ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে আসবাবের ভূমিকা অনেক। সেগুন কাঠের ফার্নিচার এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পছন্দ। এই কাঠ শক্ত, টেকসই এবং দেখতে খুবই সুন্দর। বছরের পর বছর ব্যবহার করলেও এর গুণমান নষ্ট হয় না। অনেকে বাড়িতে নতুন ফার্নিচার কিনতে চান। তখন সেগুন কাঠই প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে। এই লেখায় আমরা সেগুন কাঠের ফার্নিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
বাংলাদেশে সেগুন কাঠের চাহিদা সবসময়ই বেশি। কারণ এই কাঠ পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং আর্দ্রতা সহনশীল। ঘরের ভেতরে বা বাইরে যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়। এর প্রাকৃতিক রঙ এবং দানা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সেগুন কাঠের ফার্নিচার যেকোনো ঘরে মর্যাদা এনে দেয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার ডিজাইন

আধুনিক ডিজাইনে সেগুন কাঠ অসাধারণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ধরনের নকশা এই কাঠে তৈরি করা যায়। ক্লাসিক, মডার্ন বা ট্র্যাডিশনাল যেকোনো স্টাইল সম্ভব। সেগুন কাঠের ফার্নিচার ডিজাইন নির্ভর করে আপনার রুচির ওপর। বেডরুম, লিভিং রুম বা ডাইনিং স্পেসের জন্য আলাদা ডিজাইন পাওয়া যায়। প্রতিটি ডিজাইন অনন্য এবং দৃষ্টিনন্দন।
হাতে খোদাই করা ডিজাইনও খুব জনপ্রিয়। এগুলো ঐতিহ্যবাহী এবং শিল্পের নিদর্শন। অনেকে সাধারণ ও মসৃণ ডিজাইন পছন্দ করেন। এটি ঘরকে আধুনিক চেহারা দেয়। বাজারে কাস্টম ডিজাইনের সুবিধাও রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী ফার্নিচার বানানো সম্ভব। এতে ঘরের সাথে পুরোপুরি মিল থাকে।
সেগুন কাঠ কাটা এবং আকার দেওয়া সহজ। তাই কারিগররা সহজেই জটিল নকশা তৈরি করতে পারেন। ডিজাইনে বৈচিত্র্য থাকায় সবার পছন্দমতো কিছু পাওয়া যায়। আপনি যদি অ্যান্টিক স্টাইল পছন্দ করেন তবে পুরনো আমলের ডিজাইন বেছে নিতে পারেন। আর যদি মিনিমালিস্ট হন, তবে সাধারণ লাইনওয়ালা ডিজাইন আদর্শ।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার দাম
সেগুন কাঠের ফার্নিচার দাম নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। কাঠের মান, ডিজাইনের জটিলতা এবং সাইজ মূল নির্ধারক। সাধারণত সেগুন কাঠ দামে একটু বেশি হয়। কিন্তু এর স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য দামের চেয়ে বেশি মূল্যবান। একটি সেগুন কাঠের খাট ৫০ হাজার থেকে শুরু হতে পারে। সোফা সেট ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ছোট টেবিল বা চেয়ার অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায়। কাস্টম মেড ফার্নিচার আরও বেশি খরচ হয়। কারণ এতে বিশেষ পরিশ্রম এবং সময় লাগে। তবে এই বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক। সেগুন কাঠের ফার্নিচার কয়েক প্রজন্ম টিকে থাকতে পারে। তাই একবার কিনলে বার বার কিনতে হয় না।
দাম বাড়াতে পারে যদি বিশেষ ফিনিশিং বা পলিশ করা হয়। গ্লস ফিনিশ বা ম্যাট ফিনিশ উভয়ই জনপ্রিয়। বাজারে তুলনা করে কিনলে ভালো দাম পাওয়া যায়। অনেক দোকান অফার এবং ছাড় দেয়। তাই সময় নিয়ে খোঁজ করা উচিত।
পুরাতন সেগুন কাঠের ফার্নিচার বিক্রয়
অনেকে পুরাতন সেগুন কাঠের ফার্নিচার বিক্রয় করতে চান। এটি বেশ লাভজনক হতে পারে। সেগুন কাঠের মান সময়ের সাথে কমে না। বরং পুরনো কাঠের চাহিদা বেশি থাকে। অ্যান্টিক প্রেমীরা বিশেষভাবে খোঁজেন পুরনো আসবাব। এগুলো অনন্য ডিজাইন এবং ইতিহাস বহন করে।
পুরনো ফার্নিচার বিক্রি করতে হলে ভালো অবস্থায় রাখতে হবে। পরিষ্কার এবং মেরামত করে রাখলে দাম ভালো পাওয়া যায়। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়ের সুবিধা রয়েছে। ফেসবুক মার্কেটপ্লেস বা বিকাশের মতো সাইট ব্যবহার করা যায়। এছাড়া স্থানীয় পুরনো ফার্নিচারের দোকানও আছে।
