বাংলাদেশে ধান চাষ: সময়, পদ্ধতি ও পরিচর্যা টিপস

ধান ক্ষেতে একজন কৃষক ধান চাষ করছেন, পেছনে গ্রাম্য পরিবেশ।

বাংলাদেশে ধান চাষ হচ্ছে কৃষির মেরুদণ্ড। এই স্বর্ণালী ফসল আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। তবে বর্তমান যুগে আধুনিক কৌশল ছাড়া সফল হওয়া কঠিন। কৃষকরা প্রতিদিন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বাজার দর পর্যন্ত সব কিছুই প্রভাবিত করে।

সঠিক জ্ঞান এবং পদ্ধতি প্রয়োগ করলে যে কোনো কৃষক সফল হতে পারেন। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। তাই প্রয়োজন শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা।

আধুনিক ধান চাষ পদ্ধতি

আধুনিক ধান চাষ পদ্ধতি বলতে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সমন্বয় বোঝায়। এই পদ্ধতিতে প্রথমেই জমি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উর্বর দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তারপর আসে জমি প্রস্তুতির পালা।

লাইন সিস্টেমে বীজ বপন করা হয় এই পদ্ধতিতে। সারি থেকে সারির দূরত্ব রাখতে হয় ২০ সেন্টিমিটার। গাছ থেকে গাছের মধ্যে দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার। এতে বাতাস চলাচল ভালো হয়। সূর্যের আলো সব গাছে পৌঁছায়।

ড্রাম সিডার ব্যবহার করে সরাসরি বীজ বপন করা যায়। এতে শ্রম ও সময় দুটোই সাশ্রয় হয়। তবে জমি সমতল এবং কাদাময় থাকতে হবে। বীজ বপনের আগে ভিজিয়ে রাখতে হয় ২৪ ঘণ্টা।

উচ্চ ফলনশীল ধান জাত

উচ্চ ফলনশীল ধান জাত নির্বাচন সাফল্যের চাবিকাঠি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। এই জাতগুলো রোগ প্রতিরোধী এবং অধিক ফলনশীল।

আমন মৌসুমে ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫১ ভালো। এই জাতগুলো ১২০-১৩০ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ৬-৭ টন ফলন হয়। খরা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে।

বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯ জনপ্রিয়। তবে নতুন জাতগুলোও বেশ ভালো। ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯ সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়েছে।

স্থানীয় জাতের সাথে উন্নত জাতের তুলনা করে দেখতে হবে। কোন জাত স্থানীয় পরিবেশে ভালো করে সেটি নির্বাচন করতে হবে।

ধান চাষের সময়

ধান চাষের সময় নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে তিনটি মৌসুমে ধান চাষ হয়। আউশ, আমন ও বোরো – এই তিন মৌসুমেই বিশেষ সময় মেনে চলতে হয়।

আউশ ধান বপন করা হয় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাস। এই ধান জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে কাটা হয়। বৃষ্টির পানিতেই এই ধান চাষ সম্ভব।

আমন ধানের বীজতলা তৈরি হয় আষাঢ় মাসে। রোপণ করা হয় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়। এই ধানে বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীলতা বেশি।

বোরো ধানের বীজতলা পৌষ মাসে। রোপণ মাঘ-ফাল্গুন মাসে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে কাটা হয়। এই ধানে সেচের প্রয়োজন বেশি।

ধান চাষে সার ব্যবস্থাপনা

সার ব্যবস্থাপনা ধান চাষে মূল ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত সার খরচ বাড়ায় এবং পরিবেশের ক্ষতি করে।

মূল সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ব্যবহার করা হয়। প্রতি বিঘায় ইউরিয়া ১৫-২০ কেজি প্রয়োজন। টিএসপি ৮-১০ কেজি এবং এমওপি ৬-৮ কেজি।

জিপসাম ও জিংক সালফেট মাঝে মাঝে দিতে হয়। জিপসাম মাটির গুণাগুণ বাড়ায়। জিংক সালফেট গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সার প্রয়োগের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। রোপণের সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও পূর্ণ টিএসপি, এমওপি দিতে হয়। বাকি ইউরিয়া ২-৩ কিস্তিতে টপড্রেসিং করতে হয়।

ধানের রোগ ও প্রতিকার

ধানের রোগ সম্পর্কে জানা ধান চাষের জন্য অপরিহার্য। প্রধান রোগগুলো হলো ব্লাস্ট, শিথ ব্লাইট, ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট। এই রোগগুলো সময়মতো চিকিৎসা না করলে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ব্লাস্ট রোগে পাতায় ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে। গাছের গোড়া কালো হয়ে যায়। এই রোগের জন্য ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়।

