
স্বাস্থ্য নিয়ে আজকের জীবনে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের নাম রক্তচাপ। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। অথচ সঠিক জ্ঞান থাকলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো রক্তচাপের সম্পূর্ণ বিষয়।
আপনি কি জানেন যে বিশ্বব্যাপী প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন? এই চমকপ্রদ তথ্যটি আমাদের সতর্ক করে দেয়। তাই আর দেরি না করে শুরু করা যাক রক্তচাপের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
রক্তচাপ কী এবং কীভাবে কাজ করে?
রক্তচাপ হল আমাদের রক্তনালীর দেয়ালে রক্তের চাপ। হৃদপিণ্ড প্রতিটি স্পন্দনে রক্ত পাম্প করে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় চাপ। সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক – এই দুটি সংখ্যায় পরিমাপ করা হয় রক্তচাপ।
সিস্টোলিক চাপ দেখায় হৃদপিণ্ড সংকুচিত হওয়ার সময় চাপ। পক্ষান্তরে ডায়াস্টোলিক চাপ দেখায় হৃদপিণ্ড শিথিল হওয়ার সময় চাপ। স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg। এর চেয়ে বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ। কম হলে নিম্ন রক্তচাপ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের কিডনি, মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ড। এই অঙ্গগুলো একসাথে কাজ করে সঠিক চাপ বজায় রাখে। যখন এই সমন্বয় নষ্ট হয়, তখনই সমস্যা শুরু।
উচ্চ রক্তচাপ – নীরব ঘাতক
উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কেন? কারণ এর লক্ষণ প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যায় না। অনেকে বছরের পর বছর জানেনই না তাদের রক্তচাপ বেশি।
হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে গেলে মাথাব্যথা হয়। বুক ধড়ফড় করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মাথা ঘোরে। চোখে ঝাপসা দেখে। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়।
দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে। কিডনি নষ্ট হতে পারে। চোখের সমস্যা হয়। তাই সময়মতো চিকিৎসা করা জরুরি।
নিম্ন রক্তচাপ এবং এর প্রভাব
নিম্ন রক্তচাপও কম সমস্যা নয়। রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg এর নিচে নামলে সমস্যা হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক।
নিম্ন রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরে। হঠাৎ দাঁড়ালে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। দুর্বলতা লাগে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। বমি বমি ভাব হয়।
গর্ভবতী মহিলাদের নিম্ন রক্তচাপ বেশি হয়। বয়স্কদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা যায়। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ কমে। পানিশূন্যতায়ও রক্তচাপ কমে যায়।
রক্তচাপের লক্ষণ চিনুন
রক্তচাপের সমস্যা চেনার জন্য লক্ষণগুলো জানা দরকার। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে পরবর্তী পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
মাথার পিছনে ব্যথা হয়। গলা শক্ত হয়ে যায়। নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। রাতে ঘুম হয় না। সকালে ক্লান্তি লাগে। বারবার প্রস্রাব হয়।
নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ আলাদা। চোখে অন্ধকার দেখা। দুর্বলতা ও ক্লান্তি। ঘাম হওয়া। মনোযোগ কমে যাওয়া। ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রক্তচাপ মাপার সঠিক নিয়ম
রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল পদ্ধতিতে মাপলে ভুল ফলাফল আসে। এতে চিকিৎসায় সমস্যা হয়।
রক্তচাপ মাপার আগে ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। কফি বা চা খাওয়ার ৩০ মিনিট পর মাপুন। ধূমপান করার পর অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। বাথরুম ব্যবহারের পর মাপা উচিত।
চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। পা মাটিতে রাখুন। হাত টেবিলে রাখুন। হাতের কাফ হৃদপিণ্ডের সমান উচ্চতায় রাখুন। কাফ বাঁধার সময় খুব আঁটো বা ঢিলা করবেন না।
পরপর তিনবার মেপে গড় বের করুন। প্রতিবার মাপার মধ্যে ১-২ মিনিট বিরতি দিন। একবার ডান হাতে, একবার বাম হাতে মাপুন। যে হাতে বেশি আসে সেটাই সঠিক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর খাবার
