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিন।

ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলুন। রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করবেন না। এতে মেশিনের আয়ু বাড়বে। আর আপনিও পাবেন দীর্ঘমেয়াদী সেবা।

ওয়ালটনের বিশ্বস্ততা দেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত। তাদের পণ্য নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। কিন্তু কেনার আগে গবেষণা করুন। বিভিন্ন মডেল তুলনা করুন। এতে সঠিক পছন্দ করতে পারবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন এর ওয়ারেন্টি কতদিন?

ওয়ালটনের বেশিরভাগ ওয়াশিং মেশিনে ২ বছর ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। কমপ্রেসর ও মোটরে ৫ বছর ওয়ারেন্টি থাকে। তবে মডেল ভেদে এটি আলাদা হতে পারে।

কোন ক্যাপাসিটির মেশিন কিনব?

২-৩ সদস্যের পরিবারে ৬-৭ কেজি যথেষ্ট। ৪-৫ সদস্যে ৮-৯ কেজি। বড় পরিবারে ১০-১২ কেজি নিন। বেশি ক্যাপাসিটি নিলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে।

সেমি অটোমেটিক না ফুল অটোমেটিক কোনটি ভালো?

ফুল অটোমেটিক সুবিধাজনক কিন্তু দামী। সেমি অটোমেটিক সাশ্রয়ী কিন্তু কিছুটা কষ্টসাধ্য। আপনার বাজেট ও সময় অনুযায়ী বেছে নিন।

কতদিন পর পর সার্ভিসিং করাতে হয়?

বছরে অন্তত একবার পেশাদার সার্ভিসিং করান। নিয়মিত ব্যবহারে ৬ মাস পর পর করলে ভালো। নিজেও মাসিক পরিষ্কার করুন।

ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েশন থেকে কীভাবে রক্ষা করব?

ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন। ওয়ালটনের নিজস্ব স্ট্যাবিলাইজারও পাওয়া যায়। এতে মেশিনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

শীতে গরম পানি দিতে পারি?

মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হয়। কিছু মেশিনে হট ওয়াটার ইনলেট আছে। ম্যানুয়াল দেখুন। বেশি গরম পানি দিলে প্লাস্টিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোথায় সবচেয়ে ভালো দাম পাব?

অথরাইজড ডিলারশিপে যান। অনলাইন ও অফলাইন দাম তুলনা করুন। উৎসবের সময় বেশি ছাড় থাকে। ব্র্যান্ড শোরুমে গেলে অরিজিনাল গ্যারান্টি পাবেন।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top