
বাংলার ইতিহাস রহস্য আর রোমাঞ্চে ভরপুর। অতীতের পাতায় লুকিয়ে আছে অসংখ্য চমকপ্রদ কাহিনী। আজ আমরা জানব সেই অজানা অধ্যায়ের কথা। যুগ যুগ ধরে বাংলার মাটিতে গড়ে উঠেছে অনেক সভ্যতা। প্রতিটি যুগের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
এই অঞ্চলের ইতিহাস শুধু ঘটনার সমাহার নয়। বরং এটি আমাদের পরিচয়ের অংশ। আমাদের শেকড়ের কথা বলে এই ইতিহাস। অথচ কতটুকুই বা জানি আমরা?
বাংলাদেশের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বহুমুখী। এই ভূখণ্ডে বসবাস করেছে বিভিন্ন জাতি। তাদের সংস্কৃতি মিশে গেছে আমাদের রক্তে।
প্রাচীনকালে এই অঞ্চল পরিচিত ছিল বঙ্গ নামে। সেন বংশের আমল থেকেই শুরু। তারপর এসেছে মুসলিম শাসন। মোগল আমলে বাংলা হয়ে ওঠে সুবাহ বাংলা।
ব্রিটিশ শাসনামলে পরিস্থিতি পাল্টে যায় সম্পূর্ণভাবে। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ বদলে দেয় সব। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ে শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
উনিশ শতকে বাংলায় শুরু হয় নবজাগরণ। রামমোহন রয় থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সবাই কাজ করেছেন সমাজ সংস্কারে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন।
১৯৪৭ সালে ভাগ হয় ভারত। তৈরি হয় পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু শুরু হয় নতুন সংগ্রাম।
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত। প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল কঠিন। কিন্তু বাঙালি জাতি হার মানেনি কখনো।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালির গৌরবের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত থেকে শুরু। পাকিস্তানি বাহিনী চালায় গণহত্যা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আন্দোলনের মূল শক্তি। তার নেতৃত্বেই জেগে ওঠে সমগ্র জাতি। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বলেছিলেন ঐতিহাসিক কথা।
মুক্তিযোদ্ধারা গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করেন হানাদারদের। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অংশ নেন।
মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করে যুদ্ধ। আন্তর্জাতিক সমর্থনও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকার দেয় পূর্ণ সাহায্য।
৩০ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
এই যুদ্ধে বিদেশি সাংবাদিকরাও ভূমিকা রাখেন। তারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন পাকিস্তানিদের বর্বরতা। জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ছিল অন্যতম উদাহরণ।
প্রাচীন সভ্যতা
বাংলার প্রাচীন সভ্যতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। পুণ্ড্র, বঙ্গ, গৌড় নামে পরিচিত ছিল বিভিন্ন অঞ্চল। তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্র।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে বাংলা পৌঁছেছিল শিখরে। শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ ঘটে ব্যাপকভাবে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করত শান্তিতে।
পাল বংশের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ছিল গভীর যোগাযোগ। সোমপুর মহাবিহার ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।
সেন বংশ আনে হিন্দু সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ। জয়দেব রচনা করেন গীতগোবিন্দ। সংস্কৃত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ শুরু হয় তখন।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় আরো অনেক কিছু। মহাস্থানগড়, ময়নামতি, পাহাড়পুর সব জায়গায় আছে প্রাচীন নিদর্শন। এসব স্থান প্রমাণ করে বাংলার সমৃদ্ধ অতীত।
ঐতিহাসিক ঘটনা
বাংলার ইতিহাসে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রতিটি ঘটনা যুগ পরিবর্তনের সাক্ষী। কিছু ঘটনা বদলে দিয়েছে পুরো দিক।
১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির আক্রমণ। মাত্র সতেরো জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে দখল করেন নদীয়া। সেন রাজত্বের অবসান ঘটে।
১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধ ছিল নির্ণায়ক। মীর কাসিম, সিরাজউদ্দৌলার উত্তরাধিকারী হিসেবে যুদ্ধ করেন। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জয়লাভ করে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে বাংলাও অংশ নেয়। বারাসাত, চট্টগ্রামে হয় তীব্র লড়াই। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আজও স্মরণীয়।
স্বদেশী আন্দোলনে বাংলা এগিয়ে থাকে সবচেয়ে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, অরবিন্দ ঘোষ নেতৃত্ব দেন।
