ফার্ণিচার কেনার আগে যা জানা জরুরি

আধুনিক ঘরের জন্য স্টাইলিশ কাঠের ফার্ণিচার

ঘর সাজানোর সময় ফার্ণিচার নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক ফার্ণিচার আপনার ঘরকে স্বর্গের মতো করতে পারে। অপরদিকে, ভুল নির্বাচন হতে পারে দুঃস্বপ্ন। তাই ফার্ণিচার কেনার আগে কিছু বিষয় জানা অপরিহার্য।

প্রতিটি পরিবারের চাহিদা আলাদা। কারও প্রয়োজন আরামদায়ক সোফা। আবার কেউ খুঁজছেন কার্যকরী ডাইনিং টেবিল। তবে মনে রাখবেন, ফার্ণিচার শুধু দেখতেই সুন্দর হলেই চলবে না। একইসাথে হতে হবে টেকসই এবং ব্যবহারিক।

বাজারে অসংখ্য ফার্ণিচারের দোকান রয়েছে। প্রতিটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। কিন্তু আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পছন্দ করা জরুরি। নতুবা অর্থের অপচয় হবে। সাথে থাকবে হতাশা।

ফার্ণিচার ডিজাইন আইডিয়া

আধুনিক Furniture ডিজাইনে সরলতাই মূল কথা। মিনিমাল ডিজাইনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সোজা লাইন, গোলাকার কোণ এবং চকচকে ফিনিশিং এখন ট্রেন্ড। তবে ক্লাসিক ডিজাইনেরও রয়েছে আলাদা মাধুর্য।

বসার ঘরের জন্য L আকৃতির সোফা খুবই জনপ্রিয়। এটি বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা করে। একইসাথে ঘরকে দেখায় প্রশস্ত। অন্যদিকে শোবার ঘরের জন্য স্টোরেজ বেড আদর্শ। এতে বাড়তি জিনিস রাখার জায়গা পাওয়া যায়।

কফি টেবিলে গ্লাস টপ ব্যবহার করলে ঘর দেখায় আরো আকর্ষণীয়। আর কাঠের সাথে মেটালের মিশ্রণ দেয় আধুনিক চেহারা। তবে ডিজাইন নির্বাচনের সময় ঘরের আকার মাথায় রাখুন।

লোকাল Furniture দোকান

লোকাল Furniture দোকানে কেনাকাটার রয়েছে বিশেষ সুবিধা। প্রথমত, দাম তুলনামূলক কম হয়। দ্বিতীয়ত, কাস্টমাইজেশনের সুযোগ থাকে। আপনি চাইলে নিজের পছন্দমতো ডিজাইন করাতে পারেন।

স্থানীয় কারিগররা বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। তাদের হাতের কাজে থাকে দক্ষতার ছোঁয়া। তারা জানেন কোন কাঠ কতদিন টিকবে। কোন রঙ সহজে নষ্ট হবে না।

তবে লোকাল দোকানে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য নিয়ে যাবেন। কোন দোকানের সুনাম ভালো? কার কাজের গুণমান উন্নত? এসব জেনে তবে কেনাকাটা করুন। নতুবা পরে আফসোস করতে হবে।

ফার্ণিচার রঙের মিল

ফার্ণিচারের রঙ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভুল হয়। অনেকে মনের খুশিতে যেকোনো রঙ বেছে নেন। কিন্তু রঙের সাথে ঘরের দেয়াল, ফ্লোরিং এবং পর্দার মিল থাকা জরুরি।

নিউট্রাল রঙ সবসময় নিরাপদ। সাদা, ক্রিম, বেইজ এবং হালকা ধূসর রঙ যেকোনো পরিবেশে মানায়। এই রঙের Furniture অন্যান্য জিনিসের সাথে সহজে মিলে যায়। পরে যদি ঘর নতুন করে সাজান তাহলেও সমস্যা হবে না।

তবে একটু বোল্ড হতে চাইলে একটি টুকরো আলাদা রঙের ব্যবহার করতে পারেন। যেমন নেভি ব্লু সোফা বা মেরুন রঙের চেয়ার। কিন্তু সবকিছু একসাথে রঙিন করবেন না। তাহলে ঘর দেখাবে বিশৃঙ্খল।

আধুনিক ঘরের Furniture

আজকাল মানুষ ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন। তাই আধুনিক Furniture হতে হবে মাল্টি-ফাংশনাল। একটি জিনিস একাধিক কাজে লাগবে। যেমন অটোমান যা একইসাথে সিট এবং স্টোরেজ।

ফোল্ডেবল Furniture আধুনিক জীবনের চাহিদা। ডাইনিং টেবিল যা প্রয়োজনে ছোট হয়ে যায়। চেয়ার যা ভাঁজ করে রাখা যায়। এতে জায়গার সাশ্রয় হয়।