অনেক সময় পুরনো আসবাব নতুনের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। কারণ এর রিভিন্টেজ ভ্যালু থাকে। ক্রেতারা খুঁজে পান অরিজিনাল কারুকাজ এবং ঐতিহ্য। তাই বাড়িতে পুরনো সেগুন কাঠের ফার্নিচার থাকলে ফেলে না দিয়ে বিক্রয় করা উচিত।
আসবাবপত্রে সেগুন কাঠের ব্যবহার
সেগুন কাঠ আসবাবপত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কাঠ। এর শক্তি এবং স্থায়িত্ব অতুলনীয়। সেগুন কাঠ প্রাকৃতিকভাবে তেল সমৃদ্ধ। এই তেল কাঠকে পোকামাকড় এবং পচন থেকে রক্ষা করে। তাই আসবাবপত্রে সেগুন কাঠের ব্যবহার খুবই উপযুক্ত। এটি দীর্ঘদিন নতুনের মতো থাকে।
সেগুন কাঠ আর্দ্রতার প্রতি খুবই সহনশীল। বর্ষাকালেও এতে কোনো সমস্যা হয় না। এটি ফুলে যায় না বা বাঁকা হয় না। তাই বাথরুমের ফার্নিচারেও ব্যবহৃত হয়। এর প্রাকৃতিক রঙ সোনালি বাদামি বেশ আকর্ষণীয়। পলিশ করলে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন ধরনের আসবাবে সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়। খাট, আলমারি, সোফা, টেবিল, চেয়ার সবেতেই ব্যবহার হয়। এই কাঠ ভারী এবং মজবুত হওয়ায় স্ট্রাকচারাল সাপোর্ট দেয়। ফার্নিচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তাই ঘর সাজাতে সেগুন কাঠ সবচেয়ে উপযুক্ত পছন্দ।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার জায়গা ঢাকা
ঢাকায় সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার অনেক জায়গা আছে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং উত্তরার বাজারগুলো বিখ্যাত। এছাড়া বঙ্গবাজার এলাকায় অনেক দোকান রয়েছে। নিউমার্কেটেও ফার্নিচারের দোকান পাওয়া যায়। এসব জায়গায় বিভিন্ন দাম এবং ডিজাইনের ফার্নিচার মিলবে।
- মোহাম্মদপুরের সাত রাস্তা ফার্নিচার বাজার অত্যন্ত জনপ্রিয়।
- মিরপুর ১০ নম্বরের দোকানগুলোতে কাস্টম অর্ডারের সুবিধা আছে।
- উত্তরার সেক্টর ৭ এবং ১১ তে ভালো শোরুম পাবেন।
- পান্থপথ এলাকায় বড় বড় ফার্নিচার শোরুম রয়েছে।
ঢাকার বাজারে দর কষাকষির সুযোগ থাকে। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দাম তুলনা করা উচিত। অনেক শোরুমে ডেলিভারির সুবিধা দেওয়া হয়। কেনার আগে কাঠের মান ভালো করে দেখে নিতে হবে। বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনলে ঠকার ভয় থাকে না।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার জায়গা চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার জন্য বিখ্যাত কিছু বাজার আছে। আগ্রাবাদ এলাকা ফার্নিচারের জন্য খুবই পরিচিত। এখানে অনেক পুরনো এবং নতুন দোকান রয়েছে। চকবাজার এলাকাতেও ভালো দোকান পাওয়া যায়। এসব জায়গায় মানসম্পন্ন সেগুন কাঠের ফার্নিচার পাবেন।
অক্সিজেন মোড়ের আশপাশে কিছু শোরুম আছে। এগুলোতে আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচার মেলে। চট্টগ্রামের বাজারে ঢাকার চেয়ে কিছু কম দামে পাওয়া যায়। কারণ এখানে পরিবহন খরচ কম লাগে। স্থানীয় কারিগরদের কাজও বেশ ভালো মানের।
চট্টগ্রামের কাস্টমাররা সাধারণত মজবুত এবং সরল ডিজাইন পছন্দ করেন। অনেক দোকানে হোম ডেলিভারি সার্ভিস আছে। কেনার সময় ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না। বিশেষ উৎসবের সময় বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার জায়গা সিলেট
সিলেটে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার জন্য বেশ কিছু ভালো জায়গা রয়েছে। জিন্দাবাজার এলাকা সবচেয়ে বিখ্যাত। এখানে অনেক পুরনো এবং অভিজ্ঞ দোকান আছে। বন্দরবাজার এলাকাতেও ভালো শোরুম পাওয়া যায়। এছাড়া আম্বরখানা পয়েন্টের কাছে নতুন কিছু ফার্নিচার স্টোর খুলেছে।
সিলেটের বাজারে স্থানীয় কাঠের পাশাপাশি আমদানিকৃত সেগুন কাঠ পাওয়া যায়। স্থানীয় কারিগররা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। কাস্টম অর্ডার দিলে তারা আপনার চাহিদা মতো তৈরি করে দেয়। দাম নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে।
- জিন্দাবাজারে ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের ফার্নিচার বেশি পাওয়া যায়।
- বন্দরবাজারে আধুনিক এবং মডার্ন স্টাইল বেশি।
