
ঘরের ভেতর সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে আছে দেয়াল। কিন্তু অনেকেই জানেন না দেয়ালের সাজসজ্জা কীভাবে করবেন। আজকে আমরা দেখব কীভাবে সহজ উপায়ে ঘরের দেয়াল সুন্দর করা যায়। তাই এই লেখায় আমরা কথা বলব নানা রকম পদ্ধতি নিয়ে।
দেয়ালের সাজসজ্জা সুন্দর করতে বেশি টাকা খরচ করার দরকার নেই। সামান্য কিছু উপকরণ আর সৃজনশীলতা দিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় চমৎকার সব ডিজাইন। বাজারে অনেক দামী আইটেম পাওয়া যায়। কিন্তু ঘরোয়া উপকরণ দিয়েও তৈরি করা যায় দারুণ সব সাজসজ্জা।
ঘরের দেয়াল সাজানোর আইডিয়া
ঘরের দেয়ালের সাজসজ্জা করার অনেক উপায় রয়েছে। প্রথমেই ভাবতে হবে কোন ধরনের স্টাইল পছন্দ। মডার্ন, ট্র্যাডিশনাল বা মিনিমাল – যেকোনো স্টাইলেই সাজানো যায়। তারপর বেছে নিতে হবে রঙের কম্বিনেশন।
দেয়ালের সাজসজ্জা করার জন্য প্রথমে পরিকল্পনা করুন। কোথায় কী লাগাবেন সেটা আগেই ঠিক করুন। এতে পরে আর সমস্যা হবে না। দেয়ালের আকার বুঝে সাজসজ্জার আইটেম বেছে নিন। ছোট দেয়ালে বড় কিছু লাগালে দেখতে খারাপ লাগে। বড় দেয়ালে ছোট কিছু লাগালে হারিয়ে যায়।
সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ব্যালেন্স রাখা জরুরি। একপাশে অনেক কিছু আর অন্যপাশে কিছুই না – এমন হওয়া উচিত নয়। দেয়ালের মাঝখানে ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করুন। এরপর চারপাশে ছোট আইটেম দিয়ে সাজান।
দেয়ালের সাজসজ্জা করার পদ্ধতি
দেয়ালের সাজসজ্জা করার কয়েকটি মূল পদ্ধতি আছে। প্রথমত, সিমেট্রিক্যাল পদ্ধতি। এতে দেয়ালের দুপাশে একই রকম সাজসজ্জা করা হয়। দ্বিতীয়ত, অ্যাসিমেট্রিক্যাল পদ্ধতি। এতে ভিন্ন ভিন্ন আইটেম দিয়ে ব্যালেন্স তৈরি করা হয়।
তৃতীয় পদ্ধতি হলো গ্রুপিং। একসাথে কয়েকটি আইটেম গ্রুপ করে লাগানো হয়। চতুর্থ পদ্ধতি হলো লেয়ারিং। বিভিন্ন সাইজের আইটেম একসাথে লাগিয়ে ডেপথ তৈরি করা হয়। পঞ্চম পদ্ধতি হলো রিপিটিশন। একই ধরনের আইটেম বারবার ব্যবহার করে প্যাটার্ন তৈরি করা হয়।
প্রতিটি পদ্ধতিরই আলাদা সৌন্দর্য আছে। কোনটা বেছে নেবেন সেটা নির্ভর করে আপনার পছন্দ আর ঘরের স্টাইলের উপর। তবে একসাথে অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না। এতে দেখতে জটিল লাগে।
পেইন্টিং দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা
পেইন্টিং দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। বাজারে নানা রকম পেইন্টিং পাওয়া যায়। তেল রঙের পেইন্টিং, জল রঙের পেইন্টিং, অ্যাক্রিলিক পেইন্টিং – সব ধরনেরই আছে। নিজের পছন্দ মতো বেছে নিন।