Furniture বানানোর উপকরণ

Furniture বানানোর উপকরণ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাকৃতিক কাঠের চেয়ে ভালো কিছু নেই। সেগুন, মেহগনি এবং ওক খুবই টেকসই। এগুলো বছরের পর বছর টিকে থাকে।

তবে প্রাকৃতিক কাঠের দাম বেশি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই বিকল্প হিসেবে এমডিএফ বোর্ড ব্যবহার করা হয়। এটি সাশ্রয়ী কিন্তু টেকসইও।

মেটালের ব্যবহারও বাড়ছে ফার্ণিচারে। স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি চেয়ার-টেবিল দীর্ঘস্থায়ী হয়। একইসাথে রক্ষণাবেক্ষণ কম লাগে। তবে কাঠের মতো উষ্ণতা পাওয়া যায় না।

বাজেট Furniture কেনা

বাজেট কম হলেও ভালো Furniture কেনা সম্ভব। প্রথমে একটি তালিকা তৈরি করুন। কোন জিনিসটা সবচেয়ে জরুরি? সেটা আগে কিনুন। বাকিগুলো ধীরে ধীরে সংগ্রহ করুন।

সেকেন্ড হ্যান্ড Furniture ও বিবেচনা করতে পারেন। ভালো ব্র্যান্ডের পুরনো ফার্ণিচার নতুনের চেয়ে ভালো হতে পারে। শুধু একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন।

সেল এবং ছাড়ের সময় কেনাকাটা করুন। বড় দিন, ঈদ কিংবা পূজার সময় বেশিরভাগ দোকানেই ছাড় থাকে। এ সময় ভালো ফার্ণিচার কম দামে পাওয়া যায়। তবে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।

Furniture কেয়ার টিপস

Furniture কিনলেই শেষ নয়। সঠিক যত্ন নিতে হবে। নতুবা শীঘ্রই নষ্ট হয়ে যাবে। কাঠের ফার্ণিচারে মাসে একবার পলিশ করুন। এতে চকচকে ভাব বজায় থাকবে।

রোদ এবং বৃষ্টির সরাসরি আঘাত থেকে Furniture রক্ষা করুন। কাঠ ফাটতে পারে। রঙ উড়ে যেতে পারে। তাই জানালার পাশে ফার্ণিচার রাখার সময় সাবধান হোন।

পানি পড়লে সাথে সাথে মুছে ফেলুন। বিশেষ করে কাঠের ওপর পানির দাগ পড়ে গেলে তুলতে কষ্ট হয়। গরম জিনিস সরাসরি ফার্ণিচারের ওপর রাখবেন না। প্যাড ব্যবহার করুন।

ঘরের মাপ অনুযায়ী Furniture

ঘরের মাপ না নিয়ে Furniture কেনা বড় ভুল। অনেকে শুধু পছন্দের জিনিস কিনে আনেন। পরে দেখা যায় ঘরে ঢুকছে না। অথবা ঘর ভর্তি হয়ে গেছে।

প্রতিটি কোণের মাপ নিয়ে রাখুন। কোথায় কোন Furniture বসবে তার একটি ড্রইং তৈরি করুন। এতে সহজ হবে কেনাকাটা। ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

ছোট ঘরের জন্য হালকা রঙের Furniture নির্বাচন করুন। গাঢ় রঙ ঘর আরো ছোট দেখায়। একইভাবে বড় ঘরে একটু ভারী Furniture রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন চলাফেরার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে।

পুরাতন Furniture নতুনভাবে সাজানো

পুরাতন Furniture ফেলে দেওয়ার দরকার নেই। একটু কৌশলে সেগুলোকে নতুন করে তোলা যায়। রি-ডেকোরেশনের মাধ্যমে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব।

পুরনো চেয়ারের কুশন বদলে নিন। নতুন কভার দিন। সাথে সাথে দেখবেন নতুন মতো লাগছে। কাঠের Furniture এ নতুন পলিশ দিতে পারেন। অথবা সম্পূর্ণ রঙ বদলে ফেলুন।

পেইন্ট দিয়ে পুরনো Furniture এ নতুন প্যাটার্ন তৈরি করা যায়। স্টেনসিল ব্যবহার করে সুন্দর ডিজাইন করুন। একইসাথে ব্যবহার করতে পারেন স্টিকার। এতে খরচ কম কিন্তু রেজাল্ট চমৎকার।

হাতের তৈরি Furniture

হাতের তৈরি Furniture এর আলাদা মূল্য আছে। মেশিনে তৈরি ফার্ণিচারের চেয়ে এগুলো বেশি টেকসই। প্রতিটি টুকরোতে কারিগরের ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে।