- আম্বরখানায় নতুন ট্রেন্ডের ফার্নিচার পাবেন।
- স্থানীয় কারিগররা সাশ্রয়ী দামে ভালো কাজ করেন।
সিলেট থেকে কিনলে পরিবহন খরচ কম হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশ বিশ্বস্ত এবং সহযোগী। তাই সিলেটে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনা বেশ সুবিধাজনক।
মোবাইলপূর সেগুন কাঠের ফার্নিচার বাজার
মোবাইলপুর এলাকা সেগুন কাঠের ফার্নিচারের জন্য খুবই পরিচিত। এখানে অনেক পুরনো এবং নতুন দোকান রয়েছে। মোবাইলপূর সেগুন কাঠের ফার্নিচার বাজার ঢাকার অন্যতম বড় বাজার। এখানে পাইকারি এবং খুচরা উভয় দামে বিক্রি হয়। প্রতিদিন শত শত ক্রেতা এখানে আসেন।
এই বাজারের বিশেষত্ব হলো এখানে কাস্টম মেড ফার্নিচার পাওয়া যায়। আপনি চাইলে নিজের ডিজাইন দিতে পারবেন। কারিগররা সেই অনুযায়ী তৈরি করে দেবে। এছাড়া রেডিমেড ফার্নিচারেরও বিশাল কালেকশন আছে। যেকোনো বাজেটের ক্রেতা এখানে উপযুক্ত পণ্য পাবেন।
দোকানগুলো সাধারণত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকতে পারে। কেনার সময় ভালো করে দর কষাকষি করতে হবে। অনেক দোকানই ডেলিভারি চার্জ ছাড়া পণ্য পৌঁছে দেয়। মোবাইলপুরে গেলে একসাথে অনেক অপশন দেখা সম্ভব।
সেগুন কাঠের খাট ডিজাইন
সেগুন কাঠের খাট ডিজাইন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। ক্লাসিক থেকে আধুনিক সব ধরনের ডিজাইন পাওয়া যায়। অনেকে সাধারণ এবং মসৃণ ডিজাইন পছন্দ করেন। আবার কেউ কেউ খোদাই করা জটিল নকশা চান। প্রতিটি ডিজাইনই আলাদা সৌন্দর্য বহন করে।
ফোর পোস্ট খাট খুবই জনপ্রিয়। এতে চারটি খুঁটি থাকে যা রাজকীয় চেহারা দেয়। স্লেজ ডিজাইন খাটও অনেকের পছন্দ। এর হেডবোর্ড এবং ফুটবোর্ড বাঁকানো থাকে। প্ল্যাটফর্ম স্টাইল খাট আধুনিক এবং মিনিমালিস্ট। স্টোরেজ যুক্ত খাটও পাওয়া যায়।
ডিজাইনের ধরন | বৈশিষ্ট্য | মূল্য পরিসীমা | উপযুক্ততা |
ফোর পোস্ট | রাজকীয়, চারটি খুঁটি | ৮০-১৫০ হাজার | বড় বেডরুম |
স্লেজ | বাঁকানো ডিজাইন | ৬০-১২০ হাজার | ক্লাসিক ঘর |
প্ল্যাটফর্ম | সরল, আধুনিক | ৫০-১০০ হাজার | ছোট স্পেস |
স্টোরেজ | ড্রয়ার যুক্ত | ৭০-১৩০ হাজার | স্পেস সেভিং |
সেগুন কাঠের খাট টেকসই এবং আরামদায়ক। এর ওপর ম্যাট্রেস রাখলে দারুণ ঘুম হয়। ডিজাইন নির্বাচন করার সময় ঘরের আকার বিবেচনা করতে হবে। ছোট ঘরে বড় ডিজাইন মানাবে না। উপযুক্ত ডিজাইন বেছে নিলে বেডরুম হবে আরও সুন্দর।
সেগুন কাঠের আলমারি দাম
সেগুন কাঠের আলমারি দাম নির্ভর করে আকার এবং ডিজাইনের ওপর। একটি ছোট দুই দরজার আলমারি ৪০-৬০ হাজার টাকা। তিন বা চার দরজার আলমারি ৮০-১৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অলংকৃত এবং খোদাই করা আলমারি আরও বেশি দামে পাওয়া যায়।
আলমারির ভেতরে তাক এবং হ্যাঙ্গারের ব্যবস্থা থাকলে দাম বাড়ে। মিরর লাগানো আলমারিও জনপ্রিয়। এসব বাড়তি সুবিধা দাম বৃদ্ধি করে। কিন্তু এগুলো ব্যবহারিক দিক থেকে খুবই প্রয়োজনীয়। স্লাইডিং ডোর আলমারি স্পেস সেভ করে।
কাস্টম মেড আলমারি একটু বেশি দামে হয়। কারণ এতে বিশেষ মাপ এবং ডিজাইন থাকে। তবে ঘরের সাথে পারফেক্ট ফিট হওয়ায় এটি উপযুক্ত। বাজারে সাধারণ রেডিমেড আলমারিও পাওয়া যায়। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
- ছোট দুই দরজার আলমারি ৪০-৬০ হাজার টাকা।
- তিন দরজার মাঝারি সাইজের আলমারি ৮০-১০০ হাজার টাকা।
- চার বা পাঁচ দরজার বড় আলমারি ১২০-১৫০ হাজার টাকা।
- কাস্টম ডিজাইন এবং ফিনিশিং অনুযায়ী আরও বেশি হতে পারে।
সেগুন কাঠের আলমারি দীর্ঘস্থায়ী এবং মজবুত। একবার কিনলে দশকের পর দশক ব্যবহার করা যায়। তাই দাম একটু বেশি হলেও বিনিয়োগ সার্থক হয়।
সেগুন কাঠের টেবিল চেয়ার সেট
ডাইনিং রুমের জন্য সেগুন কাঠের টেবিল চেয়ার সেট অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি ঘরে একটি আভিজাত্য এনে দেয়। সেগুন কাঠ টেকসই এবং ভারী ওজন সহ্য করতে পারে। তাই ডাইনিং টেবিলের জন্য উপযুক্ত। বিভিন্ন সাইজের সেট পাওয়া যায়।