পেইন্টিং লাগানোর আগে দেয়ালের রঙের সাথে মিল দেখুন। কনট্রাস্ট রঙের পেইন্টিং বেশি আকর্ষণীয় লাগে। ছোট ঘরে বড় পেইন্টিং লাগাবেন না। আবার বড় ঘরে অনেক ছোট পেইন্টিং লাগালেও দেখতে ভালো লাগে না।
পেইন্টিং লাগানোর উচ্চতা গুরুত্বপূর্ণ। চোখের সমতলে লাগালে সবচেয়ে ভালো দেখায়। একসাথে কয়েকটি পেইন্টিং লাগালে সেগুলোর মধ্যে সমান দূরত্ব রাখুন। পেইন্টিংয়ের নিচে আলো লাগিয়ে আরো আকর্ষণীয় করা যায়।
অনেকে বাড়িতেই পেইন্টিং করেন। এটাও দুর্দান্ত আইডিয়া। তবে শুরুতে সহজ ডিজাইন দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে কঠিন ডিজাইনে যান।
ফটো ফ্রেম দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা
ফটো ফ্রেম দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা করা খুবই সহজ। পারিবারিক ছবি, প্রিয় মুহূর্তের ছবি, অথবা সুন্দর ল্যান্ডস্কেপের ছবি দিয়ে সাজাতে পারেন। ফ্রেমের ডিজাইনও গুরুত্বপূর্ণ। কাঠের ফ্রেম ট্র্যাডিশনাল লুক দেয়। মেটালের ফ্রেম মডার্ন লুক দেয়।
ফটো ফ্রেমের সাইজ ভিন্ন ভিন্ন হলে দেখতে আরো সুন্দর লাগে। তবে একটা প্যাটার্ন মেনে চলুন। র্যান্ডমলি লাগিয়ে দিলে এলোমেলো দেখায়। প্রথমে দেয়ালে পেনসিল দিয়ে মার্ক করে নিন। তারপর লাগান।
বাচ্চাদের আঁকা ছবিও ফ্রেম করে লাগাতে পারেন। এতে ঘরে একটা পারিবারিক আবহ তৈরি হয়। ছবি মাঝে মাঝে বদলে দিলে নতুনত্ব থাকে।
দেয়ালের জন্য আর্ট ওয়ার্ক
আর্ট ওয়ার্ক দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা করলে ঘরে একটা ক্লাসি লুক আসে। হাতে তৈরি আর্ট ওয়ার্ক অনেক বেশি আকর্ষণীয়। কাগজ, কাপড়, কাঠ – যেকোনো উপকরণ দিয়েই আর্ট ওয়ার্ক তৈরি করা যায়। অরিগামি, কুইলিং, পেইন্টিং – সব ধরনের আর্ট ওয়ার্কই ব্যবহার করা যায়।
আর্ট ওয়ার্ক নিজেই তৈরি করা সবচেয়ে ভালো। এতে খরচও কম আর নিজের পছন্দ মতো হয়। ইন্টারনেটে অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। সেগুলো দেখে তৈরি করতে পারেন। প্রথমে সহজ প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করুন।
থ্রিডি আর্ট ওয়ার্ক খুব ট্রেন্ডি। কাগজ দিয়ে ফুল, প্রজাপতি, পাখি তৈরি করে দেয়ালে লাগান। দেখতে খুব সুন্দর লাগে। বিভিন্ন রঙের কাগজ ব্যবহার করে কালারফুল করতে পারেন।
মিরর ওয়ার্কও দারুণ লাগে। ছোট ছোট আয়নার টুকরো দিয়ে প্যাটার্ন তৈরি করুন। আলো পড়লে চকচক করে আর ঘর উজ্জ্বল লাগে।
হোম ডেকর ওয়াল হ্যাঙ্গিং
ওয়াল হ্যাঙ্গিং দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা খুবই ইফেক্টিভ। ম্যাক্রামে ওয়াল হ্যাঙ্গিং এখন খুব জনপ্রিয়। দড়ি দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এটা হাতেই তৈরি করা যায়। ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন।
