রান্না করা কি আপনার কাছে খুব কঠিন মনে হয়? চিন্তার কোন কারণ নেই! আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব সহজ বাংলা রেসিপি যা ঘরে বসেই তৈরি করতে পারবেন। এই রেসিপিগুলো এত সহজ যে যে কেউ অনায়াসে রান্না করতে পারবে।
বাংলা খাবারের স্বাদ পৃথিবীতে অন্যরকম। আমাদের মায়েরা যেভাবে রান্না করেন, সেই ধরনের খাবার ঘরে বানানোর সহজ উপায় জানা খুবই দরকার। সহজ বাংলা রেসিপি জানলে আপনি কম সময়ে, কম খরচে পুরো পরিবারের জন্য সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে পারবেন।
ঘরোয়া রান্নার রেসিপি

ঘরোয়া রান্নার রেসিপি বলতে বোঝায় সেই সব খাবার যা আমরা বাড়িতে সাধারণত খাই। এই ধরনের রান্নায় তেমন কোন জটিল পদ্ধতি নেই। সাধারণ মসলা দিয়ে, সহজ উপায়ে এই খাবারগুলো তৈরি করা যায়।
ঘরোয়া রান্নার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি স্বাস্থ্যকর হয়। বাইরের খাবারের চেয়ে ঘরের খাবার সবসময় ভাল। আমাদের দাদি-নানিদের হাতের রান্নার মত স্বাদ পেতে চাইলে ঘরোয়া রান্নার কোন বিকল্প নেই।
বাঙালি পরিবারে ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ এগুলো প্রতিদিনের খাবার। এই খাবারগুলো সহজ পদ্ধতিতে রান্না করে পরিবারের সবাইকে খুশি করা সম্ভব। ঘরোয়া রান্নার রেসিপি জানলে আপনি কখনো খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকবেন না।
ঝটপট রান্নার আইডিয়া
ব্যস্ততার জুগে সবার কাছেই সময়ের অভাব। তাই ঝটপট রান্নার আইডিয়া জানা দরকার। এমন কিছু রেসিপি আছে যা খুব কম সময়ে তৈরি করা যায় কিন্তু স্বাদে ভরপুর থাকে।
ভাজা ভাত, ডিম ভাজি, সবজি ভাজি এগুলো ঝটপট তৈরি করা যায়। এছাড়া নুডলস, পাস্তা, ফ্রাইড রাইস এগুলোও খুব তাড়াতাড়ি রান্না করা যায়। মাত্র ১৫-২০ মিনিটে এসব খাবার তৈরি হয়ে যায়।
ঝটপট রান্নার জন্য আগে থেকে কিছু উপকরণ প্রস্তুত রাখতে পারেন। পেঁয়াজ কাটা, মসলা বাটা, সবজি ধোয়া এগুলো আগে করে রাখলে রান্নার সময় অনেক কমে যায়। এভাবে সময় বাঁচিয়ে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে পারবেন।
ভাতের সঙ্গে সহজ তরকারি
বাঙালির প্রধান খাবার ভাত। ভাতের সাথে তরকারি না হলে খাবারই জমে না। সহজ তরকারি রান্না করার অনেক উপায় আছে যা সবাই জানতে পারেন।
সহজ আলু তরকারি বলতে গেলে সবচেয়ে সহজ। আলু কেটে পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে নিন। তারপর একটু জল দিয়ে নুন, হলুদ দিয়ে রান্না করলেই হয়ে গেল। এর সাথে একটু ধনে পাতা দিলে স্বাদ আরো বাড়বে।
- আলু সিদ্ধ করে নিন আগে
- পেঁয়াজ কুচি করে ভাজুন তেলে
- হলুদ, নুন, মরিচের গুঁড়া দিন
- সিদ্ধ আলু দিয়ে নাড়াচাড়া করুন
- ৫ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন
বেগুন ভর্তা, লাউ ভাজি, পটল ভাজি এই সব তরকারি খুব সহজেই তৈরি করা যায়। এগুলো ভাতের সাথে খেতে বেশ মজাই লাগে।
কম খরচে রান্নার টিপস
টাকার অভাবে যেন খাবারে কমতি না থাকে, সেজন্য কম খরচে রান্নার টিপস জেনে রাখা ভাল। বাজার করার সময় দাম দেখে শুনে কিনুন। সবসময় দামি মাল কিনতে হবে এমন কোন কথা নেই।