চার চেয়ার সহ ছোট সেট পরিবারের জন্য ভালো। ছয় বা আট চেয়ারের সেট বড় পরিবার বা অতিথি আপ্যায়নের জন্য উপযুক্ত। টেবিলের আকার গোলাকার বা আয়তাকার হতে পারে। চেয়ারে কুশন থাকলে আরামদায়ক হয়।
টেবিল চেয়ার সেটের ডিজাইন বিভিন্ন রকম। কিছু সেটে হাতে খোদাই করা কাজ থাকে। এগুলো দেখতে অসাধারণ সুন্দর। সরল ডিজাইনও অনেকের পছন্দ। স্থান এবং বাজেট অনুযায়ী বাছাই করা উচিত।
সেট সাইজ | টেবিল মাপ | চেয়ার সংখ্যা | আনুমানিক দাম |
ছোট | ৪×৩ ফুট | ৪টি | ৫০-৮০ হাজার |
মাঝারি | ৫×৩.৫ ফুট | ৬টি | ৮০-১২০ হাজার |
বড় | ৬×৪ ফুট | ৮টি | ১৩০-২০০ হাজার |
এক্সট্রা লার্জ | ৭×৪.৫ ফুট | ১০টি | ২০০-৩০০ হাজার |
সেগুন কাঠের টেবিল চেয়ার সেট দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ। প্রতিদিনের ব্যবহারেও এর সৌন্দর্য কমে না। পরিবারের সাথে খাবার সময় আরও আনন্দদায়ক হয়। মেহমানদের সামনেও গর্বের সাথে উপস্থাপন করা যায়।
সেগুন কাঠের সোফা ডিজাইন
লিভিং রুমের প্রধান আকর্ষণ হলো সোফা সেট। সেগুন কাঠের সোফা ডিজাইন অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়। ক্লাসিক থেকে কনটেম্পরারি সব ধরনের ডিজাইন পাওয়া যায়। সোফার ফ্রেম সেগুন কাঠের হলে অনেক বছর টিকে থাকে। কুশন বদলে নতুন লুক দেওয়া যায়।
এল-শেপ সোফা অনেক জায়গা দেয় এবং আরামদায়ক। তিন পিস সোফা সেট সবচেয়ে কমন। এতে একটি বড় সোফা এবং দুটি সিঙ্গেল চেয়ার থাকে। রিক্লাইনার সোফাও খুব জনপ্রিয়। হাতে খোদাই করা আর্মরেস্ট সোফাকে রাজকীয় করে তোলে।
আধুনিক ডিজাইনে সরল লাইন এবং মিনিমাল কার্ভ দেখা যায়। এগুলো স্মার্ট এবং স্টাইলিশ দেখায়। ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনে জটিল নকশা এবং ভারী কাঠের কাজ থাকে। পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো স্টাইল বেছে নেওয়া যায়।
সোফার কুশন এবং ফ্যাব্রিক গুরুত্বপূর্ণ। সেগুন কাঠের ফ্রেম যেকোনো ফ্যাব্রিকের সাথে সুন্দর দেখায়। চামড়া বা ভেলভেট ব্যবহার করলে বিলাসবহুল চেহারা পাওয়া যায়। সুতি বা লিনেন ফ্যাব্রিক ক্যাজুয়াল লুক দেয়। সেগুন কাঠের সোফা ডিজাইন সব ধরনের ইন্টেরিয়রের সাথে মানানসই।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার ভালো নাকি খারাপ
অনেকে প্রশ্ন করেন সেগুন কাঠের ফার্নিচার ভালো নাকি খারাপ। উত্তর হলো এটি অত্যন্ত ভালো এবং মানসম্পন্ন। সেগুন কাঠের অনেক সুবিধা রয়েছে। এটি প্রাকৃতিক তেল সমৃদ্ধ যা পোকামাকড় দূরে রাখে। আর্দ্রতায় ফুলে যায় না বা সংকুচিত হয় না।
সেগুন কাঠ খুবই শক্ত এবং টেকসই। ভারী ওজন সহ্য করতে পারে। সময়ের সাথে আরও শক্ত হয়ে যায়। রঙ এবং দানা প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর। পলিশ করলে আরও উজ্জ্বল হয়। এই কাঠে খুব সহজেই ডিজাইন কাটা যায়।
কিছু অসুবিধাও আছে। প্রথমত দাম বেশি। অন্যান্য কাঠের তুলনায় সেগুন ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত ওজন বেশি হওয়ায় সরানো কঠিন। তবে এই অসুবিধাগুলো তুলনায় সুবিধা অনেক বেশি। দীর্ঘমেয়াদে সেগুন কাঠ সবচেয়ে লাভজনক।
- পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং পচে না।
- আর্দ্রতা এবং আবহাওয়া সহনশীল।
- দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকে।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয় দানা।
তাই বলা যায় সেগুন কাঠের ফার্নিচার অবশ্যই ভালো। বিনিয়োগ সার্থক হয় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
সেগুন কাঠের আসবাবপত্রের স্থায়িত্ব
সেগুন কাঠের আসবাবপত্রের স্থায়িত্ব অসাধারণ। এই কাঠ সহজে নষ্ট হয় না। পঞ্চাশ থেকে একশ বছর পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে। সঠিক যত্ন নিলে আরও বেশি দিন টিকে। অনেক পরিবারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই ফার্নিচার ব্যবহৃত হয়।
সেগুন কাঠে প্রাকৃতিক তেল থাকে। এটি কাঠকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে ফাটল ধরে না। আর্দ্রতায় ক্ষতি হয় না। তাই বর্ষাকালেও নিরাপদ। এই কাঠ সময়ের সাথে শক্ত হয়ে যায়।