তাস, কাপড়, জুট – নানা উপকরণ দিয়ে ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরি করা যায়। পুরনো শাড়ির বর্ডার দিয়েও সুন্দর হ্যাঙ্গিং তৈরি হয়। রিসাইক্লিং করে নতুন কিছু তৈরি করার মজাই আলাদা। খরচও কম আর পরিবেশের জন্যও ভালো।
বিভিন্ন সাইজের হ্যাঙ্গিং একসাথে লাগালে দেখতে সুন্দর লাগে। তবে বেশি ভিড় করবেন না। ২-৩টা হ্যাঙ্গিং যথেষ্ট একটা দেয়ালের জন্য। হ্যাঙ্গিংয়ের সাথে দেয়ালের রঙের ম্যাচ দেখুন।
বাঁশ বা কাঠের স্টিক দিয়েও হ্যাঙ্গিং তৈরি করা যায়। এতে ন্যাচারাল লুক পাওয়া যায়। গাছের শুকনো ডাল ব্যবহার করেও ইউনিক ডিজাইন তৈরি করা যায়।
সস্তায় দেয়ালের সাজসজ্জা করার উপায়
দেয়ালের সাজসজ্জা করতে অনেক টাকা খরচ করার দরকার নেই। বাড়িতে থাকা পুরনো জিনিস দিয়েই সুন্দর সাজসজ্জা করা যায়। পুরনো ম্যাগাজিনের পাতা দিয়ে কোলাজ তৈরি করুন। রঙিন কাগজ দিয়ে ফুল বানিয়ে দেয়ালে লাগান।
খবরের কাগজ দিয়েও চমৎকার আর্ট ওয়ার্ক তৈরি হয়। কালো-সাদা ছাপার একটা ভিন্ন সৌন্দর্য আছে। পুরনো ক্যালেন্ডারের সুন্দর ছবিগুলো কেটে ফ্রেম করে লাগান। CD বা DVD দিয়েও চকচকে ডেকোরেশন তৈরি করা যায়।
প্লাস্টিকের বোতল, কাপ, প্লেট – এসব দিয়ে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন তৈরি করুন। রং করে দিলে আরো সুন্দর লাগে। পুরনো কাপড়ের টুকরো দিয়ে প্যাচওয়ার্ক তৈরি করা যায়। এতে দেশি স্টাইলের একটা লুক পাওয়া যায়।
বীজ, ডাল, চাল দিয়েও ইন্টারেস্টিং ডিজাইন তৈরি করা যায়। কার্ডবোর্ডে আঠা লাগিয়ে এগুলো সাঁটিয়ে দিন। তারপর স্প্রে পেইন্ট করুন। দেখতে খুব এক্সপেনসিভ লাগবে।
ঘরোয়া উপকরণে দেয়ালের সাজসজ্জা

বাড়িতেই পাওয়া যায় এমন উপকরণ দিয়ে দারুণ সব ডেকোরেশন তৈরি করা যায়। পুরনো চামচ, কাঁটাচামচ দিয়ে ইউনিক ডিজাইন তৈরি করুন। রং করে দিলে নতুন লাগবে। কফির কাপ, চায়ের কাপ দেয়ালে ঝুলিয়েও সাজানো যায়।
পুরনো বই দিয়ে ফুল তৈরি করা যায়। বইয়ের পাতা ভাঁজ করে করে ফুলের আকার দিন। তারপর একসাথে জড়ো করে বড় ফুল তৈরি করুন। এতে একটা ভিন্টেজ লুক পাওয়া যায়। লেইস, ফিতা দিয়েও সুন্দর ডেকোরেশন হয়।
ঝিনুকের খোলস, নুড়ি পাথর এসব দিয়ে ন্যাচারাল ডেকোরেশন তৈরি করুন। সমুদ্র সৈকতের মতো ফিল পাবেন। শুকনো ফুল, পাতা দিয়েও বোটানিক্যাল আর্ট তৈরি করা যায়। প্রেস করে শুকিয়ে ফ্রেম করে লাগান।
স্পুল, বোতাম, জিপ – এসব সেলাই এর মালামাল দিয়েও ক্রিয়েটিভ ডিজাইন হয়। বিভিন্ন রঙের বোতাম দিয়ে ট্রি অব বাটন তৈরি করুন। দেখতে খুব কিউট লাগে।