ডাল, চাল, আলু, পেঁয়াজ এগুলো মূল খাবার। এই কয়েকটা জিনিস দিয়েই অনেক রকম খাবার তৈরি করা সম্ভব। ডাল ভাত দিয়ে খিচুড়ি, আলু পেঁয়াজ দিয়ে আলুর দম, এগুলো কম খরচে পেট ভর্তি খাবার।
মৌসুমি সবজি কিনুন বেশি করে। এ সময় দাম কম থাকে আবার পুষ্টিগুণও ভাল থাকে। বাজারের শেষের দিকে গেলে সবজির দাম কম পাবেন। বেশি পরিমাণে কিনে সংরক্ষণ করে রাখুন।
খাবার | খরচ | সময় | পুষ্টি |
খিচুড়ি | ৫০ টাকা | ৩০ মিনিট | উচ্চ |
ডাল ভাত | ৪০ টাকা | ২৫ মিনিট | মাধ্যম |
সবজি ভাজি | ৩০ টাকা | ১৫ মিনিট | উচ্চ |
ডিম ভাজি | ২৫ টাকা | ১০ মিনিট | উচ্চ |
ব্যস্ত মানুষের জন্য রেসিপি
আজকালকার ব্যস্ত জীবনে সবার সময়ের অভাব। কাজের চাপে রান্না করার সময়ই পাওয়া যায় না। তাই ব্যস্ত মানুষের জন্য রেসিপি জানা খুবই দরকার।
সকালে উঠে তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে অফিস যেতে হয়। এর জন্য পরোটা, ডিম ভাজি, চা এগুলো খুব তাড়াতাড়ি তৈরি করা যায়। রাতে আগে থেকে ময়দা মেখে রাখলে সকালে শুধু পরোটা বানালেই হবে।
অফিস থেকে ফিরে দেরিতে রান্না করতে হয়। এ সময় সহজ খিচুড়ি, ভাজা ভাত, নুডলস এগুলো তৈরি করা যায়। এতে সময় কম লাগে আবার পেট ভরেও যায়। ব্যস্ত মানুষের জন্য এই রেসিপিগুলো খুবই কার্যকর।
সহজ ডাল রান্নার উপায়
ডাল আমাদের প্রিয় একটি খাবার। প্রায় সব বাঙালি বাড়িতে রোজ ডাল রান্না হয়। সহজ ডাল রান্নার উপায় জানলে আপনি ঘরে বসেই হোটেলের মত স্বাদের ডাল তৈরি করতে পারবেন।
মুগ ডাল সবচেয়ে সহজ রান্না করা যায়। ডাল ধুয়ে পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন। পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, হলুদ, নুন দিয়ে ভাল করে নাড়ুন। ১৫ মিনিট রান্না করলেই হয়ে যাবে।
মসুর ডাল, অড়হর ডাল, ছোলার ডাল এগুলোও একইভাবে রান্না করা যায়। ডাল সিদ্ধ করার সময় একটু তেল দিয়ে দিলে ভাল হয়। এতে ডাল তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় আবার স্বাদও ভাল হয়।
- ডাল পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন
- ডাবল পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন
- পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভেজে নিন
- সিদ্ধ ডালে মসলা দিয়ে মেশান
- ১০ মিনিট নাড়তে থাকুন
- ধনে পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন
ডিম দিয়ে বাংলা রেসিপি
ডিম একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাবার। ডিম দিয়ে বাংলা রেসিপি বানানো খুবই সহজ। ডিম ভাজি থেকে শুরু করে ডিমের কারি পর্যন্ত অনেক রকম খাবার বানানো যায়।
ডিম ভাজি সবচেয়ে সহজ। কড়াইয়ে তেল গরম করে ডিম ফেটে দিন। নুন মরিচ দিয়ে দুই দিক ভেজে নিন। এর সাথে ভাত খেলে খুবই মজা লাগে। আবার পরোটার সাথেও খাওয়া যায়।
ডিমের কারি বানাতে চাইলে আগে ডিম সিদ্ধ করে নিন। তারপর পেঁয়াজ, টমেটো, আদা রসুন বাটা দিয়ে মসলা তৈরি করুন। সিদ্ধ ডিম দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করলেই তৈরি হয়ে যাবে। এই কারি ভাতের সাথে খুবই মজাদার।
মাছ রান্নার সহজ কৌশল