শিথ ব্লাইট রোগে গাছের গোড়ায় বাদামি দাগ হয়। এই রোগ আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি হয়। প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক কার্যকর।

ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটে পাতার কিনারা শুকিয়ে যায়। এই রোগের জন্য স্ট্রেপ্টোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার বীজ ব্যবহার করতে হয়। জমিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। গাছের মধ্যে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়।

বীজ বপনের সঠিক নিয়ম

বীজ বপনের সঠিক নিয়ম মানা ধান চাষে সাফল্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রথমেই ভালো বীজ নির্বাচন করতে হয়। পুষ্ট ও রোগমুক্ত বীজ বেছে নিতে হয়।

বীজ বপনের আগে বালাই প্রতিরোধী চিকিৎসা করতে হয়। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা হয়। প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশাতে হয়।

সরাসরি বপনের ক্ষেত্রে বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর ছায়ায় শুকিয়ে অঙ্কুরোদগম করতে হয়। অঙ্কুর ২-৩ মিলিমিটার হলে বপন করা যায়।

বীজতলায় বপনের জন্য ভালো জমি বেছে নিতে হয়। উর্বর ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হয়। বীজতলার মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে সমতল করতে হয়।

প্রতি বর্গমিটারে ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করা যায়। বীজ সমানভাবে ছিটিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। হালকা পানি দিয়ে রাখতে হয়।

ধানের আগাছা নিয়ন্ত্রণ

আগাছা নিয়ন্ত্রণ ধান চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগাছা ধান গাছের পুষ্টি কেড়ে নেয়। ফলে ফলন কমে যায়। তাই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।

ধানের প্রধান আগাছাগুলো হলো শামা ঘাস, পানি কচু, কাঁটানটে। এই আগাছাগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম নিড়ানি দিতে হয়।

হাতে আগাছা পরিষ্কার করা সবচেয়ে ভালো। তবে শ্রমিকের অভাবে আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়। প্রি-ইমার্জেন্স আগাছানাশক রোপণের ৩-৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়।

পোস্ট-ইমার্জেন্স আগাছানাশক রোপণের ১৫-২৫ দিন পর ব্যবহার করা হয়। এই আগাছানাশক শুধু আগাছার উপর স্প্রে করতে হয়। ধান গাছে যেন না লাগে।

নিড়ানি দেওয়ার সাথে সাথে মাটি আলগা হয়। গাছের শিকড়ে বাতাস পৌঁছায়। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা ধান চাষে

সেচ ব্যবস্থাপনা ধান চাষে অপরিহার্য উপাদান। বিশেষত বোরো মৌসুমে সেচের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ পানি দিতে হয়।

ধান গাছের বিভিন্ন বৃদ্ধির পর্যায়ে পানির প্রয়োজন ভিন্ন। কুশি অবস্থায় ২-৩ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হয়। ফুল আসার সময় ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি থাকা দরকার।

দানা বাঁধার সময় জমিতে পানি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় পানির অভাব হলে দানা চিটা হয়ে যায়। ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।

পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং পদ্ধতি ভালো। এতে পানি ৩০-৪০% সাশ্রয় হয়। ফলনও ভালো থাকে।

ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতি এখনো ব্যয়বহুল। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি সাশ্রয়ী হলে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে।

জৈব সার ব্যবহার ধান চাষে

জৈব সার ব্যবহার ধান চাষে একটি টেকসই পদ্ধতি। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ফলনও বৃদ্ধি পায়।

গোবর সার সবচেয়ে জনপ্রিয় জৈব সার। প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ গোবর সার দেওয়া যায়। তবে পচা গোবর ব্যবহার করতে হয়। কাঁচা গোবর গাছের ক্ষতি করতে পারে।

কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায় ঘরেই। রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, পাতা, খড় দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি হয়। এই সার মাটির জৈবিক গুণাগুণ বাড়ায়।

ভার্মি কম্পোস্ট অত্যন্ত কার্যকর জৈব সার। কেঁচো দিয়ে এই সার তৈরি হয়। এতে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। গাছ দ্রুত পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।

সবুজ সার হিসেবে ধইঞ্চা চাষ করা যায়। এই গাছ মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ করে। মাটির উর্বরতা বাড়ায়। রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কমে যায়।