দেয়াল পেইন্ট ডিজাইন
শুধু সাদা রঙ না করে দেয়ালে বিভিন্ন ডিজাইন করা যায়। স্ট্রাইপ, পোলকা ডট, জিওমেট্রিক প্যাটার্ন – এসব খুব ট্রেন্ডি। টেম্প্লেট ব্যবহার করে সহজেই এসব ডিজাইন করা যায়। স্পঞ্জ দিয়ে টেক্সচার তৈরি করাও জনপ্রিয়।
অম্ব্রে ইফেক্ট তৈরি করা যায় একই রঙের ভিন্ন শেড দিয়ে। উপর থেকে নিচে হালকা থেকে গাঢ় করে রং করুন। এতে একটা গ্র্যাডিয়েন্ট ইফেক্ট পাওয়া যায়। দেখতে খুব মডার্ন লাগে।
ওয়াল স্টেনসিল ব্যবহার করে নানা রকম ডিজাইন তৈরি করা যায়। ফুল, পাতা, পাখি – যেকোনো শেপের স্টেনসিল পাওয়া যায়। নিজেও কার্ডবোর্ড দিয়ে স্টেনসিল তৈরি করতে পারেন। একই স্টেনসিল বারবার ব্যবহার করে প্যাটার্ন তৈরি করুন।
চক পেইন্ট ব্যবহার করে ব্ল্যাকবোর্ড ওয়াল তৈরি করা যায়। এতে চক দিয়ে লিখা যায় আর মুছেও ফেলা যায়। বাচ্চাদের খুব পছন্দ। কিচেনে রেসিপি লিখে রাখা যায়।
হাতের তৈরি দেয়ালের সাজসজ্জা
হাতে তৈরি জিনিস দিয়ে দেয়ালের সাজসজ্জা করলে একটা পার্সোনাল টাচ পাওয়া যায়। কুইলিং আর্ট দিয়ে সুন্দর ডিজাইন তৈরি করা যায়। কাগজের স্ট্রিপ রোল করে করে বিভিন্ন শেপ তৈরি করুন। তারপর একসাথে জুড়ে দিয়ে বড় ডিজাইন বানান।
ক্রোশেট বা নিটিং করে ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরি করা যায়। উলের সুতা দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি করুন। শীতকালে এসব দেখতে খুব কোজি লাগে। হ্যান্ড এমব্রয়ডারি দিয়েও সুন্দর আর্ট পিস তৈরি হয়।
ড্রিমক্যাচার তৈরি করে দেয়ালে ঝুলান। এতে বোহেমিয়ান স্টাইল পাওয়া যায়। বাঁশের চাকতি, সুতা, পালক – এসব দিয়ে তৈরি করা যায়। বিভিন্ন সাইজের ড্রিমক্যাচার একসাথে লাগালে দেখতে সুন্দর লাগে।
পপসিকল স্টিক দিয়ে মিনি ইজেল তৈরি করুন। তারপর ছোট ক্যানভাসে পেইন্টিং করে সেখানে রাখুন। এতে একটা আর্ট গ্যালারির ফিল পাওয়া যায়। খরচ কম কিন্তু দেখতে খুব এক্সপেনসিভ লাগে।
দেয়ালের কর্নার সাজানো
দেয়ালের কোনা অনেক সময় খালি থেকে যায়। কিন্তু এই কর্নারগুলোও সুন্দর করে সাজানো যায়। কর্নার শেলফ লাগিয়ে ছোট ছোট শোপিস রাখুন। প্ল্যান্ট রাখলেও দেখতে ফ্রেশ লাগে। একাধিক শেলফ লাগিয়ে স্টেপ তৈরি করুন।
কর্নারে লম্বা আয়না লাগালে ঘর বড় দেখায়। আলোও বেশি পাওয়া যায়। কর্নার ল্যাম্প ব্যবহার করলে সেই জায়গাটা হাইলাইট হয়। ফ্লোর ল্যাম্প বা ওয়াল ল্যাম্প – দুটোই ব্যবহার করা যায়।
কর্নারে লম্বা ফুলদানি রেখে কৃত্রিম ফুল বা ডাল লাগান। এতে একটা এলিগ্যান্ট লুক পাওয়া যায়। বিভিন্ন উচ্চতার ফুলদানি রাখলে লেয়ারিং ইফেক্ট হয়। মেটালিক ফিনিশের ফুলদানি মডার্ন লুক দেয়।