নিয়মিত পরিষ্কার এবং পলিশ করলে স্থায়িত্ব বাড়ে। বছরে একবার ভালো পলিশ করা উচিত। ধুলো নিয়মিত মুছে ফেলতে হবে। পানি বা তরল পদার্থ পড়লে তাড়াতাড়ি মুছতে হবে। এসব সাধারণ যত্নে ফার্নিচার নতুনের মতো থাকে।
স্ট্রাকচারাল ইন্টিগ্রিটি দীর্ঘদিন বজায় থাকে। জয়েন্ট বা সংযোগস্থল দুর্বল হয় না। তাই সেগুন কাঠের আসবাবপত্রের স্থায়িত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেন জনপ্রিয়
বাংলাদেশে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেন জনপ্রিয় এর অনেক কারণ আছে। প্রথমত এর টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতি। দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মর্যাদা। তৃতীয়ত রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং কম খরচ। এসব কারণে মানুষ সেগুন কাঠ পছন্দ করে।
সেগুন কাঠ স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবেও দেখা হয়। যাদের ঘরে সেগুন কাঠের ফার্নিচার আছে তারা সচ্ছল বলে গণ্য হয়। এটি আভিজাত্য এবং রুচির পরিচয় দেয়। অতিথিরাও এই আসবাব দেখে প্রভাবিত হন।
আমাদের সংস্কৃতিতেও সেগুন কাঠের গুরুত্ব আছে। পুরনো আমল থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দাদা-দাদিরাও সেগুন কাঠ ব্যবহার করতেন। তাই এর প্রতি একটা আবেগ কাজ করে। ঐতিহ্য ধরে রাখার ইচ্ছাও থাকে।
জনপ্রিয়তার কারণ | বিস্তারিত | গুরুত্ব স্তর |
দীর্ঘস্থায়িত্ব | ৫০-১০০ বছর টিকে | খুব উচ্চ |
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য | সোনালি রঙ ও দানা | উচ্চ |
পোকামাকড় প্রতিরোধী | প্রাকৃতিক তেল সুরক্ষা দেয় | খুব উচ্চ |
রক্ষণাবেক্ষণ সহজ | কম যত্নে ভালো থাকে | মাঝারি |
বাজারে অনেক কাঠ থাকলেও সেগুন কাঠের চাহিদা সবসময় বেশি। এর মান এবং গুণাগুণ অতুলনীয়। তাই সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেন জনপ্রিয় তা বোঝা যায়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচারের মান
সেগুন কাঠের ফার্নিচারের মান নির্ভর করে কাঠের গ্রেড এবং কারিগরি কাজের ওপর। প্রথম গ্রেড সেগুন কাঠ সবচেয়ে ভালো। এতে কোনো গিঁট বা দাগ থাকে না। রঙ সমান এবং দানা স্পষ্ট। দ্বিতীয় বা তৃতীয় গ্রেডে ছোট ত্রুটি থাকতে পারে।
কাঠের শুকানোর প্রক্রিয়াও মান নির্ধারণ করে। সঠিকভাবে শুকানো কাঠ বাঁকা হয় না বা ফাটে না। কারিগরের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কারিগর মজবুত জয়েন্ট এবং মসৃণ ফিনিশ দেয়। ফার্নিচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
ফিনিশিং এবং পলিশ মান বাড়ায়। ভালো পলিশ কাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বের করে আনে। এটি কাঠকে সুরক্ষাও দেয়। নিম্নমানের পলিশ দ্রুত উঠে যায়। তাই ভালো ফিনিশিং জরুরি।
কেনার সময় কাঠের মান যাচাই করতে হবে। কাঠে কড়া দিলে শব্দ বুঝা যায়। ভালো সেগুন কাঠ গভীর শব্দ করে। ওজন দেখেও বোঝা যায়। ভালো কাঠ ভারী হয়। এছাড়া রঙ এবং গন্ধও পরীক্ষা করা উচিত। সেগুন কাঠের একটা বিশেষ গন্ধ আছে।
সেগুন কাঠের পুরাতন ফার্নিচার মেরামত
সেগুন কাঠের পুরাতন ফার্নিচার মেরামত করে আবার নতুনের মতো করা সম্ভব। সেগুন কাঠ শক্ত হওয়ায় মেরামত সহজ। ছোটখাটো ক্ষতি সহজেই সারানো যায়। পুরনো ফার্নিচারে অ্যান্টিক ভ্যালু থাকে। মেরামত করে রাখা উচিত।
প্রথমে পুরনো পলিশ এবং রঙ তুলে ফেলতে হয়। স্যান্ডপেপার দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা হয়। এরপর ফাটল বা গর্ত ফিলার দিয়ে ভরাট করা হয়। ভাঙা অংশ আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। প্রয়োজনে নতুন কাঠ যোগ করা যায়।
মেরামতের পর নতুন করে পলিশ করা হয়। এটি ফার্নিচারকে নতুন চেহারা দেয়। অনেক সময় পুরনো ডিজাইন বদলে নতুন ডিজাইন করা যায়। পুরনো খাট থেকে সোফা বানানোও সম্ভব। এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশ রক্ষা হয়।
- পুরনো পলিশ সম্পূর্ণ তুলে ফেলতে হবে।
- ফাটল এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতে হবে।