ধান কাটার সময় ও পদ্ধতি

ধান কাটার সঠিক সময় নির্ধারণ ধান চাষের শেষ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সময়মতো কাটতে না পারলে ফসলের ক্ষতি হয়। দানা ঝরে পড়ে বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়।

ধান পাকার লক্ষণ দেখে কাটার সময় নির্ধারণ করতে হয়। শিষের ৮০% দানা সোনালি রং হলে কাটা যায়। দানা হাত দিয়ে চেপে দেখতে হয়। শক্ত হলে কাটার উপযুক্ত।

সকালে ধান কাটা ভালো। এই সময় শিশির থাকে। ধানের দানা ঝরে পড়ার সম্ভাবনা কম। দুপুরের রোদে কাটলে দানা বেশি ঝরে।

হার্ভেস্টার ব্যবহার করে দ্রুত ধান কাটা যায়। এতে শ্রম ও সময় সাশ্রয় হয়। তবে ছোট জমিতে হাতে কাটাই ভালো। যত্ন নিয়ে কাটা যায়।

কাটার পর দ্রুত মাড়াই করতে হয়। দেরি করলে ইঁদুর বা পাখি খেয়ে ফেলে। মাড়াইয়ের পর ভালোভাবে শুকাতে হয়। আর্দ্রতা ১৪% এর নিচে আনতে হয়।

ধান চাষে লাভজনক কৌশল

লাভজনক ধান চাষের জন্য কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করতে হয়। প্রথমত, খরচ কমানো এবং দ্বিতীয়ত, উৎপাদন বাড়ানো। এই দুই উপায়ে লাভ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সম্মিলিত চাষের মাধ্যমে খরচ কমানো যায়। কয়েকজন কৃষক মিলে যন্ত্রপাতি কিনতে পারেন। এতে প্রতিজনের খরচ কমে যায়। পাওয়ার টিলার, থ্রেশার ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যায়।

মিশ্র চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। ধানের সাথে মাছ চাষ করা যায়। আলের ধারে সবজি লগানো যায়। এতে অতিরিক্ত আয় হয়।

প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। চিড়া, মুড়ি, খই তৈরি করে বিক্রি করা যায়। এতে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হতে পারে।

সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করলে মধ্যস্বত্বভোগীর মুনাফা বাঁচে। অনলাইনে বিক্রির সুবিধা রয়েছে। এতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়।

ব্রি ধান জাত

ব্রি ধান জাতগুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে উদ্ভাবিত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট দীর্ঘ গবেষণার পর এই জাতগুলো উদ্ভাবন করেছে। ধান চাষে এই জাতগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ব্রি ধান-২৮ বোরো মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। এই জাত ১৪০-১৪৫ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ৭-৮ টন ফলন হয়। দানা চিকন ও সুস্বাদু।

ব্রি ধান-২৯ও বোরো মৌসুমের উপযুক্ত। এই জাত ১৫৫-১৬০ দিনে পাকে। ফলন ৮-৯ টন প্রতি হেক্টরে। দানা মোটা কিন্তু খুবই সুস্বাদু।

আমন মৌসুমের জন্য ব্রি ধান-৪৯ ভালো। এই জাত ১২৫-১৩০ দিনে পাকে। খরা সহনশীল। প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও ভালো ফলন দেয়।

নতুন জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯ উল্লেখযোগ্য। এই জাতগুলো জিংক সমৃদ্ধ। পুষ্টিগুণ বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো।

ধান চাষে কীটনাশক ব্যবহার

কীটনাশক ব্যবহার ধান চাষে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে উপকার হয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।

ধানের প্রধান পোকামাকড় হলো মাজরা পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং। এই পোকাগুলো ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। সঠিক সময়ে দমন করতে হয়।

জৈবিক কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। নিম তেল, সাবান পানি ভালো জৈবিক কীটনাশক। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।

রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের সময় মাত্রা ঠিক রাখতে হয়। লেবেলে লেখা নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা যাবে না।

স্প্রে করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। মাস্ক, চশমা, গ্লাভস পরতে হয়। বাতাসের বিপরীতে স্প্রে করা যাবে না। স্প্রের পর হাত-মুখ ভালো করে ধুতে হয়।

ধান উৎপাদনের খরচ

ধান চাষে খরচের হিসাব রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক হিসাব না রাখলে লাভ-ক্ষতি বোঝা যায় না। খরচ কমানোর উপায়ও খুঁজে বের করা যায় না।

প্রতি বিঘা জমিতে বীজের খরচ ৩০০-৪০০ টাকা। উন্নত জাতের বীজ একটু বেশি দামে হয়। তবে ফলন বেশি হওয়ায় লাভজনক।