বাঙালির প্রিয় খাবার মাছ। মাছ ছাড়া বাঙালির খাবার চিন্তাই করা যায় না। মাছ রান্নার সহজ কৌশল জানলে আপনি ঘরে বসেই রেস্টুরেন্টের মত মাছ রান্না করতে পারবেন।
রুই মাছের কালিয়া খুবই সহজ। মাছ কেটে হলুদ নুন মাখিয়ে রাখুন। তেলে ভেজে তুলে নিন। একই তেলে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টমেটো দিয়ে মসলা করুন। ভাজা মাছ দিয়ে পানি দিয়ে ১৫ মিনিট রান্না করুন।
ইলিশ মাছের ঝোল বাঙালির খুবই প্রিয় খাবার। ইলিশ মাছে কাঁটা বেশি তাই সাবধানে কাটতে হয়। হলুদ নুন দিয়ে ভেজে নিন। পেঁয়াজ কুচি, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া দিয়ে ঝোল তৈরি করুন। মাছ দিয়ে হালকা আঁচে ১০ মিনিত রান্না করলেই হবে।
মাছের নাম | রান্নার সময় | মসলা | দাম |
রুই | ২৫ মিনিট | মধ্যম | ৩০০ টাকা |
কাতলা | ৩০ মিনিট | কম | ২৫০ টাকা |
ইলিশ | ২০ মিনিট | বেশি | ৮০০ টাকা |
পাঙ্গাশ | ১৫ মিনিট | কম | ২০০ টাকা |
নিরামিষ রান্নার রেসিপি
অনেকেই নিরামিষ খাবার পছন্দ করেন। নিরামিষ রান্নার রেসিপি জানলে শুধু সবজি দিয়েই অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা সম্ভব। নিরামিষ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
মিক্স সবজি তরকারি খুবই পুষ্টিকর। আলু, গাজর, শিম, ফুলকপি, বেগুন এগুলো দিয়ে একসাথে তরকারি বানানো যায়। সব সবজি কেটে তেলে ভেজে নিন। মসলা দিয়ে রান্না করুন। এতে প্রোটিন, ভিটামিন সব পাওয়া যায়।
পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক এগুলোও নিরামিষ খাবার। শাক সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। শাক পরিষ্কার করে কেটে নিন। পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে ভেজে নিন। খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায়। আয়রনের অভাব পূরণ করতে শাক খুবই কার্যকর।
চিকেনের সহজ রান্না
চিকেন অনেকেরই পছন্দের খাবার। চিকেনের সহজ রান্না জানলে উৎসবের দিনে বা অতিথি এলে সহজেই পরিবেশন করতে পারবেন। চিকেন রান্নায় একটু বেশি মসলা লাগে কিন্তু পদ্ধতি সহজ।
চিকেন কারি সবচেয়ে জনপ্রিয়। মুরগি ধুয়ে কেটে নিন। হলুদ, নুন, লেবুর রস দিয়ে মেখে ১৫ মিনিট রাখুন। তেলে ভেজে তুলে নিন। পেঁয়াজ পেস্ট, আদা রসুন পেস্ট, টমেটো দিয়ে মসলা তৈরি করুন। মাংস দিয়ে ২০ মিনিট রান্না করুন।
- মুরগি পরিষ্কার করে কেটে নিন
- হলুদ, নুন দিয়ে মেরিনেট করুন
- তেলে হালকা ভেজে তুলে নিন
- পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাটা ভাজুন
- গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে মেশান
- মাংস দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন
চিকেন ফ্রাই বানাতে চাইলে মাংস কেটে মসলা দিয়ে মেখে রাখুন। তেলে ভাল করে ভেজে নিন। এটা চাটনি বা সালাদের সাথে খেতে খুব মজা।
গ্রামীণ খাবারের রেসিপি
গ্রামের খাবারের আলাদা এক স্বাদ আছে। গ্রামীণ খাবারের রেসিপি জানলে শহরে বসেও গ্রামের স্বাদ পাওয়া যায়। এই খাবারগুলো একটু আলাদা কিন্তু খুবই মজাদার।
