ওমরাহ করার নিয়ম ধাপে ধাপে গাইড – সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

ওমরাহ করার নিয়ম জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পবিত্র ইবাদত আল্লাহর নিকট অনেক সওয়াব ও মর্যাদার বিষয়। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ করা পর্যন্ত সময়ের মাঝে যেসব পাপ হয়, সেগুলোর কাফফারা হয়ে যায়।” (বুখারী ও মুসলিম)

আজকে আমরা ওমরাহ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। প্রথমবার ওমরাহ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য এই গাইড বিশেষভাবে সহায়ক হবে। তাহলে শুরু করা যাক।

ওমরাহ করার ধাপ

ওমরাহ করার ধাপ মূলত চারটি মূল কাজ নিয়ে গঠিত। প্রথমে ইহরাম বাঁধা, এরপর তাওয়াফ করা, সাঈ সম্পন্ন করা এবং মাথার চুল কাটা বা ছোট করা।

ইহরাম বাঁধার পর হাজী সাহেব পবিত্র কাবা শরীফের দিকে রওনা হন। তখন তার অন্তরে থাকে আধ্যাত্মিক এক অনুভূতি। বায়তুল্লাহর দর্শন পাওয়ার মুহূর্তে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রতিটি ধাপেই নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। সেগুলো সঠিকভাবে পালন করা জরুরি। অন্যথায় ওমরাহ পূর্ণ হবে না।

ওমরাহ পালন পদ্ধতি

ওমরাহ পালন পদ্ধতি ও ধাপে ধাপে নির্দেশিকা

ওমরাহ পালন পদ্ধতি শুরু হয় নিয়ত করার মাধ্যমে। মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা উমরাতান” বলে নিয়ত করতে হয়। এরপর তালবিয়া পাঠ শুরু করুন।

মক্কায় পৌঁছানোর পর প্রথমে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করুন। ডান পা দিয়ে ভিতরে ঢুকুন এবং দরুদ শরীফ পাঠ করুন। কাবা শরীফ দেখার সাথে সাথে দোয়া করার সুযোগ রয়েছে।

তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে সাতবার প্রদক্ষিণ করুন। প্রতিটি চক্করে বিশেষ দোয়া পাঠের নিয়ম আছে। এরপর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন।

ওমরাহর নিয়ম ও শর্ত

ওমরাহর নিয়ম ও শর্ত মেনে চলা অপরিহার্য। মুসলমান, বালেগ, সুস্থ মস্তিষ্ক এবং স্বাধীন ব্যক্তি ওমরাহ করতে পারেন। নারীদের ক্ষেত্রে মাহরাম সাথে থাকা শর্ত।

আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে। পরিবারের ভরণপোষণের টাকা রেখে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে তবেই ওমরাহ করা উচিত। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির আগে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি।

শরীরিক সুস্থতাও প্রয়োজন। অসুস্থ অবস্থায় ওমরাহ করা কঠিন। পথের নিরাপত্তা এবং যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে।

ওমরাহের প্রস্তুতি

ওমরাহের প্রস্তুতি নিতে কয়েক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন। প্রথমে ভিসার জন্য আবেদন করুন। পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস বাকি থাকতে হবে।

টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। করোনার টিকা, মেনিনজাইটিসের টিকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় টিকা নিন। স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন।

আগে থেকেই ওমরাহর মাসাইল শিখে নিন। কোরআন ও হাদীসের বই সাথে রাখুন। দোয়া ও তাসবীহ মুখস্থ করুন। শারীরিক ফিটনেস বাড়ান।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ বা ওমরাহ করে, তার জন্য কোনো পাপ নেই।” (সূরা বাকারা: ১৫৮)

ওমরাহের সময় করণীয়

ওমরাহের সময় করণীয় কাজগুলো সঠিকভাবে পালন করুন। ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকুন। অশ্লীল কথা ও কাজ পরিহার করুন। রাগ-রাগাযেজ নিয়ন্ত্রণ করুন।

তাওয়াফের সময় ভিড়ের কারণে ধৈর্য হারাবেন না। অন্যদের সাথে ধাক্কাধাক্কি এড়িয়ে চলুন। বিনয় ও নম্রতার সাথে তাওয়াফ সম্পন্ন করুন।

সাঈর সময় সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত হেঁটে যান। নির্ধারিত স্থানে দৌড়ান। প্রতিটি পাহাড়ে উঠে দোয়া করুন। আল্লাহর রহমত কামনা করুন।