- জয়েন্ট শক্ত করে আঠা এবং স্ক্রু লাগাতে হবে।
- নতুন পলিশ এবং ফিনিশিং দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ কারিগর খুঁজে বের করা উচিত। তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন। সেগুন কাঠের পুরাতন ফার্নিচার মেরামত করে আরও কয়েক দশক ব্যবহার করা যায়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার অনলাইনে কিনুন
আজকাল সেগুন কাঠের ফার্নিচার অনলাইনে কিনুন সুবিধা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে ফার্নিচার পাওয়া যায়। ঘরে বসে অর্ডার করা যায়। ডেলিভারিও দ্রুত হয়। অনলাইনে বিস্তারিত ছবি এবং বিবরণ দেখা যায়।
দারাজ, ইভ্যালি এবং অন্যান্য সাইটে ভালো কালেকশন আছে। ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও অনেক বিক্রেতা রয়েছে। এখানে দাম তুলনা করা সহজ। কাস্টমার রিভিউ পড়ে মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অনেক সাইটে ইএমআই সুবিধা আছে।
তবে অনলাইনে কেনার সময় সাবধান হতে হবে। সবসময় বিশ্বস্ত বিক্রেতা থেকে কিনুন। ছবি এবং বাস্তবে পার্থক্য হতে পারে। কাঠের মান সরাসরি দেখা যায় না। তাই রিটার্ন পলিসি দেখে নিতে হবে। পণ্য হাতে পাওয়ার পর ভালো করে চেক করতে হবে।
অনেক অনলাইন শোরুম শোরুম ভিজিটের সুবিধাও দেয়। আগে অনলাইনে দেখে পছন্দ করে তারপর শোরুমে গিয়ে দেখা যায়। এটি নিরাপদ উপায়। হোম ডেলিভারি এবং সেটআপ সার্ভিসও থাকে। তাই সেগুন কাঠের ফার্নিচার অনলাইনে কিনুন এখন সহজ এবং সুবিধাজনক।
বাংলাদেশে সেগুন কাঠের ফার্নিচারের দাম তালিকা

বাংলাদেশে সেগুন কাঠের ফার্নিচারের দাম তালিকা বিভিন্ন আইটেমের জন্য আলাদা। নিচে একটি সাধারণ দাম তালিকা দেওয়া হলো। এটি এলাকা এবং দোকান ভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
খাট এবং বেডরুম ফার্নিচার সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন। ডাবল বেড ৫০ হাজার থেকে শুরু। ড্রেসিং টেবিল ৩০-৫০ হাজার টাকা। সাইড টেবিল ১৫-২৫ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ বেডরুম সেট ২-৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
লিভিং রুম ফার্নিচারের দাম একটু বেশি। তিন পিস সোফা সেট ১-২ লক্ষ টাকা। সেন্টার টেবিল ২০-৪০ হাজার টাকা। টিভি ক্যাবিনেট ৩০-৬০ হাজার টাকা। বুক শেল্ফ ২৫-৫০ হাজার টাকা।
ফার্নিচার আইটেম | সাইজ/ধরন | দাম পরিসীমা | মন্তব্য |
ডাবল বেড | ৬×৬ ফুট | ৫০-১২০ হাজার | ডিজাইন অনুযায়ী |
আলমারি | ৩-৪ দরজা | ৮০-১৫০ হাজার | সাইজ অনুযায়ী |
সোফা সেট | ৩+১+১ | ১০০-২০০ হাজার | ফ্যাব্রিক সহ |
ডাইনিং সেট | ৬ চেয়ার | ৮০-১৫০ হাজার | কুশন ছাড়া |
ড্রেসিং টেবিল | মিরর সহ | ৩০-৬০ হাজার | সাধারণ ডিজাইন |
বুক শেল্ফ | ৫-৬ ফুট উচ্চতা | ২৫-৫৫ হাজার | তাক সংখ্যা অনুযায়ী |
কাস্টম ফার্নিচার এই তালিকার বাইরে যেতে পারে। বিশেষ ডিজাইন এবং খোদাই কাজ দাম বাড়ায়। তাই বাংলাদেশে সেগুন কাঠের ফার্নিচারের দাম তালিকা একটি আনুমানিক ধারণা দেয়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার বনাম অন্যান্য কাঠ
সেগুন কাঠের ফার্নিচার বনাম অন্যান্য কাঠ তুলনা করলে সেগুনের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝা যায়। বাজারে শাল, মেহগনি, রোজউড এবং অন্যান্য কাঠ পাওয়া যায়। প্রতিটির নিজস্ব গুণাগুণ আছে। তবে সেগুন সামগ্রিকভাবে সেরা।
শাল কাঠও শক্ত এবং টেকসই। তবে এটি ভারী এবং কাজ করা কঠিন। দাম সেগুনের কাছাকাছি। মেহগনি কাঠ সুন্দর লাল রঙের। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। রোজউড ব্যয়বহুল এবং কম পাওয়া যায়। সাধারণ কাঠ যেমন আম বা কাঁঠাল দ্রুত নষ্ট হয়।
সেগুন কাঠ সব দিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ। দাম যুক্তিসঙ্গত এবং গুণমান চমৎকার। কাজ করা সহজ এবং ডিজাইন বৈচিত্র্যময়। আর্দ্রতা প্রতিরোধী এবং দীর্ঘস্থায়ী। এসব কারণে সেগুন সবচেয়ে জনপ্রিয়।