কর্নারে ছোট চেয়ার রেখে রিডিং কর্নার তৈরি করা যায়। পাশে ছোট টেবিল আর ল্যাম্প রাখুন। দেয়ালে বইয়ের র্যাক লাগিয়ে দিলে পারফেক্ট রিডিং স্পেস তৈরি হয়।
বাচ্চার রুমের দেয়ালের সাজসজ্জা

বাচ্চাদের রুমের দেয়াল সাজানোর সময় রঙিন আর মজার জিনিস বেছে নিন। কার্টুন ক্যারেক্টার, প্রাণীর ছবি, রঙধনু – এসব বাচ্চারা পছন্দ করে। ওয়াল স্টিকার ব্যবহার করলে সহজেই সাজানো যায়। দরকার হলে খুলেও ফেলা যায়।
বাচ্চাদের নিজের আঁকা ছবি ফ্রেম করে দেয়ালে লাগান। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একটা গ্যালারি ওয়াল তৈরি করুন শুধু বাচ্চার আর্ট ওয়ার্ক দিয়ে। হাতের ছাপ, পায়ের ছাপ দিয়েও মজার ডিজাইন তৈরি করা যায়।
গ্রোথ চার্ট দেয়ালে এঁকে দিন। বাচ্চার লম্বা মাপার সাথে সাথে এটা ডেকোরেশনের কাজও করবে। বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে মজার করে তৈরি করুন। প্রাণীর আকারে গ্রোথ চার্ট তৈরি করলে বাচ্চারা খুশি হয়।
বাচ্চার রুমে ব্ল্যাকবোর্ড পেইন্ট করে চক দেয়ার ব্যবস্থা রাখুন। তারা নিজেরাই আঁকাআঁকি করতে পারবে। ম্যাগনেট বোর্ড লাগিয়ে তাদের ভালো কাজের জন্য স্টার লাগানোর ব্যবস্থা করুন।
বসার ঘরের দেয়ালের সাজসজ্জা
বসার ঘরের দেয়ালের সাজসজ্জা করার সময় এলিগ্যান্ট আর সোফিস্টিকেটেড জিনিস বেছে নিন। এই ঘরে অতিথিরা আসেন। তাই ইমপ্রেশন ভালো রাখতে হবে। বড় সাইজের আর্ট পিস বা পেইন্টিং ব্যবহার করুন। ফ্যামিলি ফটো গ্যালারি তৈরি করা যায়।
সোফার পেছনের দেয়ালে ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করুন। একটা বড় পেইন্টিং বা আয়না লাগান। চারপাশে ছোট ছোট আইটেম দিয়ে সাজান। ওয়াল শেলফে বই, শোপিস, প্ল্যান্ট রাখুন। কিন্তু বেশি ভিড় করবেন না।
নিউট্রাল কালারের সাজসজ্জা বেছে নিন। বেইজ, ক্রিম, গ্রে, হোয়াইট – এসব রঙ সেফ। তবে একটু কনট্রাস্ট যোগ করতে ব্রাইট কালারের অ্যাকসেন্ট পিস ব্যবহার করুন। মেটালিক ফিনিশের আইটেম লাক্সারিয়াস লুক দেয়।
টিভির চারপাশে দেয়াল সাজানোর সময় সাবধান থাকুন। বেশি ডিস্ট্র্যাকটিং কিছু লাগাবেন না। সিম্পল আর ক্লিন লুক রাখুন। টিভি ইউনিটের উপরে একটা পেইন্টিং বা আয়না লাগাতে পারেন।
দেয়াল ঘড়ি দিয়ে ঘর সাজানো
দেয়াল ঘড়ি শুধু সময় দেখার জন্যই নয়। এটা দারুণ ডেকোরেশন আইটেমও। বিভিন্ন ডিজাইনের ঘড়ি পাওয়া যায়। মডার্ন, ভিন্টেজ, মিনিমাল – যেকোনো স্টাইলের ঘড়ি বেছে নিতে পারেন। ঘড়ির ডিজাইন দেখে মনে হবে না এটা ঘড়ি।