নামাজের সময় হলে জামাতে নামাজ আদায় করুন। হারাম শরীফে নামাজের বিশেষ সওয়াব রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমার এই মসজিদে এক রাকাত নামাজ অন্য মসজিদের হাজার রাকাত নামাজের চেয়ে উত্তম। আর মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ আমার মসজিদের একশত হাজার রাকাত নামাজের চেয়ে উত্তম।” (ইবনে মাজাহ)

ওমরাহর জন্য দরকারি জিনিসপত্র

ওমরাহর জন্য দরকারি জিনিসপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত করুন। ইহরামের কাপড় দুই পিস সেলাইবিহীন সাদা কাপড়। তোয়ালে, সাবান, শ্যাম্পু নিয়ে যান। সুগন্ধিবিহীন সাবান ব্যবহার করুন।

জুতা হতে হবে খোলা। মোজা বা মাথার টুপি পরা যাবে না। মহিলারা সাধারণ পোশাক পরবেন কিন্তু মুখ ও হাত খোলা রাখবেন। গ্লাভস বা নেকাব পরা নিষেধ।

প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সাথে রাখুন। পানির বোতল এবং ছাতা নিন। রোদ ও গরমের জন্য প্রস্তুতি নিন। কোরআন, দোয়ার বই এবং তাসবীহ রাখুন।

টাকা-পয়সা নিরাপদ জায়গায় রাখুন। পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি আলাদা রাখুন। জরুরি ফোন নম্বর লিখে রাখুন।

নবীজির সুন্নত অনুযায়ী ওমরাহ

নবীজির সুন্নত অনুযায়ী ওমরাহ করা প্রতিটি মুসলমানের লক্ষ্য। রাসূল (সা.) নিজে চারবার ওমরাহ করেছেন। তার পদ্ধতি অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।

প্রিয় নবী ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পাঠ করতেন। “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।”

তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতেন বা স্পর্শ করতেন। সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করতেন। রমল করতেন প্রথম তিন চক্করে। অর্থাৎ কাঁধ দুলিয়ে দ্রুত হাঁটতেন।

তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। এরপর যমযমের পানি পান করতেন। সাঈর সময় পুরুষেরা সবুজ বাতির মাঝে দৌড়াতেন।

ওমরাহ করার সময় দোয়া

ওমরাহ করার সময় দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। কাবা শরীফ দেখার সময় যে কোনো দোয়া করতে পারেন। তাওয়াফ অবস্থায় প্রতিটি চক্করে আলাদা দোয়া আছে।

হাজরে আসওয়াদের কাছে দোয়া করুন। “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।” রুকনে ইয়ামানীতে “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়া কিনা আজাবান্নার।”

সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ” পাঠ করুন। মারওয়া পাহাড়েও একই দোয়া করুন। নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে যা চান তাই চাইতে পারেন।

মাতাফে অবস্থানকালে দোয়া কবুল হয়। জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করুন। মুল্তাজামে (কাবার দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে) দোয়া বিশেষ কবুল হয়।

ওমরাহর ইহরাম পরার নিয়ম

ওমরাহর ইহরাম পরার নিয়ম সঠিকভাবে জানা জরুরি। মীকাত থেকে অবশ্যই ইহরাম বাঁধতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যাত্রাকারীরা সাধারণত বিমানেই ইহরাম পরেন।

প্রথমে ভালো করে গোসল করুন। নখ কাটুন, অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করুন। কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না ইহরাম পরার পর। তবে ইহরামের আগে ব্যবহার করা যায়।

দুই পিস সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরুন। নিচের অংশ ইজার এবং উপরের অংশ রিদা। কোনো সেলাই বা বোতাম থাকতে পারবে না। মহিলারা সাধারণ পোশাক পরবেন তবে মুখ-হাত খোলা রাখবেন।

ইহরাম পরার পর দুই রাকাত নামাজ পড়ুন। এরপর ওমরাহর নিয়ত করুন এবং তালবিয়া পাঠ শুরু করুন। নিয়ত করার সময় বলুন, “আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফায়াস্সিরহা লি ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি।”

ওমরাহর ফরজ ও ওয়াজিব

ওমরাহর ফরজ ও ওয়াজিব জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফরজ কাজগুলো বাদ পড়লে ওমরাহ হবে না। ওয়াজিব ছেড়ে দিলে দম দিতে হবে।