খাবারের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক খাবার বেছে নিলে ওষুধের প্রয়োজন কমে। প্রাকৃতিক উপাদান রক্তচাপ কমাতে অসাধারণ কাজ করে।
রসুন রক্তচাপ কমানোর জন্য খুবই কার্যকর। প্রতিদিন ২-৩ কোয়া কাঁচা রসুন খান। পেঁয়াজও ভালো কাজ করে। এতে থাকা সালফার যৌগ রক্তনালী প্রসারিত করে।
গাজর, বিট, পালং শাক পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এগুলো সোডিয়ামের প্রভাব কমায়। কলা প্রতিদিন খান। এতে প্রচুর পটাশিয়াম আছে। তরমুজ, খেজুর, কিসমিসও ভালো।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খান। তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, ইলিশ খেতে পারেন। বাদাম, তিল, তিসি ভালো। জলপাই তেল রান্নায় ব্যবহার করুন। মধু প্রতিদিন খান।
রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়
ঘরোয়া উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। এসব পদ্ধতি নিরাপদ ও কার্যকর। নিয়মিত অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
সবুজ চা প্রতিদিন ২-৩ কাপ পান করুন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা রক্তচাপ কমায়। হিবিস্কাস চা খুবই উপকারী। এক কাপ গরম পানিতে শুকনো হিবিস্কাস ফুল ভিজিয়ে পান করুন।
আমলকীর রস রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এতে ভিটামিন সি আছে যা রক্তনালী শক্তিশালী করে।
যোগব্যায়াম ও ধ্যান নিয়মিত করুন। গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। দিনে ২০ মিনিট ধ্যান করুন। এতে মানসিক চাপ কমে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাই ব্লাড প্রেসার – কারণ ও প্রতিকার
হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ আজকের যুগে মহামারীর রূপ নিয়েছে। এর পেছনে আছে আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন। আধুনিক জীবনের চাপ এই সমস্যা বাড়িয়েছে।
প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে বংশগত কারণ, বয়স বৃদ্ধি, মানসিক চাপ দায়ী। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, মোটা হওয়া, ধূমপান ঝুঁকি বাড়ায়।
গৌণ উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কারণ আছে। কিডনির রোগ, হরমোনের সমস্যা, থাইরয়েডের অসুখ কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও হয়।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রা পরিবর্তন প্রথম পদক্ষেপ। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার, ওজন নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।
লো ব্লাড প্রেসার – লক্ষণ ও সমাধান
লো ব্লাড প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ অনেক সময় স্বাভাবিক। তবে লক্ষণ সহকারে হলে চিকিৎসার দরকার। এটি কম আলোচিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
কিছু মানুষের জন্মগতভাবে নিম্ন রক্তচাপ থাকে। এটি স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ কমে গেলে সমস্যা। ওর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন একটি বিশেষ ধরন। দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যায়।
পানিশূন্যতা নিম্ন রক্তচাপের প্রধান কারণ। প্রচুর পানি পান করুন। লবণাক্ত খাবার খান। তবে পরিমিত পরিমাণে। হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন না। ধীরে ধীরে উঠুন।
কফি বা চা পান করুন। এতে ক্যাফেইন আছে যা রক্তচাপ বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত পান করবেন না। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন।
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র – সঠিক নির্বাচন

রক্তচাপ মাপার যন্ত্র আজকাল ঘরে ঘরে পাওয়া যায়। তবে সঠিক যন্ত্র বেছে নেওয়া জরুরি। ভুল যন্ত্রে ভুল মাপ আসে।
ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করা সহজ। এতে সংখ্যা দেখা যায়। আর্ম টাইপ যন্ত্র বেশি নির্ভুল। রিস্ট টাইপ সহজ তবে কম নির্ভুল। গুণগত ব্র্যান্ড বেছে নিন।
যন্ত্র কেনার সময় ক্যালিব্রেশন দেখুন। প্রতি ছয় মাস পর পর যন্ত্র চেক করান। কাফের সাইজ হাতের জন্য উপযুক্ত কিনা দেখুন। ম্যানুয়াল পড়ে ব্যবহার করুন।