DIY ওয়াল ক্লক তৈরি করা যায়। CD, ভিনাইল রেকর্ড, কাঠের প্লেট – এসব দিয়ে ইউনিক ঘড়ি তৈরি করুন। ক্লক মেকানিজম বাজারে পাওয়া যায়। লাগিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। নিজের পছন্দমতো ডিজাইন করার মজাই আলাদা।
একাধিক ছোট ঘড়ি দিয়েও ইন্টারেস্টিং ডিসপ্লে তৈরি করা যায়। বিভিন্ন শহরের সময় দেখিয়ে ওয়ার্ল্ড ক্লক তৈরি করুন। অফিসে বা স্টাডি রুমে লাগালে খুব প্রফেশনাল লাগে। পেন্ডুলাম ক্লক ট্র্যাডিশনাল লুক দেয়।
ঘড়ির সাইজ ঘরের সাইজ অনুযায়ী বেছে নিন। বড় ঘরে ছোট ঘড়ি হারিয়ে যায়। আবার ছোট ঘরে বড় ঘড়ি ভারী লাগে। ঘড়ির রঙ দেয়ালের রঙের সাথে কনট্রাস্ট হলে বেশি নজর কাড়ে।
দেয়ালে শেলফ লাগিয়ে সাজানো
ওয়াল শেলফ দিয়ে দেয়াল সাজানো খুবই প্র্যাকটিক্যাল। সাজসজ্জার সাথে সাথে স্টোরেজের কাজও হয়। ফ্লোটিং শেলফ দেখতে মডার্ন লাগে। মনে হয় দেয়ালের সাথে ভেসে আছে। বিভিন্ন সাইজের শেলফ একসাথে লাগালে লেয়ারিং ইফেক্ট পাওয়া যায়।
কর্নার শেলফ ব্যবহার করে দেয়ালের কোনা কাজে লাগান। গোল শেলফ, স্কয়ার শেলফ, হেক্সাগন শেলফ – নানা শেপের শেলফ পাওয়া যায়। জিওমেট্রিক শেপের শেলফ মডার্ন লুক দেয়। রোপ শেলফ বোহেমিয়ান স্টাইলের জন্য পারফেক্ট।
শেলফে কী রাখবেন সেটাও ভাবতে হবে। বই, শোপিস, প্ল্যান্ট, পিকচার ফ্রেম – সব মিক্স করে রাখুন। তবে এলোমেলো করে রাখবেন না। কিছুটা অর্গানাইজড রাখুন। হাইট ভ্যারিয়েশন রাখলে দেখতে ভালো লাগে।
লাইব্রেরি ওয়াল তৈরি করতে পারেন পুরো দেয়াল জুড়ে শেলফ লাগিয়ে। বইপ্রেমীদের জন্য এটা স্বর্গ। শুধু বই না রেখে মাঝে মাঝে ডেকোরেশন আইটেম রাখুন। এতে মনোটনাস লাগবে না।
উপসংহার
দেয়ালের সাজসজ্জা করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। একটু সৃজনশীলতা আর সময় দিলেই ঘরের চেহারা পাল্টে দেয়া যায়। বেশি টাকা খরচ করার দরকার নেই। বাড়িতে থাকা পুরনো জিনিস দিয়েই দারুণ সব সাজসজ্জা তৈরি করা যায়।
মনে রাখবেন, দেয়ালের সাজসজ্জা আপনার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজান। অন্যদের দেখে হুবহু কপি করার দরকার নেই। নিজস্ব স্টাইল তৈরি করুন। ধীরে ধীরে এক্সপেরিমেন্ট করুন। ভুল হলে শুধরে নেবেন।
প্রতিটি রুমের দেয়াল আলাদা আলাদা স্টাইলে সাজাতে পারেন। বেডরুমে শান্ত রঙ, বসার ঘরে এলিগ্যান্ট স্টাইল, বাচ্চার রুমে রঙিন সাজসজ্জা – এভাবে ভাগ করে নিন। সময়ের সাথে সাথে সাজসজ্জা বদলাতে থাকুন। এতে নতুনত্ব থাকবে।
আশা করি এই আইডিয়াগুলো আপনার কাজে লাগবে। আজই শুরু করুন দেয়ালের সাজসজ্জা। দেখবেন ঘরের পুরো মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)
দেয়ালের সাজসজ্জা এর জন্য কোন রঙ সবচেয়ে ভালো?