ওমরাহর ফরজ তিনটি। প্রথমত, ইহরাম বাঁধা। মীকাত থেকে নিয়ত করে ইহরামের কাপড় পরা। দ্বিতীয়ত, তাওয়াফ করা। কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ। তৃতীয়ত, সাফা-মারওয়ায় সাঈ। এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাওয়া-আসা।

ওয়াজিব হলো মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। মীকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম পরতে হবে। আরেকটি ওয়াজিব হলো চুল কাটা বা ছোট করা। পুরো মাথা মুড়ানো সুন্নত।

তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। মাকামে ইব্রাহীমের কাছে পড়া সুন্নত। সম্ভব না হলে হারাম শরীফের যে কোনো জায়গায় পড়া যায়।

মহিলাদের ওমরাহ করার নিয়ম

মহিলাদের ওমরাহ করার নিয়ম কিছুটা ভিন্ন। প্রথম শর্ত হলো মাহরামের সাথে থাকা। স্বামী, বাবা, ভাই, ছেলে বা অন্য মাহরাম পুরুষ সাথে থাকতে হবে। একা ভ্রমণ করা যাবে না।

ইহরামের সময় মহিলারা সাধারণ পোশাক পরবেন। মুখে নেকাব বা হাতে গ্লাভস পরা নিষেধ। তবে পর পুরুষের সামনে মুখ ঢেকে রাখা যায় কাপড় দিয়ে। শুধু ইহরাম অবস্থায় মুখে কিছু লাগানো যাবে না।

হায়েজ-নিফাসের সময় ওমরাহ করা যায় না। পাক হওয়ার পর ওমরাহ সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফ ও নামাজ এই অবস্থায় নিষেধ তবে সাঈ করা যায়।

মহিলাদের চুল সম্পূর্ণ কাটার দরকার নেই। চুলের অগ্রভাগ থেকে সামান্য কেটে নিলেই হবে। আঙুলের এক কড়া পরিমাণ কাটাই যথেষ্ট।

ওমরাহর সময় নিষিদ্ধ কাজ

ওমরাহর সময় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। ইহরাম অবস্থায় বেশ কিছু কাজ হারাম। এগুলো করলে কাফফারা বা দম দিতে হবে।

সেলাই করা কাপড় পরা নিষেধ। টুপি, মোজা, গেঞ্জি, পেন্ট, শার্ট কিছুই পরা যাবে না। খোলা চপ্পল বা স্যান্ডেল পরতে হবে। মাথা ও মুখ ঢাকা যাবে না।

সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম। সাবান, শ্যাম্পু, তেল যেকোনো কিছুতেই সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করা যাবে না। সুগন্ধিহীন সাবান ব্যবহার করুন। আতর বা পারফিউম একদম নিষেধ।

নখ কাটা ও চুল কাটা নিষিদ্ধ। শরীরের কোনো অংশের চুল কাটা বা ছিড়া যাবে না। দাড়ি কামানো যাবে না। নখেও হাত দেওয়া নিষেধ।

শিকার করা বা শিকারে সাহায্য করা হারাম। কোনো প্রাণী হত্যা করা যাবে না। তবে ক্ষতিকারক পোকামাকড় মারা যায়। বিবাহ করা বা বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া নিষেধ।

ওমরাহ ভ্রমণ গাইড

ওমরাহ ভ্রমণ গাইড মেনে চললে ভ্রমণ সহজ হবে। প্রথমে ভিসার জন্য আবেদন করুন। এজেন্সির মাধ্যমে বা নিজেই করতে পারেন। টিকেট বুকিং এবং হোটেল বুকিং করুন।

মক্কায় হারাম শরীফের কাছে হোটেল বুকিং করুন। দূরে থাকলে যাওয়া-আসা করতে কষ্ট হবে। তবে কাছের হোটেল ব্যয়বহুল। বাজেট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন।

স্থানীয় সিম কিনে নিন যোগাযোগের জন্য। রিয়াল বদলানোর ব্যবস্থা করুন। ডলার বা টাকা রিয়ালে পরিবর্তন করুন। এটিএম কার্ড সাথে রাখুন।

পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নিন। মক্কায় বাস, ট্যাক্সি এবং উবার পাওয়া যায়। হারাম শরীফে যাওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়াই ভালো। ভিড়ের কারণে গাড়ি কম চলে।

মদিনা যেতে চাইলে আগে থেকেই বুকিং করুন। মক্কা থেকে মদিনা বাসে চার ঘণ্টার পথ। মদিনায় গেলে মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হবে।