পিঠা পুলি গ্রামের খুব জনপ্রিয় খাবার। চালের গুঁড়া, গুড়, নারিকেল দিয়ে এগুলো তৈরি হয়। শীতকালে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতে পিঠা তৈরি হয়। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা এগুলো খুবই সুস্বাদু।
চিড়ার পুলাও গ্রামের আরেকটি বিশেষ খাবার। চিড়া ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পেঁয়াজ, আলু, ডিম ভেজে চিড়ার সাথে মিশিয়ে দিন। এতে একটু দুধ দিলে স্বাদ আরো বাড়ে। এই খাবার সকালের নাস্তা হিসেবে খুবই ভাল।
শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর রেসিপি
শিশুদের খাবারের ব্যাপারে সব মা বাবাই চিন্তিত থাকেন। শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর রেসিপি জানা খুবই দরকার। বাচ্চারা তেমন মসলাদার খাবার খেতে পারে না তাই তাদের জন্য আলাদা রান্না করতে হয়।
খিচুড়ি শিশুদের জন্য খুবই ভাল খাবার। চাল, ডাল একসাথে সিদ্ধ করুন। সবজি দিয়ে দিন। খুব কম নুন দিন। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট সব পাওয়া যায়। হজম করতেও সুবিধা হয়।
ডিম সিদ্ধ, কলা, দুধ এগুলো শিশুদের খুবই পছন্দের খাবার। এগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর। সুজির হালুয়া, চালের পুডিং এগুলোও বাচ্চাদের জন্য ভাল। মিষ্টি খাবার বাচ্চারা বেশি পছন্দ করে।
- সবসময় তাজা খাবার দিন
- খুব কম তেল মসলা ব্যবহার করুন
- ফল ও সবজি বেশি দিন
- পানি পরিমাণমত খাওয়ান
- খাবারের সময় ঠিক রাখুন
- বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
বয়স | খাবার | পরিমাণ | সময় |
৬ মাস | খিচুড়ি | ৫০ গ্রাম | দিনে ৩ বার |
১ বছর | ভাত তরকারি | ১০০ গ্রাম | দিনে ৪ বার |
২ বছর | সব খাবার | ১৫০ গ্রাম | দিনে ৫ বার |
৩ বছর | পূর্ণ খাবার | ২০০ গ্রাম | দিনে ৫ বার |
সকালের নাশতার রেসিপি
সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। সকালের নাশতার রেসিপি জানলে আপনি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করতে পারবেন। সকালে তাড়াহুড়ায় যেন খাবার কম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
পরোটা আমাদের সকালের প্রিয় খাবার। ময়দা মেখে রাতে রাখুন। সকালে পরোটা বেলে ভাজি করে নিন। এর সাথে ডিম, আলুর তরকারি, চা খুবই মজা। পরোটা তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগে না।
উপমা, পোহা, চিড়া এগুলোও সকালের ভাল নাশতা। এগুলো তাড়াতাড়ি তৈরি হয় আবার পেট ভরেও যায়। দুধ, কলা, রুটি এগুলো দিয়েও সকালের নাশতা সারা যায়। সকালে খালি পেটে থাকা ঠিক না, তাই যাই খান না কেন কিছু না কিছু অবশ্যই খান।
দুপুরের খাবারের সহজ মেনু
দুপুরের খাবার বলতে আমরা বুঝি ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ এগুলো। দুপুরের খাবারের সহজ মেনু জানলে প্রতিদিন আলাদা আলাদা খাবার পরিবেশন করতে পারবেন। এতে খাবারে বৈচিত্র্য আসবে।
ভাত, ডাল, আলু ভাজি, মাছের ঝোল এই হল একটা সাধারণ মেনু। এর সাথে সালাদ, আচার দিলে আরো ভাল হয়। মাছের বদলে মাংস বা ডিম দেওয়া যায়। ডালের বদলে সম্বার বা রসুন দেওয়া যায়।