দেশীয় কারিগররা বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করেন। তাদের হাতে তৈরি ফার্ণিচারে থাকে অনন্যতা। একই ডিজাইনের দুটি পিস একেবারে এক হয় না। এটাই হাতের কাজের বিশেষত্ব।

তবে হাতের তৈরি Furniture কিনতে একটু বেশি সময় লাগে। কারিগর ধীরে ধীরে কাজ করেন। কিন্তু ধৈর্য রাখার মতো ফলাফল পাবেন। আর দাম? মেশিনের তৈরি থেকে হয়তো একটু বেশি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।

উপসংহার

ফার্ণিচার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। একবার কিনলে অনেক বছর ব্যবহার করতে হয়। তাই তাড়াহুড়া না করে ভেবেচিন্তে কিনুন। আপনার প্রয়োজন, বাজেট এবং ঘরের সাথে মিল রেখে পছন্দ করুন।

মনে রাখবেন, দামী মানেই সবসময় ভালো নয়। আবার সস্তার প্রতি লোভ দেখিয়ে নিম্নমানের জিনিস কিনবেন না। গুণমান এবং টেকসইতার দিকে নজর দিন। সঠিক যত্ন নিলে ভালো ফার্ণিচার প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ফার্ণিচার আপনার জীবনযাত্রার মান বাড়াতে হবে। শুধু দেখতে সুন্দর হলেই চলবে না। ব্যবহারিক এবং আরামদায়ক হতে হবে। তবেই আপনার বিনিয়োগ সফল হবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

Furniture কেনার সবচেয়ে ভালো সময় কোনটি?

উৎসবের সময় সবচেয়ে ভালো ডিল পাওয়া যায়। ঈদ, দুর্গাপূজা এবং বর্ষা মৌসুমে বেশির ভাগ দোকানে ছাড় থাকে। এ সময় ভালো মানের ফার্ণিচার কম দামে কেনা সম্ভব।

কাঠের চেয়ার নাকি প্ল্যাস্টিকের চেয়ার ভালো?

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য কাঠের চেয়ার ভালো। এটি টেকসই এবং আরামদায়ক। তবে প্ল্যাস্টিকের চেয়ার হালকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ কম লাগে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিন।

Furniture এর ওয়ারেন্টি কতদিনের হওয়া উচিত?

ভালো ব্র্যান্ডের Furniture এ কমপক্ষে ১ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। কাঠের ফার্ণিচারে ২-৫ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। ওয়ারেন্টি কার্ড সংরক্ষণ করুন।

ছোট ঘরের জন্য কোন ধরনের Furniture উপযুক্ত?

ছোট ঘরের জন্য মাল্টি-পারপাস Furniture আদর্শ। স্টোরেজ বেড, ফোল্ডেবল টেবিল এবং নেস্টিং চেয়ার ব্যবহার করুন। হালকা রঙের ফার্ণিচার বেছে নিন।

Furniture পরিষ্কার করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

নরম কাপড় এবং হালকা পরিষ্কারক ব্যবহার করুন। কাঠের Furniture এ পানি কম দিন। মাসে একবার ফার্ণিচার পলিশ করুন। কড়া রাসায়নিক এড়িয়ে চলুন।

অনলাইনে Furniture কেনা কি নিরাপদ?

বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে কিনলে নিরাপদ। রিভিউ পড়ুন এবং রিটার্ন পলিসি দেখুন। সম্ভব হলে শোরুমে গিয়ে দেখে নিন। ডেলিভারি এবং ইনস্টলেশনের বিষয়ে স্পষ্ট করুন।

সেগুন কাঠের Furniture কি এখনো ভালো বিকল্প?

হ্যাঁ, সেগুন কাঠ এখনো সেরা পছন্দ। এটি পানি প্রতিরোধী এবং পোকামাকড় সহনশীল। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেকে শিশম বা গামারি কাঠ বেছে নেন।

ফার্ণিচারের রঙ ফিকে হয়ে গেলে কী করব?

প্রথমে ভালো করে পরিষ্কার করুন। তারপর সেম রঙের পেইন্ট দিয়ে টাচ আপ করুন। সম্পূর্ণ নতুন রঙ করতে চাইলে পেশাদার সাহায্য নিন।

শীতকালে কাঠের ফার্ণিচারের বিশেষ যত্ন লাগে?

শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। তাই কাঠ ফাটতে পারে। নিয়মিত পলিশ করুন এবং হিটারের কাছে রাখবেন না। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।

বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ ফার্ণিচার কেমন হওয়া উচিত?

ধারালো কোণ এড়িয়ে চলুন। গোলাকার প্রান্তের ফার্ণিচার বেছে নিন। বিষাক্ত পেইন্ট ব্যবহার করা ফার্ণিচার কিনবেন না। স্থির এবং ভারী ফার্ণিচার নির্বাচন করুন।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top