প্রথমবার ওমরাহ করার টিপস

প্রথমবার ওমরাহ করার টিপস ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ

প্রথমবার ওমরাহ করার টিপস মেনে চললে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়। আগে থেকেই সব নিয়ম-কানুন শিখে নিন। অভিজ্ঞ কারো সাথে গেলে ভালো হয়।

ভিড়ের সময় এড়িয়ে চলুন। রাতে বা ভোরে তাওয়াফ করলে কম ভিড় থাকে। দুপুরে রোদ বেশি থাকে তাই সকাল-সন্ধ্যায় তাওয়াফ করুন। জুমার দিন বেশি ভিড় হয়।

পানি বেশি পান করুন। ডিহাইড্রেশন এড়াতে নিয়মিত পানি পান করুন। জমজমের পানি পান করার চেষ্টা করুন। তবে অন্য পানিও পান করতে পারেন।

জুতা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই দামি জুতা পরবেন না। প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ভালো। জুতায় নাম লিখে দিন বা চিহ্ন দিন।

মোবাইল ফোন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সবসময় সাথে রাখুন। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। ফটোকপি আলাদা রাখুন।

রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যাবেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখুন। হৃদরোগী এবং বয়স্কদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।

ওমরাহর ইতিহাস ও গুরুত্ব

ওমরাহর ইতিহাস ও গুরুত্ব অনেক প্রাচীন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সময় থেকেই এই ইবাদতের প্রচলন। আল্লাহ তাআলা ইব্রাহীম (আ.) কে কাবা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

হযরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম এই স্থানে এসে ইবাদত করেছেন। তারপর হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) কাবা নির্মাণ করেন। সেই থেকে মানুষ এখানে হজ ও ওমরাহ করে আসছেন।

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজে চারবার ওমরাহ করেছেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর তিনি প্রথম ওমরাহ করেন। এটিকে উমরাতুল কাজা বলা হয়। মক্কা বিজয়ের পর আরো তিনবার ওমরাহ করেন।

ওমরাহকে ‘হজে আসগার’ বা ছোট হজ বলা হয়। যদিও এটি ফরজ নয়, তবুও অনেক সওয়াব ও মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর ঘরে যাওয়া প্রতিটি মুসলমানের স্বপ্ন।

কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরাহ সম্পূর্ণ করো।” (সূরা বাকারা: ১৯৬) এই আয়াতে হজের সাথে ওমরাহর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, “এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ, এর মধ্যবর্তী সময়ের পাপসমূহের কাফফারা।” (বুখারী ও মুসলিম) এই হাদিস থেকে ওমরাহের গুরুত্ব বোঝা যায়।

আরেক হাদিসে এসেছে, “রমজান মাসে ওমরাহ করা হজের সমান সওয়াবের।” (বুখারী ও মুসলিম) তাই অনেকে রমজানে ওমরাহ করতে পছন্দ করেন।

উপসংহার

ওমরাহ করার নিয়ম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এই পবিত্র ইবাদত আল্লাহর নিকট অনেক প্রিয়। সঠিক পদ্ধতিতে ওমরাহ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।

প্রতিটি মুসলমানের উচিত জীবনে একবার হলেও ওমরাহ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফিক দিন। সঠিক নিয়মে ওমরাহ সম্পন্ন করার তাওফিক দিন।

মনে রাখবেন, শুধু ওমরাহ করলেই হবে না। ওমরাহের শিক্ষা জীবনে কাজে লাগাতে হবে। পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে।

যারা এখনো ওমরাহ করার সুযোগ পাননি, তারা ধৈর্য রাখুন। আল্লাহ চাইলে একদিন সুযোগ হবে। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। দোয়া করুন যেন আল্লাহ তাওফিক দেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

ওমরাহ করতে কত খরচ হয়?

ওমরাহ করতে খরচ নির্ভর করে প্যাকেজের উপর। সাধারণত ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ভিসা, টিকেট, হোটেল, খাবার সব মিলিয়ে এই খরচ। ভালো হোটেলে থাকলে খরচ বেশি হবে।
এজেন্সি দিয়ে গেলে সব কিছু একসাথে পাওয়া যায়। নিজে নিজে করলে কিছুটা সাশ্রয় হতে পারে। তবে নতুনদের জন্য এজেন্সি দিয়ে যাওয়াই ভালো।

ওমরাহ করতে কত দিন লাগে?