খিচুড়ি একা একাই একটা পূর্ণ খাবার। এর সাথে পাপড়, আচার, দই দিলে খুবই মজা। বিরিয়ানি, পোলাও এগুলোও দুপুরের জন্য ভাল। তবে এগুলো একটু বেশি সময় লাগে তাই ছুটির দিন বানানো যায়।
অতিথি আপ্যায়নের রেসিপি
অতিথি এলে ভাল খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে হয়। অতিথি আপ্যায়নের রেসিপি জানলে হঠাৎ কেউ এসে গেলেও সমস্যা হবে না। কিছু খাবার সবসময় ঘরে রাখা যায় যা দিয়ে তাৎক্ষণিক আপ্যায়ন করা যায়।
চা, বিস্কুট, চানাচুর এগুলো সবসময় ঘরে রাখা যায়। চা দিতে পারলেই অতিথির মন খুশি হয়। এর সাথে ভাজা মুড়ি, চিড়া, নাড়ু এগুলো দেওয়া যায়। মিষ্টি জিনিস অতিথিরা বেশি পছন্দ করে।
যদি খাবারের জন্য অতিথি থাকে তাহলে পোলাও, কোর্মা, রোস্ট এগুলো বানানো যায়। এগুলো একটু সময় লাগে তবে খুবই মজাদার হয়। নাহলে সাধারণ ভাত, ডাল, মাছ বা মাংস দিয়েও আপ্যায়ন করা যায়।
- আগে থেকে কিছু উপকরণ জমিয়ে রাখুন
- চা, চিনি, বিস্কুট সবসময় থাকুক
- হালকা নাস্তার জিনিস রাখুন
- ফলের রস, শরবত তৈরি রাখুন
- পরিষ্কার পানি ও গ্লাস প্রস্তুত রাখুন
- হাসিমুখে পরিবেশন করুন
বাংলা ঐতিহ্যবাহী রান্না
বাংলা ঐতিহ্যবাহী রান্না আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে খাবার খেতেন সেগুলো আজও সমান জনপ্রিয়। বাংলা ঐতিহ্যবাহী রান্না জানলে আমাদের শিকড়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা হয়।
মাছের মাথা দিয়ে ডাল রান্না পুরানো ঐতিহ্য। রুই মাছের মাথা ভেজে নিয়ে মুগ ডালের সাথে রান্না করলে খুবই সুস্বাদু হয়। এই খাবার গ্রামে এখনো খুব জনপ্রিয়। মাছের মাথায় অনেক পুষ্টি থাকে।
ভর্তা তৈরি করা বাঙালির পুরানো রীতি। বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, টমেটো ভর্তা এগুলো আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হত। এখনো অনেকে এভাবে বানায়। ভর্তার স্বাদ অন্যরকম, একবার খেলে ভুলতে পারবেন না।
উৎসবের খাবারের রেসিপি
উৎসব মানেই বিশেষ খাবার। উৎসবের খাবারের রেসিপি জানলে পূজা পার্বণে বা যে কোন অনুষ্ঠানে সুন্দর খাবারের আয়োজন করতে পারবেন। এই খাবারগুলো একটু সময় লাগে কিন্তু খুবই মজাদার।
পায়েস সব উৎসবেই থাকে। চালের পায়েস, সেমাইয়ের পায়েস, সাগু পায়েস এগুলো খুবই জনপ্রিয়। দুধে চাল সিদ্ধ করে চিনি, এলাচ দিয়ে ঘন করে নিন। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন। এর স্বাদ সবাই পছন্দ করে।
রসগোল্লা, সন্দেশ, মিষ্টি দই এগুলো উৎসবের বিশেষ খাবার। ছানা দিয়ে এগুলো তৈরি হয়। বাড়িতে তৈরি করা একটু কঠিন তবে দোকান থেকে কিনেও পরিবেশন করা যায়। মিষ্টি ছাড়া বাঙালির উৎসব হয় না।
উৎসব | খাবার | সময় | খরচ |
দুর্গাপূজা | ভোগ | ২ ঘন্টা | ৫০০ টাকা |
কালীপূজা | খিচুড়ি | ১ ঘন্টা | ২০০ টাকা |
লক্ষ্মীপূজা | পায়েস | ৪৫ মিনিট | ১৫০ টাকা |
পহেলা বৈশাখ | ইলিশ ভাজা | ৩০ মিনিট | ৮০০ টাকা |
শীতকালের বিশেষ রান্না
শীতকাল মানেই বিশেষ খাবারের সময়। শীতকালের বিশেষ রান্না জানলে এই সময়ে পরিবারের সবাইকে খুশি রাখতে পারবেন। শীতের সবজি ও মাছ দিয়ে অনেক রকম খাবার তৈরি করা যায়।