যন্ত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। সাবধানে রাখুন যাতে নষ্ট না হয়। ব্যাটারি নিয়মিত পরিবর্তন করুন। সন্দেহ হলে চিকিৎসকের যন্ত্র দিয়ে মিলিয়ে নিন।
রক্তচাপ এবং হৃদরোগের সম্পর্ক
রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ। দীর্ঘদিন রক্তচাপ বেশি থাকলে হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রক্তচাপ বেশি থাকলে হৃদপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এতে হৃদপেশী পুরু হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়।
রক্তনালীতে চাপ বেশি থাকলে দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রক্ত জমাট বাঁধে। স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে। হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। জীবনযাত্রা পরিবর্তন করুন। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের যোগসূত্র
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরস্পর সম্পর্কিত। এই দুটি রোগ একসাথে থাকার প্রবণতা বেশি। একটি রোগ অন্যটির ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিক রোগীদের ৮০% এর উচ্চ রক্তচাপ থাকে। রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রক্তচাপ বাড়ে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও কারণ।
দুটি রোগ একসাথে থাকলে জটিলতা বেশি। কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। চোখের সমস্যা হয়। নার্ভের ক্ষতি হয়। হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তাই দুটি রোগই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুষম খাবার খান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। ধূমপান ত্যাগ করুন।
প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এসব পদ্ধতি নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। ধৈর্য ধরে নিয়মিত অনুসরণ করতে হবে।
মানসিক চাপ কমানো প্রথম পদক্ষেপ। স্ট্রেস হরমোন রক্তচাপ বাড়ায়। নিয়মিত ধ্যান করুন। গভীর শ্বাস নিন। শান্ত পরিবেশে থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুমান।
সূর্যের আলো শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। এতে রক্তনালী প্রসারিত হয়। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকুন। তবে সকাল বা বিকেলের রোদ ভালো।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। কাজুবাদাম, কুমড়ার বীজ, পালং শাক ভালো। ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। দুধ, দই, কলা, আলু খেতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের ভূমিকা

ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। রক্তচাপ কমায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এরোবিক ব্যায়াম বেশি উপকারী। দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার ভালো। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন।
শক্তি প্রশিক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন করলেই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত ভারী ওজন তুলবেন না।
যোগব্যায়াম ও তাই চি ভালো। এতে মানসিক চাপ কমে। নমনীয়তা বাড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হয়। প্রাণায়াম রক্তচাপ কমাতে অসাধারণ কাজ করে।
রক্তচাপ বৃদ্ধির মূল কারণসমূহ
রক্তচাপ বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এসব কারণ জানলে প্রতিরোধ করা সহজ। জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে অনেক কারণ দূর করা যায়।
বংশগত কারণ প্রধান। বাবা-মা বা দাদা-দাদির উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সন্তানদের ঝুঁকি বেশি। বয়স বাড়লে রক্তনালী শক্ত হয়। ফলে রক্তচাপ বাড়ে।
জীবনযাত্রার কারণগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। অতিরিক্ত লবণ রক্তে সোডিয়াম বাড়ায়। এতে পানি জমে রক্তচাপ বাড়ে। মোটা হলে হৃদপিণ্ডের চাপ বাড়ে।
ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে। অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়ায়। মানসিক চাপে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এতে রক্তচাপ বাড়ে। নিদ্রাহীনতাও কারণ।
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষার গুরুত্ব