প্রতিটি কাঠের নিজস্ব ব্যবহার আছে। তবে ফার্নিচারের জন্য সেগুন আদর্শ। এর প্রাকৃতিক তেল সুরক্ষা দেয়। সময়ের সাথে আরও শক্ত হয়। অন্য কাঠ দুর্বল হয়ে যায়। তাই সেগুন কাঠের ফার্নিচার বনাম অন্যান্য কাঠ তুলনায় সেগুন বিজয়ী।
উপসংহার
সেগুন কাঠের ফার্নিচার একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং মূল্যবান বিনিয়োগ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শক্তি এবং স্থায়িত্ব অতুলনীয়। যদিও প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি, তবে বছরের পর বছর ব্যবহারের কথা চিন্তা করলে এটি সাশ্রয়ী। সেগুন কাঠ পোকামাকড় এবং আর্দ্রতা প্রতিরোধী হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।
ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সেগুন কাঠের বিকল্প নেই। এটি যেকোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে মানানসই। ক্লাসিক, মডার্ন বা ট্র্যাডিশনাল যেকোনো স্টাইলে ব্যবহার করা যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট বা অন্য যেকোনো শহরে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কিনতে পারবেন।
অনলাইন এবং অফলাইন উভয় জায়গায় ক্রয়ের সুবিধা আছে। কাস্টম ডিজাইনের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো ফার্নিচার বানাতে পারবেন। পুরনো ফার্নিচার মেরামত করেও নতুনের মতো করা সম্ভব। এতে পরিবেশও রক্ষা হয় এবং খরচও কমে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার শুধু আসবাব নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম হস্তান্তর করা যায়। পরিবারের স্মৃতি বহন করে। তাই নতুন বাড়ি বা ঘর সাজানোর সময় সেগুন কাঠের ফার্নিচার বেছে নিন। এটি আপনার সিদ্ধান্ত হবে জীবনের সেরা বিনিয়োগ।
আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে সেগুন কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মর্যাদা এবং রুচির প্রতীক। আপনার ঘরকে সুন্দর এবং আরামদায়ক করতে সেগুন কাঠের জুড়ি নেই। তাই দেরি না করে আজই সংগ্রহ করুন স্বপ্নের ফার্নিচার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কত বছর টিকে থাকে?
সঠিক যত্ন নিলে সেগুন কাঠের ফার্নিচার ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ব্যবহার করা হয়। এর প্রাকৃতিক তেল কাঠকে সুরক্ষা দেয়। সময়ের সাথে আরও শক্ত হয়ে যায়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি পোকায় ধরে?
না, সেগুন কাঠে পোকামাকড় ধরে না। এতে প্রাকৃতিক তেল আছে যা পোকা দূরে রাখে। এই কারণেই সেগুন কাঠ দীর্ঘস্থায়ী এবং জনপ্রিয়। কোনো রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই এটি নিরাপদ থাকে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচারের দাম কেন বেশি?
সেগুন গাছ বৃদ্ধি পেতে অনেক সময় লাগে। এর মান এবং গুণাগুণ অন্য কাঠের চেয়ে ভালো। শক্তি, স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য অতুলনীয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি সাশ্রয়ী কারণ বার বার কিনতে হয় না।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কিভাবে পরিষ্কার করবো?
নরম কাপড় দিয়ে নিয়মিত ধুলো মুছতে হবে। হালকা স্যাঁতসেঁতে কাপড় ব্যবহার করা যায়। রাসায়নিক ক্লিনার এড়িয়ে চলুন। বছরে একবার ভালো পলিশ করা উচিত। এতে উজ্জ্বলতা বজায় থাকবে।
অনলাইনে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কিনলে কি খেয়াল রাখতে হবে?
বিশ্বস্ত বিক্রেতা থেকে কিনুন। কাস্টমার রিভিউ ভালো করে পড়ুন। রিটার্ন পলিসি দেখে নিন। পণ্য পাওয়ার পর ভালো করে চেক করুন। সম্ভব হলে শোরুম ভিজিট করে দেখে নিন।
সেগুন কাঠ বনাম মেহগনি কাঠ কোনটি ভালো?
সেগুন কাঠ সামগ্রিকভাবে ভালো। এটি পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং আর্দ্রতা সহনশীল। মেহগনি কাঠ সুন্দর কিন্তু পোকায় ধরতে পারে। সেগুন দীর্ঘস্থায়ী এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহজ। দাম প্রায় কাছাকাছি হলেও সেগুনই শ্রেয়।
পুরাতন সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি মেরামত করা যায়?