কই মাছের কোর্মা শীতের খুব জনপ্রিয় খাবার। কই মাছ কেটে হলুদ নুন মাখিয়ে ভেজে নিন। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচ দিয়ে মসলা তৈরি করুন। দই, দুধ দিয়ে ঘন কোর্মা করুন। এর স্বাদ অসাধারণ।
শীতের সবজি যেমন গোল আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর এগুলো দিয়ে মিক্স সবজি তৈরি করা যায়। এই সবজিগুলো শীতকালে সহজে পাওয়া যায় আবার দামও কম থাকে। তেল মসলা দিয়ে ভেজে নিলে খুবই মজাদার হয়।
গরমকালের হালকা রেসিপি

গরমকালে ভারী খাবার খেতে ইচ্ছা করে না। গরমকালের হালকা রেসিপি জানলে এই সময়ে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারবে। হালকা খাবার হজমে সুবিধা হয় আবার শরীর ঠান্ডাও থাকে।
দই ভাত গরমে খুবই ভাল লাগে। ভাত ঠান্ডা করে দই দিয়ে মেখে নিন। একটু নুন, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা দিন। এর সাথে আচার, পাপড় দিলে খুবই মজা। এই খাবার খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
লেবুর শরবত, ডাবের পানি, বেলের শরবত এগুলো গরমে খুবই উপকারী। ঘরে বসেই এগুলো তৈরি করা যায়। লেবু, চিনি, পানি দিয়ে শরবত তৈরি করুন। বরফ দিয়ে ঠান্ডা করে খান।
- বেশি তেল মসলা এড়িয়ে চলুন
- ঠান্ডা খাবার বেশি খান
- পানি জাতীয় খাবার খান
- ফল ও ফলের রস খান
- ভাজা পোড়া কম খান
- হালকা খাবার সকালে খান
নতুনদের জন্য রান্নার টিপস
রান্না শেখা কঠিন কিছু না। নতুনদের জন্য রান্নার টিপস জানলে যারা এই প্রথম রান্না করছে তারাও সহজেই সুস্বাদু খাবার তৈরি করতে পারবে। ধৈর্য ধরে একটু একটু করে শিখতে হবে।
প্রথমে সহজ খাবার দিয়ে শুরু করুন। ডিম ভাজি, ডাল, ভাত এগুলো দিয়ে শুরু করা যায়। এই খাবারগুলো তৈরি করতে বেশি দক্ষতার প্রয়োজন নেই। একটু সাবধান থাকলেই হয়ে যায়।
রান্নার আগে সব উপকরণ প্রস্তুত করে নিন। মসলা, সবজি কাটা, পরিমাণ ঠিক করা এগুলো আগেই করে রাখুন। এতে রান্নার সময় তাড়াহুড়া করতে হবে না। প্রথম প্রথম রেসিপি দেখে দেখে রান্না করুন।
দক্ষতার স্তর | খাবার | সময় | কঠিনতা |
শুরুর স্তর | ডিম ভাজি | ১০ মিনিট | সহজ |
মাঝারি স্তর | মাছের ঝোল | ৩০ মিনিট | মধ্যম |
উন্নত স্তর | বিরিয়ানি | ২ ঘন্টা | কঠিন |
পেশাদার স্তর | কোর্মা | ১ ঘন্টা | অত্যন্ত কঠিন |
উপসংহার
সহজ বাংলা রেসিপি জানা প্রত্যেকটি বাঙালির জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো না জানলে আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে যাব। ঘরোয়া রান্নার মাধ্যমে আমরা পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার দিতে পারি।
রান্না শেখা কোন কঠিন কাজ নয়। একটু ধৈর্য ও অনুশীলন করলে যে কেউ ভাল রান্না করতে পারে। কম খরচে, কম সময়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা সম্ভব। শুধু সঠিক পদ্ধতি জানা দরকার।
আশা করি এই লেখা থেকে আপনারা সহজ বাংলা রেসিপি সম্পর্কে ভাল ধারণা পেয়েছেন। এই রেসিপিগুলো ব্যবহার করে আপনিও ঘরে বসে সুস্বাদু খাবার তৈরি করুন। পরিবারের সবাইকে খুশি রাখুন আর নিজেও থাকুন সুস্থ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)
সহজ বাংলা রেসিপি শিখতে কত সময় লাগে?