ক্ষুদিরাম বোসের ফাঁসি সারা বাংলায় তোলে ঝড়। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি শহীদ হন। তার সাহস আজও অনুপ্রেরণা দেয়।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল মানবিক বিপর্যয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। ব্রিটিশ নীতির কারণেই ঘটে এই ট্র্যাজেডি।
ইতিহাসের ব্যক্তিত্ব
বাংলার ইতিহাসে রয়েছেন অনেক মহান ব্যক্তিত্ব। তাদের অবদান আজও স্মরণীয়। প্রতিটি যুগে এরা দিয়েছেন নেতৃত্ব।
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন স্বাধীন বাংলার সুলতান। তার আমলে বাংলা পৌঁছেছিল সমৃদ্ধির শিখরে। তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন শিল্প-সাহিত্যের।
শেরশাহ সূরি জন্মেছিলেন বাংলায়। তিনি দিল্লি দখল করে প্রতিষ্ঠা করেন সূর সাম্রাজ্য। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেন তিনিই।
সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। মাত্র তেইশ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। পলাশীতে পরাজিত হলেও তার সাহস অনুপ্রেরণাদায়ক।
ফকির মজনু শাহ, সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে কৃষকরা রুখে দাঁড়ায়। দেওয়ান চাঁদ রায়ও ছিলেন এই আন্দোলনের অংশ।
হাজী শরিয়তুল্লাহ শুরু করেন ফরাইজি আন্দোলন। সমাজ সংস্কারে তার ভূমিকা অগ্রণী। তিতুমীর গড়ে তোলেন বাঁশের কেল্লা।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কাব্যে আনেন বিপ্লব। তিনি রচনা করেন মেঘনাদবধ কাব্য। ইউরোপীয় ছন্দে বাংলা কবিতার জন্ম দেন।
বিশ্ব ইতিহাস
বিশ্ব ইতিহাসে বাংলার অবদান কম নয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল সংযুক্ত ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছেছিল বাংলার পণ্য।
চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাং বাংলায় এসেছিলেন। তাদের বিবরণে উঠে এসেছে তৎকালীন বাংলার চিত্র। এই বিবরণগুলো আজও ঐতিহাসিক দলিল।
মধ্যযুগে বাংলা ছিল বিশ্বের প্রধান বস্ত্র রপ্তানিকারক। ঢাকাই মসলিন পৌঁছেছিল ইউরোপের রাজদরবারে। এই সূক্ষ্ম কাপড়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে তিনি প্রথম এশিয়ান নোবেল বিজয়ী। তার কবিতা অনুবাদ হয়েছে বিশ্বের সব ভাষায়।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ আজ বিশ্বমানের দল। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দ্রুত উন্নতি করেছে। মাশরাফি বিন মর্তুজা, শাকিব আল হাসান বিশ্ব তারকা।
বিশ্ব ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে।
ঐতিহাসিক স্থান
বাংলায় রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান। প্রতিটি স্থান বহন করে ভিন্ন কাহিনী। এসব জায়গা দেখলে জানা যায় অতীতের গল্প।
সোনারগাঁও ছিল মধ্যযুগের রাজধানী। ঈসা খাঁর আমলে এখানেই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্র। আজও দেখা যায় সেই আমলের নিদর্শন।
বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন এই মসজিদ। তার স্থাপত্য শৈলী আজও মুগ্ধ করে।
কুমিল্লার ময়নামতি পাহাড়ে রয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। দেব বংশের আমলে নির্মিত এই স্থাপনা। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখানে পেয়েছেন মূল্যবান নিদর্শন।
নওগাঁর পাহাড়পুরে রয়েছে সোমপুর মহাবিহার। এটি ছিল তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে এসে শিক্ষা নিতেন।
লালবাগ কেল্লা মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন। শাহজাদা আজম নির্মাণ শুরু করেছিলেন। আজও এর সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সুন্দরবনে রয়েছে খান জাহান আলীর মাজার। এই অঞ্চল উন্নয়নে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তার নামে রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
ইতিহাসের গৌরব
বাংলার ইতিহাসে রয়েছে অনেক গৌরবময় অধ্যায়। প্রতিটি যুগে বাঙালি দেখিয়েছে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। শিল্প-সাহিত্যে এগিয়ে থেকেছে সবসময়।
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন। এক হাজার বছরের পুরনো এই কাব্যগ্রন্থ। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে উদ্ধার করেন।
মঙ্গল কাব্যের ঐতিহ্য ছিল বাংলার অহংকার। মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল সবই ছিল জনপ্রিয়। এসব কাব্যে রয়েছে সমাজচিত্র।
বাংলা গদ্যের জন্মদাতা রাজা রামমোহন রায়। তিনি প্রথম বাংলায় গদ্য লেখেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধে তার ভূমিকা ঐতিহাসিক।
বাংলা থিয়েটারের পথপ্রদর্শক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি প্রথম মঞ্চনাটক রচনা করেন। শর্মিষ্ঠা নাটকে তিনি দেখান নতুন দিক।
নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব সাহিত্যে আনেন বিপ্লব। তার গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ পৌঁছেছে বিশ্বের কাছে। আজও তার জনপ্রিয়তা অটুট।
সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রে এনেছেন বিশ্বখ্যাতি। তিনি পেয়েছেন অসকার পুরস্কার। তার পথের পাঁচালী আজও প্রশংসিত।
শিক্ষা ও ইতিহাস
বাংলার শিক্ষা ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য। বিভিন্ন যুগে গড়ে উঠেছে বিদ্যাপীঠ।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলার ছিল গভীর সম্পর্ক। অনেক বাঙালি শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে যেতেন। বিনিময়ে আসতেন বিদেশি শিক্ষার্থীরাও।
আধুনিক শিক্ষায় উইলিয়াম কেরি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্থাপন করেন শ্রীরামপুর কলেজ। বাংলা ভাষায় ছাপাখানা চালু করেন।
হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ১৮১৭ সালে। এখান থেকেই শুরু হয় আধুনিক শিক্ষা। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ছিলেন অনুপ্রেরণা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেথুন স্কুল। বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নে তার অবদান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। এটি পূর্ববাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকেই সূচনা হয় ভাষা আন্দোলনের।
বুয়েটের নাম ছিল আগে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ১৯৬২ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হয়। আজও এটি প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।
ইতিহাসের চমকপ্রদ তথ্য
বাংলার ইতিহাসে রয়েছে অনেক চমকপ্রদ তথ্য। কিছু তথ্য জানলে অবাক হতে হয়। আসুন জেনে নিই সেসব রহস্যময় কাহিনী।
ঢাকাই মসলিন এত সূক্ষ্ম ছিল যে একটি আংটির ভেতর দিয়ে যেত পুরো শাড়ি। ইউরোপীয়রা একে বলত “বোনা বাতাস”। কিন্তু এই শিল্প চিরতরে হারিয়ে গেছে।
বাংলায় প্রথম ডাকটিকিট চালু হয় ১৮৫৪ সালে। এতে ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি। চার আনা মূল্যের এই টিকিটটি আজ খুবই দুর্লভ।
কলকাতা ছিল এশিয়ার প্রথম শহর যেখানে মেট্রোরেল চালু হয়। ১৯৮৪ সালে দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত চালু হয় প্রথম পর্যায়। আজও এটি কলকাতার প্রাণ।
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়। পুরোপুরি বাঁশ দিয়ে তৈরি এই দুর্গ। কামানের গোলাও ঠেকিয়ে দিতে পারত।
হাসন রাজা একাধারে ছিলেন কবি, গায়ক ও জমিদার। তার লেখা “কী গো সাধন হইলো না” আজও জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন সিলেটের লালন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা” গাওয়া হয়েছিল গগন হরকরার সুরে। রবীন্দ্রনাথ তার কাছ থেকেই নিয়েছিলেন এই সুর।
বাংলায় চা চাষ শুরু হয় ব্রিটিশদের আমলে। সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চা বাগান। আজ চা বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য।
বাংলাদেশের প্রথম ট্রেন চলেছিল ১৮৬২ সালে। দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত এই রুট। লর্ড লরেন্স উদ্বোধন করেছিলেন এই রেলপথ।
পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিল বিছিন্ন। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করেছে। এর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৮ সালে। এটি বাংলার প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। ব্রিটিশ আমলে এর নাম ছিল জগন্নাথ কলেজ।
বাংলার প্রথম সিনেমা হল চালু হয় ১৯১৮ সালে। কলকাতার ক্রাউন সিনেমায় প্রথম বাংলা সিনেমা প্রদর্শিত হয়। “বিল্বমঙ্গল” ছিল সেই প্রথম ছবি।
উপসংহার
বাংলার ইতিহাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ। প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে বাঙালি জাতি দেখিয়েছে তাদের অসাধারণ ক্ষমতা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের গৌরবের শিখর।
আজকের বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে এই দীর্ঘ ইতিহাসের ভিত্তিতে। প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের শেখায় নতুন কিছু। অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের পথ দেখায় ভবিষ্যতের দিকে।
আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করা দরকার যত্ন সহকারে। নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে হবে এই গৌরবময় ইতিহাস। তবেই আমরা গড়তে পারব সুন্দর ভবিষ্যৎ।
বাংলার ইতিহাস শুধু অতীতের কাহিনী নয়। এটি আমাদের পরিচয়ের অংশ। এই ইতিহাস থেকেই আমরা শক্তি পাই এগিয়ে চলার।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কী?
বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হন। এই ত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
প্রাচীন বাংলায় কোন সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছিল?
প্রাচীন বাংলায় বিকশিত হয়েছিল পুণ্ড্র, বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, সমতট সভ্যতা। এসব অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল উন্নত নগর সভ্যতা। তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল প্রাচীন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। পাল ও সেন বংশের আমলে এই সভ্যতা পৌঁছেছিল চরম উৎকর্ষতায়।
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন কী?
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। এটি রচিত হয়েছিল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপাল থেকে এটি উদ্ধার করেন। চর্যাপদে ছিল ৪৭টি পদ। এই গ্রন্থে বাংলার সামাজিক জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়।
ঢাকাই মসলিন কেন বিখ্যাত ছিল?
ঢাকাই মসলিন ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সূক্ষ্ম কাপড়। এটি এত পাতলা ছিল যে একটি আংটির ভেতর দিয়ে পুরো শাড়ি যেত। ইউরোপীয়রা একে বলত “বোনা বাতাস” বা “সকালের শিশির”। এই কাপড় তৈরি হতো মেঘনা নদীর পাড়ের বিশেষ তুলা থেকে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়।
বাংলার নবজাগরণের প্রধান ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন?
বাংলার নবজাগরণের প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত। রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধে কাজ করেন। বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষা ও বিধবা বিবাহের পক্ষে কাজ করেন। মধুসূদন বাংলা কাব্যে আধুনিকতা আনেন।
বাংলায় কখন থেকে মুসলিম শাসন শুরু হয়?
বাংলায় মুসলিম শাসন শুরু হয় ১২০৪ সালে। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি মাত্র সতেরো জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে দখল করেন নদীয়া। এর ফলে সেন বংশের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর থেকে বাংলায় শুরু হয় সুলতানি আমল।
স্বদেশী আন্দোলনে বাংলার ভূমিকা কী ছিল?
স্বদেশী আন্দোলনে বাংলা এগিয়ে ছিল সবার থেকে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, অরবিন্দ ঘোষ নেতৃত্ব দেন। বয়কট ও স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের ডাক দেওয়া হয়। ক্ষুদিরাম বোস, প্রফুল্ল চাকীর মতো বিপ্লবীরা সশস্ত্র সংগ্রামে নামেন।
বাংলার কোন কোন ঐতিহাসিক স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় আছে?
বাংলার তিনটি স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে। সুন্দরবন, বাগেরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদের শহর এবং পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। বাগেরহাটে রয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। পাহাড়পুরে আছে সোমপুর মহাবিহার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কতগুলো সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল?
মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি সেক্টরের ছিল আলাদা কমান্ডার। ১০ নম্বর সেক্টর ছিল নৌ-কমান্ডো সেক্টর। প্রতিটি সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। এই সংগঠিত যুদ্ধের ফলেই অর্জিত হয় বিজয়।
বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার কে পান?
বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার “গীতাঞ্জলি” কাব্যগ্রন্থের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি প্রথম এশিয়ান যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার লেখা গান দুটি দেশের জাতীয় সংগীত।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