ইসলামের ভিত্তি : ইসলামী জীবনের ৫টি মূল স্তম্ভ

ইসলামের ভিত্তি এর উপর একজন মুসলিম পুরুষ নামাজ আদায় করছেন

ইসলাম ধর্মের মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভের উপর। ইসলামের ভিত্তি হলো এই পাঁচটি মৌলিক নীতি। প্রতিটি মুসলমান এই স্তম্ভগুলো পালন করে তার ধর্মীয় জীবনকে পূর্ণতা দান করে। এই স্তম্ভগুলো শুধু ধর্মীয় আচার নয়। বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

মুসলিম জীবনে ইসলামের ভিত্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পাঁচটি স্তম্ভ একজন মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। সাথে সাথে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করে। আজকের যুগে এই মূল্যবোধগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ

ইসলামের ভিত্তি হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ। এগুলো হচ্ছে: কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ এবং যাকাত। প্রতিটি স্তম্ভ ইসলামের ভিত্তি মজবুত করে তোলে। একটি স্তম্ভ ছাড়া অন্যগুলো অসম্পূর্ণ।

কালিমা তাইয়্যেবা হলো ইসলামের প্রথম স্তম্ভ। এটি মুসলমানদের ঈমানের ভিত্তি। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” – এই কালিমা উচ্চারণ করেই একজন ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে। এই স্তম্ভটি মুসলমানদের একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করে।

নামাজ হলো দ্বিতীয় স্তম্ভ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একজন মুসলমানকে আল্লাহর সাথে সংযুক্ত রাখে। এই স্তম্ভটি শুধু উপাসনা নয়। বরং মানসিক শান্তি ও আত্মিক পরিশুদ্ধতা আনে।

রোজা বা সাওম তৃতীয় স্তম্ভ। রমজান মাসে একমাস রোজা রাখা ফরজ। এই স্তম্ভটি আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। পাশাপাশি দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করতে সাহায্য করে।

যাকাত চতুর্থ স্তম্ভ। নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিকদের জন্য যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। এই স্তম্ভটি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।

হজ পঞ্চম স্তম্ভ। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করতে হয়। এই স্তম্ভটি বিশ্বের সকল মুসলমানদের একত্রিত করে। ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে।

ইসলামী জীবনধারা

ইসলামী জীবনধারা হলো একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা। এটি শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইসলামের ভিত্তি অনুসরণ করে একজন মুসলমান তার সম্পূর্ণ জীবন পরিচালনা করে।

ইসলামী জীবনধারা মানুষকে নৈতিক মূল্যবোধ শেখায়। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া ও করুণা এর মূল বৈশিষ্ট্য। এই জীবনধারা ব্যক্তিগত জীবনে যেমন শান্তি আনে, তেমনি সামাজিক জীবনে হয় কল্যাণকর।

ইসলামের ভিত্তি পারিবারিক জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করে। সন্তানদের সুশিক্ষা ও আদর্শ চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। বাবা-মায়ের সেবায় উৎসাহিত করে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলামী জীবনধারা স্বচ্ছতা ও সততার নির্দেশ দেয়। সুদ, ঘুষ ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে বলে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ন্যায্য লেনদেনের পথ দেখায়।

শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামী জীবনধারা জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করে। “ইকরা” বা পড়ো – এই নির্দেশনা দিয়েই কুরআন শুরু। জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।

সামাজিক জীবনে ইসলামী জীবনধারা প্রতিবেশীর প্রতি যত্নশীল হতে বলে। দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করতে উৎসাহিত করে। বিচার-আচারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।

ইসলামের মূল শিক্ষা

ইসলামের মূল শিক্ষা হলো একত্ববাদ বা তাওহীদ। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় – এই বিশ্বাস ইসলামের ভিত্তি। এই শিক্ষা মানুষকে একমাত্র আল্লাহর দাসত্বে নিয়োজিত রাখে। অন্য কোনো শক্তির সামনে মাথা নত করতে নিষেধ করে।

ইসলামের মূল শিক্ষা মানুষের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলে। জাতি, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিই হলো শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি।

ন্যায়বিচার ইসলামের মূল শিক্ষার অন্যতম দিক। কোনো অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার হওয়া প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। শাসক হোক বা প্রজা – সকলের জন্য একই আইন প্রযোজ্য।

দয়া ও করুণা ইসলামের মূল শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের প্রতি, এমনকি পশু-পাখির প্রতিও দয়া দেখানো ইসলামের নির্দেশ। কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা ইসলামের মূল নীতি।

পরিবেশ রক্ষা ইসলামের মূল শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবন যাপন করা ইসলামের নির্দেশ। বৃক্ষরোপণ, পানি সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