সাধারণত ৭-১৫ দিনের প্যাকেজ বেশি জনপ্রিয়। শুধু ওমরাহ করলে ৩-৫ দিনই যথেষ্ট। তবে মদিনা ভ্রমণ এবং বিশ্রামের জন্য বেশি দিন থাকা যায়।
রমজান মাসে প্যাকেজ লম্বা হয়। অনেকে ১০-২০ দিন থাকেন। হজের সময় ওমরাহ প্যাকেজ ৪০-৫০ দিনেরও হয়ে থাকে।

মহিলারা একা ওমরাহ করতে পারেন?

না, মহিলারা একা ওমরাহ করতে পারেন না। অবশ্যই মাহরাম পুরুষ সাথে থাকতে হবে। স্বামী, বাবা, ভাই, ছেলে বা অন্য মাহরাম থাকা জরুরি।
৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলারা গ্রুপের সাথে যেতে পারেন। তবে মাহরামের সাথে যাওয়াই উত্তম। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী এটিই সঠিক নিয়ম।

ওমরাহ কোন মাসে করা ভালো?

যে কোনো মাসেই ওমরাহ করা যায়। তবে রমজান মাসে ওমরাহের বিশেষ ফজিলত আছে। রাসূল (সা.) বলেছেন রমজানের ওমরাহ হজের সমান সওয়াবের।
হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) ওমরাহ করা উত্তম। তবে শীতকালে আবহাওয়া ভালো থাকে। গ্রীষ্মকালে অনেক গরম পড়ে।

ওমরাহর পর কী করণীয়?

ওমরাহর পর সাধারণ পোশাক পরা যায়। নিষিদ্ধ কাজগুলো আবার করা যায়। তবে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। ওমরাহের শিক্ষা জীবনে কাজে লাগানো দরকার।
বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ুন। কোরআন তেলাওয়াত করুন। দরুদ শরিফ পাঠ করুন। মদিনা গেলে রওজা শরীফ জিয়ারত করুন।

ওমরাহে গিয়ে অসুস্থ হলে কী করবেন?

ওমরাহে গিয়ে অসুস্থ হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিন। মক্কা-মদিনায় ভালো হাসপাতাল আছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখুন।
যদি ওমরাহ সম্পূর্ণ করতে না পারেন, তাহলে পরে সুস্থ হয়ে সম্পন্ন করুন। অসুস্থতার কারণে কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

শিশুদের ওমরাহ হয় কি না?

হ্যাঁ, শিশুদের ওমরাহ হয়। তবে তাদের জন্য আলাদা নিয়ম আছে। শিশুরা ইহরাম পরবে না তবে অভিভাবক তাদের নিয়ে তাওয়াফ ও সাঈ করবেন।
শিশুদের পক্ষে অভিভাবক নিয়ত করবেন। বাচ্চারা কান্নাকাটি করলে ধৈর্য রাখুন। তাদের সাথে খাবার ও পানি রাখুন। ভিড়ে সাবধান থাকুন।

কতবার ওমরাহ করা যায়?

যতবার চান ততবার ওমরাহ করতে পারেন। কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। প্রিয় নবী (সা.) চারবার ওমরাহ করেছেন। সাহাবীরাও একাধিকবার করেছেন।
একই ভ্রমণে একাধিক ওমরাহ করতে চাইলে তানঈম বা জিরানা থেকে নতুন করে ইহরাম বাঁধতে হবে। মক্কার বাইরে গিয়ে আবার ইহরাম পরতে হবে।

ওমরাহর জন্য কোন ভাষা শেখা জরুরি?

আরবি ভাষা জানলে ভালো হয়। তবে অবশ্যই জানা দরকার নেই। তালবিয়া, তাওয়াফ ও সাঈর দোয়া বাংলা অর্থসহ শিখে নিন। গাইড বুক সাথে রাখুন।
স্থানীয়রা ইংরেজি বুঝেন। বাংলাদেশী এজেন্ট বা গাইড সাথে থাকলে ভাষার সমস্যা হবে না। জরুরি কিছু আরবি শব্দ শিখে নিলেই চলবে।

ওমরাহ থেকে ফিরে কী উপহার আনবেন?

ওমরাহ থেকে ফিরে যমযমের পানি নিয়ে আসুন। খেজুর, তাসবীহ, আতর এবং কোরআন শরীফ আনতে পারেন। মদিনার খেজুর বিশেষ মানের।
পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য ছোটখাট উপহার আনুন। তবে অতিরিক্ত খরচ করবেন না। মূল উদ্দেশ্য ইবাদত, কেনাকাটা নয়। সবচেয়ে ভালো উপহার হলো দোয়া।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top