হ্যাঁ, পুরাতন সেগুন কাঠের ফার্নিচার মেরামত করা সম্ভব। পুরনো পলিশ তুলে নতুন পলিশ করা যায়। ভাঙা অংশ জোড়া লাগানো যায়। অভিজ্ঞ কারিগর দিয়ে মেরামত করালে নতুনের মতো হয়ে যায়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি বাইরে রাখা যায়?
হ্যাঁ, সেগুন কাঠ আর্দ্রতা এবং আবহাওয়া সহনশীল। বারান্দা বা বাগানে রাখা যায়। তবে সরাসরি বৃষ্টি এবং রোদ এড়ানো ভালো। মাঝে মাঝে পলিশ করলে দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। বিশেষ আউটডোর ফিনিশ ব্যবহার করা উচিত।
ঢাকায় সেগুন কাঠের ফার্নিচার কোথায় পাবো?
ঢাকায় মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা এবং পান্থপথে ফার্নিচারের দোকান আছে। বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটেও পাওয়া যায়। অনলাইন শপিং সাইটেও পাবেন। মোবাইলপুর বাজার সবচেয়ে বিখ্যাত।
সেগুন কাঠের ফার্নিচারে কোন ফিনিশ ভালো?
গ্লস ফিনিশ উজ্জ্বল এবং চকচকে দেখায়। ম্যাট ফিনিশ আধুনিক এবং সফট লুক দেয়। সেমি-গ্লস ফিনিশ দুটোর মাঝামাঝি। আপনার পছন্দ এবং ঘরের স্টাইল অনুযায়ী বেছে নিন। সব ফিনিশই সুরক্ষা দেয় এবং সৌন্দর্য বাড়ায়।
কাস্টম সেগুন কাঠের ফার্নিচার বানাতে কত সময় লাগে?
সাধারণত ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। ডিজাইনের জটিলতা অনুযায়ী সময় বাড়তে পারে। কারিগরের কাজের চাপও প্রভাব ফেলে। আগে থেকে অর্ডার দিলে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়। ধৈর্য ধরলে মানসম্পন্ন কাজ পাবেন।
সেগুন কাঠের ফার্নিচারে কি ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়?
অনেক দোকান ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি দেয়। ওয়ারেন্টি সাধারণত স্ট্রাকচারাল ত্রুটির জন্য। কেনার সময় লিখিত ওয়ারেন্টি কার্ড নিতে হবে। শর্তাবলী ভালো করে পড়ে নিন। বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনলে সমস্যা কম হয়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি পরিবেশবান্ধব?
হ্যাঁ, সেগুন কাঠ পরিবেশবান্ধব যদি টেকসই উৎস থেকে নেওয়া হয়। অনেক দেশে সেগুন গাছের চাষ করা হয়। এটি প্রাকৃতিক এবং দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ। বার বার নতুন ফার্নিচার কিনতে হয় না। তাই পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার রঙ করা যায় কি?
হ্যাঁ, চাইলে সেগুন কাঠ রঙ করা যায়। তবে এর প্রাকৃতিক রঙ এত সুন্দর যে রঙের দরকার হয় না। পলিশ করলেই যথেষ্ট। কেউ কেউ সাদা বা কালো রঙ করেন। তবে প্রাকৃতিক ফিনিশই বেশি জনপ্রিয়।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কত ভারী হয়?
সেগুন কাঠ মাঝারি ভারী। একটি ডাবল বেড প্রায় ১০০-১৫০ কেজি। সোফা সেট ১৫০-২৫০ কেজি হতে পারে। এই ওজন মজবুততার লক্ষণ। তবে সরানো কিছুটা কঠিন। তাই প্রয়োজনে সাহায্য নিতে হবে।
বাংলাদেশে সেগুন কাঠ কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেগুন গাছ জন্মে। খুলনা, যশোর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি। সরকারি বন বিভাগ থেকে কাঠ বিক্রি হয়। ব্যক্তিগত বাগান থেকেও পাওয়া যায়। আমদানিকৃত সেগুন কাঠও বাজারে আছে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কেনার আগে কি দেখতে হবে?
কাঠের গ্রেড এবং মান ভালো করে দেখুন। কোনো ফাটল বা দাগ আছে কিনা পরীক্ষা করুন। জয়েন্ট মজবুত কিনা চেক করুন। ফিনিশিং এবং পলিশ মসৃণ কিনা দেখুন। দাম এবং ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার বনাম প্লাইউড ফার্নিচার কোনটি ভালো?
সেগুন কাঠ প্লাইউডের চেয়ে অনেক ভালো। এটি শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। প্লাইউড সস্তা কিন্তু কম টেকসই। আর্দ্রতায় প্লাইউড নষ্ট হয়। সেগুন কাঠ বিনিয়োগ হিসেবে উত্তম। দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
সেগুন কাঠের ফার্নিচারে কি সমস্যা হতে পারে?
সাধারণত খুব কম সমস্যা হয়। ভারী হওয়ায় সরানো কঠিন। দাম বেশি হতে পারে। যত্ন না নিলে পলিশ উঠে যেতে পারে। তবে এসব ছোট সমস্যা। সঠিক যত্নে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
সেগুন কাঠের ফার্নিচার কি ভাড়া বাড়িতে ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, অবশ্যই ব্যবহার করা যায়। তবে ভারী হওয়ায় বার বার স্থানান্তরে অসুবিধা হতে পারে। স্থায়ী ঠিকানা হলে আরও ভালো। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে এটি উপযুক্ত। যেকোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