ইসলামের ভিত্তি মানুষকে সংযমী হতে বলে। অপচয় ও অমিতাচার থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। সাদাসিধে জীবনযাপনে উৎসাহিত করে।

নামাজ রোজা হজ যাকাত

নামাজ রোজা হজ যাকাত – এই চারটি স্তম্ভ ইসলামের ভিত্তি শক্তিশালী করে। প্রতিটি ইবাদতের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব। এগুলো একসাথে মুসলমানদের আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি সাধন করে।

নামাজ হলো আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জীবনে শৃঙ্খলা আনে। ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা – এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ পড়ার সময় মুসলমানরা দুনিয়ার সকল চিন্তা ভুলে যায়। একাগ্রতার সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।

রোজা বা সাওম হলো আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা। এই সময়ে শুধু খাদ্য গ্রহণ নয়, সকল প্রকার পাপ কাজ থেকেও দূরে থাকতে হয়। রোজা ধৈর্য ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করার সুযোগ দেয়।

হজ হলো জীবনের সর্বোচ্চ আত্মিক অভিজ্ঞতা। মক্কা শরীফে কাবা ঘর জিয়ারত করে এই ইবাদত পালন করা হয়। হজের সময় বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে মুসলমানরা একত্রিত হয়। সবাই একই পোশাক পরে, একই স্থানে একসাথে ইবাদত করে। এতে মুসলিম উম্মাহর একতা প্রকাশ পায়।

যাকাত হলো ধনী ব্যক্তিদের জন্য বাধ্যতামূলক দান। প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের উপর যাকাত প্রদান করতে হয়। এই অর্থ দরিদ্র ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। যাকাত সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে। ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমায়।

মুসলমানের কর্তব্য

মুসলমানের কর্তব্য শুধু ধর্মীয় ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলামের ভিত্তি অনুসরণ করে একজন মুসলমান সমাজের কল্যাণে কাজ করে। আল্লাহর হক ও বান্দার হক – উভয়ই আদায় করা মুসলমানের দায়িত্ব।

আল্লাহর ইবাদত করা প্রতিটি মুসলমানের প্রথম কর্তব্য। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত নিয়মিত পালন করা। কুরআন তেলাওয়াত করা ও হাদিস অধ্যয়ন করা। আল্লাহর গুণগান করা ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পিতা-মাতার সেবা করা মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। কুরআনে আল্লাহর পরেই বাবা-মায়ের কথা এসেছে। তাদের সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করা। বৃদ্ধ বয়সে তাদের যত্ন নেওয়া।

আত্মীয়স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা মুসলমানের কর্তব্য। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে ইসলাম বিশেষ তাগিদ দিয়েছে। তাদের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো।

প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন করা মুসলমানের কর্তব্য। প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম – সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা। তাদের বিপদে সাহায্য করা। কষ্ট না দেওয়া।

সমাজের দুর্বল ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো মুসলমানের কর্তব্য। এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ ও রোগীদের সেবা করা। দরিদ্রদের সাহায্য করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

পরিবেশ রক্ষা করা মুসলমানের কর্তব্য। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবন যাপন করা। বৃক্ষরোপণ করা। পানি অপচয় না করা। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।

শিক্ষা অর্জন করা ও জ্ঞান বিতরণ করা মুসলমানের কর্তব্য। নিজে শিখে অন্যদের শেখানো। সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন

ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। এগুলো মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য। ইসলামের ভিত্তি অনুসরণ করে এই নিয়মকানুন মানুষের কল্যাণে প্রণীত।

ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন অত্যন্ত সুন্দর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সততা ও নৈতিকতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। মিথ্যা বলা, প্রতারণা ও চুরি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পারিবারিক জীবনে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন ভালোবাসা ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিবাহের মাধ্যমে পারিবারিক জীবন শুরু করা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ। সন্তানদের শিক্ষা ও লালন-পালনের দিকনির্দেশনা।

খাদ্যাভ্যাসে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পথ দেখায়। হালাল খাদ্য গ্রহণ ও হারাম খাদ্য পরিহার করা। শূকরের মাংস ও মদপান নিষিদ্ধ। পরিমিত খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা।

ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। সুদভিত্তিক লেনদেন নিষিদ্ধ। প্রতারণা ও মজুতদারি থেকে বিরত থাকা। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান।

ইসলামের ভিত্তি সামাজিক জীবনে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সবার সাথে সমান আচরণ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা।

বিচার ও শাসনে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। ধনী-গরিব, শাসক-প্রজা নির্বিশেষে সবার জন্য একই আইন। প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত না করা।

যুদ্ধ ও শান্তিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন মানবিকতার চরম নিদর্শন। আত্মরক্ষা ছাড়া যুদ্ধ না করা। যুদ্ধের সময়ও নিরীহ মানুষ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা না করা। গাছপালা ও ফসল নষ্ট না করা।