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ নেই। তাই নিয়মিত পরীক্ষা ছাড়া জানা যায় না।
২০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। স্বাভাবিক থাকলে বছরে একবার যথেষ্ট। প্রি-হাইপারটেনশন থাকলে ৬ মাস পর পর পরীক্ষা করুন।
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পরীক্ষা জরুরি। প্রি-একলাম্পসিয়ার ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিক রোগীদের বেশি পরীক্ষা করতে হবে। হৃদরোগীরাও নিয়মিত পরীক্ষা করবেন।
বাড়িতে রক্তচাপ মাপলে রেকর্ড রাখুন। তারিখ, সময়, রক্তচাপের মাপ লিখুন। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এতে চিকিৎসা পরিকল্পনা সহজ হয়।
কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। কমিউনিটি সেন্টারে বিনামূল্যে পরীক্ষা হয়। ফার্মেসিতেও মাপতে পারেন। তবে নির্ভুল যন্ত্র ব্যবহার করুন।
উপসংহার
জীবনের গুণমান বজায় রাখতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। এই নীরব ঘাতককে পরাজিত করা সম্ভব। সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতাই মূল চাবিকাঠি।
প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ – এসবই কার্যকর। ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রা পরিবর্তন করুন।
মনে রাখুন, প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা। নিয়মিত পরীক্ষা করুন। লক্ষণ দেখলে দেরি করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যই সম্পদ।
আজই শুরু করুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের যাত্রা। ছোট ছোট পরিবর্তনে বড় ফলাফল পাবেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
সতর্কবার্তা:
এই লেখা শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
রক্তচাপ কত হলে বিপজ্জনক?
রক্তচাপ ১৮০/১২০ mmHg এর বেশি হলে জরুরি অবস্থা। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার দরকার। ১৪০/৯০ mmHg এর বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ। ৯০/৬০ mmHg এর কম হলে নিম্ন রক্তচাপ।
কোন বয়সে রক্তচাপ পরীক্ষা শুরু করবো?
১৮ বছর বয়স থেকে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আরও আগে শুরু করুন। গর্ভাবস্থায় প্রতি চেকআপে পরীক্ষা করান।
ঘরে রক্তচাপ মাপা কি নির্ভরযোগ্য?
হ্যাঁ, সঠিক যন্ত্র ও পদ্ধতি ব্যবহার করলে ঘরে মাপা নির্ভরযোগ্য। ডিজিটাল আর্ম টাইপ মনিটর ব্যবহার করুন। নিয়মিত ক্যালিব্রেট করান।
রক্তচাপের ওষুধ কি সারাজীবন খেতে হবে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ লাগে। তবে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে কিছু ক্ষেত্রে কমানো যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করবেন না।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কি বিপজ্জনক?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ মা ও শিশু উভয়ের জন্য বিপজ্জনক। প্রি-একলাম্পসিয়া হতে পারে। নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লবণ একেবারে বন্ধ করতে হবে কি?
সম্পূর্ণ লবণ বন্ধ করার দরকার নেই। দৈনিক ৫ গ্রামের কম লবণ খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রাকৃতিক মসলা ব্যবহার করুন।
রক্তচাপ কমানোর জন্য কোন ব্যায়াম ভালো?
হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার ভালো। যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম কার্যকর। দৈনিক ৩০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করুন। হঠাৎ ভারী ব্যায়াম শুরু করবেন না।
মানসিক চাপ কি রক্তচাপ বাড়ায়?
হ্যাঁ, মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায়। স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। ধ্যান, গভীর শ্বাস, বিশ্রাম নিন। পর্যাপ্ত ঘুমান। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন।
কোন খাবার রক্তচাপ তাৎক্ষণিক কমায়?
কোনো খাবার তাৎক্ষণিক রক্তচাপ কমায় না। তবে রসুন, বিট, ডালিম, সবুজ চা নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে কমে। জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে যান।
রক্তচাপ কম হলে কি করবো?
পানি বেশি পান করুন। লবণাক্ত খাবার খান। হঠাৎ উঠে দাঁড়াবেন না। ছোট ছোট খাবার খান। কফি পান করুন। লক্ষণ বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