এটা নির্ভর করে আপনার পছন্দ আর ঘরের স্টাইলের উপর। তবে নিউট্রাল কালার সবসময় সেফ। হোয়াইট, বেইজ, গ্রে এসব রঙের সাথে যেকোনো সাজসজ্জা মানায়। ভাইব্র্যান্ট কালার ব্যবহার করতে চাইলে অ্যাকসেন্ট হিসেবে ব্যবহার করুন।
কত টাকা খরচ হতে পারে দেয়াল সাজাতে?
এটা পুরোপুরি আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকাও খরচ হতে পারে। বাজেট কম থাকলে DIY প্রজেক্ট করুন। ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করলে খরচ অনেক কম হয়।
ভাড়া বাড়িতে দেয়ালের সাজসজ্জা করা যায়?
হ্যাঁ, অবশ্যই যায়। তবে পারমানেন্ট কিছু করবেন না। ওয়াল স্টিকার, রিমুভেবল ওয়াল পেপার, ফ্রেম হ্যাঙ্গিং – এসব ব্যবহার করুন। যেগুলো সহজেই খুলে ফেলা যায়। নেইলের পরিবর্তে অ্যাডহেসিভ হুক ব্যবহার করুন।
কোন ধরনের লাইটিং ব্যবহার করব?
সাজসজ্জার সাথে লাইটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পট লাইট দিয়ে আর্ট পিস হাইলাইট করুন। LED স্ট্রিপ লাইট দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড ইলুমিনেশন তৈরি করুন। ওয়াল স্কনস ব্যবহার করলে অ্যাম্বিয়েন্ট লাইটিং পাওয়া যায়।
বাচ্চা থাকলে কোন বিষয়ে সাবধান থাকব?
বাচ্চা থাকলে সেইফটি প্রথম অগ্রাধিকার। ভারী জিনিস উঁচুতে লাগাবেন না। ধারালো কোনা যুক্ত জিনিস এড়িয়ে চলুন। কাঁচের ফ্রেমের পরিবর্তে প্লাস্টিক বা কাঠের ফ্রেম ব্যবহার করুন। ছোট পার্টস যা গিলে ফেলার ঝুঁকি আছে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
কোন সাইজের আর্ট পিস বেছে নেব?
দেয়ালের সাইজ অনুযায়ী আর্ট পিস বেছে নিন। বড় দেয়ালে ছোট পিস হারিয়ে যায়। আবার ছোট দেয়ালে বড় পিস ভারী লাগে। সোফার উপরে লাগানোর নিয়ম হলো সোফার ২/৩ ভাগ চওড়া হতে হবে।
কত উচ্চতায় জিনিস ঝুলাব?
স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম হলো মেঝে থেকে ৫৭-৬০ ইঞ্চি উচ্চতায় আর্ট পিসের সেন্টার রাখা। তবে ফার্নিচারের উপরে লাগালে ফার্নিচার থেকে ৬-৮ ইঞ্চি উপরে রাখুন। এতে ভারসাম্য থাকে।
কতদিন পর পর দেয়ালের সাজসজ্জা বদলাব?
এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর। তবে সিজন অনুযায়ী কিছু কিছু বদলানো যায়। গ্রীষ্মে হালকা রঙ, শীতে গরম রঙ ব্যবহার করুন। ফেস্টিভ সিজনে থিম অনুযায়ী সাজাতে পারেন। মূল সাজসজ্জা ১-২ বছর রাখতে পারেন।
ছোট ঘরে কীভাবে দেয়ালের সাজসজ্জা করবো?
ছোট ঘরে হালকা রঙ ব্যবহার করুন। আয়না লাগালে ঘর বড় দেখায়। ভার্টিক্যাল লাইন তৈরি করুন উপরের দিকে চোখ নিয়ে যাওয়ার জন্য। বেশি জিনিস লাগাবেন না। মিনিমাল রাখুন।
কোন উপকরণ দিয়ে শুরু করব?
প্রথমে সহজ উপকরণ দিয়ে শুরু করুন। কাগজ, কাঁচি, আঠা, রঙ – এসব দিয়েই অনেক কিছু তৈরি করা যায়। ধীরে ধীরে অন্য উপকরণ সংগ্রহ করুন। অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে কঠিন প্রজেক্ট করুন।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