উপসংহার

ইসলামের ভিত্তি হলো পাঁচটি মূল স্তম্ভ যা মুসলমানদের জীবনে দিকনির্দেশনা দেয়। কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত – এই পাঁচটি স্তম্ভ একসাথে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্রতিটি স্তম্ভের রয়েছে নিজস্ব গুরুত্ব ও তাৎপর্য।

এই স্তম্ভগুলো শুধু ধর্মীয় আচার নয়। বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। একজন মুসলমান যখন এই স্তম্ভগুলো যথাযথভাবে পালন করে, তখন তার জীবনে আসে শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আজকের বিশ্বে যখন মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত, তখন ইসলামের ভিত্তি অনুসরণ করে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন শান্তি আসে, তেমনি সামাজিক জীবনেও প্রতিষ্ঠিত হয় সুখ ও কল্যাণ।

ইসলামের ভিত্তি তথা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ মানুষকে একসাথে আল্লাহর ইবাদত ও মানুষের খেদমত করতে শেখায়। এই ভারসাম্য রক্ষা করেই একজন মুসলমান হতে পারে সত্যিকারের মুমিন। তাই আমাদের উচিত এই স্তম্ভগুলোকে সঠিকভাবে বুঝে জীবনে প্রয়োগ করা।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি কী কী?

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ হলো: কালিমা তাইয়্যেবা, নামাজ, রোজা, হজ এবং যাকাত। এই পাঁচটি স্তম্ভ একসাথে ইসলামের ভিত্তি গঠন করে। প্রতিটি মুসলমানের জন্য এগুলো পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কালিমা তাইয়্যেবা কী?

কালিমা তাইয়্যেবা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। এর অর্থ হলো “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল”। এই কালিমা উচ্চারণ করেই একজন ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে।

নামাজ কতবার পড়তে হয়?

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয়। এগুলো হলো: ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। প্রতিটি নামাজের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সময়মতো নামাজ আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।

রোজা কখন রাখতে হয়?

রমজান মাসে একমাস রোজা রাখা ফরজ। এই সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। রোজা আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের উপায়।

হজ কাদের জন্য ফরজ?

যাদের শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তাদের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। হজ করতে হলে মক্কা শরীফে যেতে হয়। এই ইবাদত মুসলমানদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করে।

যাকাত কী ও কাদের দিতে হয়?

যাকাত হলো ধনীদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ যা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাদের প্রতিবছর যাকাত দিতে হয়। এটি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।

ইসলামী জীবনধারার মূল বৈশিষ্ট্য কী?

ইসলামী জীবনধারার মূল বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর আনুগত্য করা। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া ও করুণা দেখানো। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। হালাল উপার্জন ও হারাম থেকে বিরত থাকা।

মুসলমানদের প্রধান কর্তব্য কী কী?

মুসলমানদের প্রধান কর্তব্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। পিতা-মাতার সেবা করা। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। দুর্বল ও অসহায়দের সাহায্য করা। জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করা।

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু?

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অসীম। কুরআনের প্রথম আয়াতই “ইকরা” বা পড়ো দিয়ে শুরু। জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ। শিক্ষা মানুষকে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি দেয় এবং সভ্যতার বিকাশ ঘটায়।

ইসলামের মূল বাণী কী?

ইসলামের মূল বাণী হলো শান্তি। ইসলাম শব্দের অর্থই হলো শান্তি। এই ধর্ম মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। সকল মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে।

ইসলামে নারীদের অধিকার কী?

ইসলাম নারীদের পূর্ণ সম্মান ও অধিকার দিয়েছে। শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। স্ত্রী, মা ও কন্যা হিসেবে তাদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

ইসলামে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব কী?

ইসলামে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবন যাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃক্ষরোপণ, পানি সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইসলামের শিক্ষা। অপচয় ও দূষণ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করা হয়।

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম কী?

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা ও স্বচ্ছতা বাধ্যতামূলক। সুদ, ঘুষ ও প্রতারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করা। মজুতদারি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি থেকে বিরত থাকা।

ইসলামী সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কী?

ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো সাম্য ও ন্যায়বিচার। জাতি, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান অধিকার ভোগ করে। ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা। পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা।

কেন ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি ই যথেষ্ট?

ইসলামের ভিত্ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলে। কালিমা ঈমানের ভিত্তি তৈরি করে। নামাজ আল্লাহর সাথে সংযোগ রক্ষা করে। রোজা আত্মশুদ্ধি করে। যাকাত সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে। হজ বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এই পাঁচটি স্তম্ভ মিলে একজন মানুষের সম্পূর্ণ বিকাশ সাধন করে।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top