সারের খরচ প্রতি বিঘায় ১৫০০-২০০০ টাকা। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি মিলিয়ে এই খরচ। জৈব সার ব্যবহার করলে খরচ কিছুটা কমে।

শ্রমিকের খরচ সবচেয়ে বেশি। জমি চাষ থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ৩০০০-৪০০০ টাকা লাগে। যন্ত্র ব্যবহার করলে এই খরচ অনেক কমে যায়।

সেচের খরচ বোরো মৌসুমে বেশি। প্রতি বিঘায় ৮০০-১২০০ টাকা খরচ হয়। আমন মৌসুমে সেচের খরচ কম। বৃষ্টির পানিতেই চাষ হয়।

কীটনাশক ও অন্যান্য খরচ মিলে ৫০০-৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় ৬০০০-৮০০০ টাকা খরচ হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় এই খরচ কমানো সম্ভব।

কার্তিক মাসে ধান চাষ

কার্তিক মাসে ধান চাষ বলতে মূলত আমন ধান কাটার সময় বোঝায়। এই সময়ে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একদিকে আমন কাটা, অন্যদিকে বোরোর প্রস্তুতি।

কার্তিক মাসের প্রথম দিকে আমন ধান কাটা শুরু হয়। এই সময় আবহাওয়া থাকে অনুকূল। বৃষ্টি কম হয়। ধান শুকানোর জন্য ভালো আবহাওয়া।

আমন কাটার পর জমি প্রস্তুত করতে হয় বোরোর জন্য। কার্তিক মাসের শেষ দিকে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়। পৌষ মাসে চারা রোপণ করা হয়।

এই সময়ে মাটি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব আছে জানা যায়। সেই অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা যায়।

কার্তিক মাসে কৃষি যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। পাওয়ার টিলার, পাম্প সেট সার্ভিসিং করাতে হয়। বোরো মৌসুমে যেন কোনো সমস্যা না হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশে ধান চাষ শুধু একটি পেশা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের সমন্বয়ে এই খাতকে আরও উন্নত করা সম্ভব। সঠিক জাত নির্বাচন, যথাযথ সার ব্যবস্থাপনা এবং সময়মতো পরিচর্যা করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। তবে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। এই জাতগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এই খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।

টেকসই কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করেই উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ রেখে যেতে হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। স্মার্ট কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করলে খরচ কমবে এবং ফলন বাড়বে। কৃষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

ধান চাষের জন্য কোন মাটি সবচেয়ে ভালো?

দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এই মাটিতে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা ভালো। পুষ্টি উপাদানও বেশি থাকে। তবে এঁটেল মাটিতেও ভালো ধান হয়।

কোন মৌসুমে ধানের ফলন সবচেয়ে বেশি?

বোরো মৌসুমে সাধারণত ফলন বেশি হয়। এই সময় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত থাকে। সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। সেচের ব্যবস্থা থাকায় পানির অভাব হয় না।

ধান চাষে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হয়?

প্রতি বিঘায় ৬০০০-৮০০০ টাকা খরচ হয়। এতে বীজ, সার, শ্রমিক, সেচ সব খরচ অন্তর্ভুক্ত। ভালো ব্যবস্থাপনায় খরচ কমানো যায়।

উন্নত জাতের ধানে কি বেশি সার লাগে?

উন্নত জাতের ধানে সার বেশি লাগে। কারণ এই জাতগুলো বেশি ফলন দেয়। বেশি ফলনের জন্য বেশি পুষ্টির প্রয়োজন। তবে সার বেশি দিলেও লাভ বেশি হয়।

জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ করা যায় কি?

হ্যাঁ, জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ সম্ভব। তবে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। জৈব সার, জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। দাম বেশি পেলে লাভজনক।

কোন সময়ে ধান কাটলে সবচেয়ে ভালো?

সকালের দিকে ধান কাটা সবচেয়ে ভালো। এই সময় শিশির থাকে। দানা ঝরে পড়ার সম্ভাবনা কম। শিষের ৮০% দানা সোনালি হলে কাটা যায়।

আগাছা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

হাতে আগাছা তোলা সবচেয়ে ভালো। তবে শ্রমিকের অভাবে আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়। রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম নিড়ানি দিতে হয়।

ধানের রোগ প্রতিরোধের উপায় কী?

পরিষ্কার বীজ ব্যবহার করতে হয়। জমিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। সঠিক দূরত্বে রোপণ করতে হয়। রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হয়।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top