সহজ বাংলা রেসিপি শিখতে খুব বেশি সময় লাগে না। মৌলিক রান্না যেমন ডিম ভাজি, ডাল, ভাত এগুলো ১-২ সপ্তাহেই শেখা যায়। নিয়মিত অনুশীলন করলে ৩ মাসেই ভাল রান্না করতে পারবেন।
কম বাজেটে কি ভাল খাবার রান্ন করা যায়?
অবশ্যই। ডাল, চাল, আলু, পেঁয়াজ এই কয়েকটা জিনিস দিয়েই অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। মৌসুমি সবজি কিনুন, দামও কম আর পুষ্টিগুণও ভাল। খিচুড়ি, ডাল ভাত, সবজি ভাজি এগুলো কম খরচে তৈরি হয়।
ব্যস্ত মানুষের জন্য সবচেয়ে ভাল রেসিপি কোনটি?
ব্যস্ত মানুষের জন্য খিচুড়ি, ভাজা ভাত, ডিম ভাজি, নুডলস এগুলো খুবই ভাল। এগুলো ১৫-২০ মিনিটেই তৈরি হয়ে যায়। আগের রাতে কিছু উপকরণ প্রস্তুত করে রাখলে আরো তাড়াতাড়ি হবে।
শিশুদের জন্য কোন খাবার সবচেয়ে ভাল?
শিশুদের জন্য খিচুড়ি, ডিম সিদ্ধ, মাছের ঝোল, সুজির হালুয়া এগুলো খুবই ভাল। খুব কম তেল মসলা দিতে হবে। ফল ও সবজি বেশি দিন। তাজা খাবার খাওয়ান, বাসি খাবার দেবেন না।
মাছ কেনার সময় কি খেয়াল রাখতে হবে?
তাজা মাছ চেনার উপায় হলো চোখ উজ্জ্বল থাকবে, আঁশ শক্ত থাকবে, গন্ধ খারাপ হবে না। বরফে রাখা মাছ কিনুন। বাজার থেকে এনেই রান্না করে ফেলুন নাহলে ফ্রিজে রাখুন।
গরমকালে কোন খাবার ভাল?
গরমকালে দই ভাত, লেবুর শরবত, ডাবের পানি, সালাদ এগুলো খুবই ভাল। ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। বেশি তেল মসলা দেবেন না। ঠান্ডা খাবার খান, পানি বেশি পান করুন।
রান্নার মসলা কিভাবে সংরক্ষণ করব?
মসলা শুকনো জায়গায় বায়ুরোধী পাত্রে রাখুন। রোদে দেবেন না। হলুদ, মরিচের গুঁড়া, ধনে গুঁড়া এগুলো ফ্রিজে রাখা যায়। মসলা কিনার সময় অল্প অল্প কিনুন যাতে বেশিদিন রাখতে না হয়।
নতুন রান্না শিখতে কি কি লাগবে?
প্রথমে মৌলিক রান্নার সরঞ্জাম লাগবে – কড়াই, হাতা, ছুরি, কাটার বোর্ড। তারপর মৌলিক মসলা – হলুদ, মরিচের গুঁড়া, নুন, তেল। রেসিপি বই বা ইন্টারনেট দেখে দেখে শিখতে পারেন। ধৈর্য রেখে অনুশীলন করুন।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