ব্লকচেইন প্রযুক্তি: নিরাপদ ডিজিটাল দুনিয়ার নতুন অধ্যায়

আধুনিক ডিজিটাল যুগে ব্লকচেইন প্রযুক্তি একটি বিপ্লবী আবিষ্কার। এই প্রযুক্তি আমাদের তথ্য সংরক্ষণ ও আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে নিরাপত্তার দিক থেকে, ব্লকচেইন অভূতপূর্ব সাফল্য এনেছে।

প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে জড়িত থাকে। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা সবসময় চিন্তিত। এখানেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি এসে আমাদের সমাধান দিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

তবে প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি আসলে কী? কীভাবে কাজ করে? আর এর সুবিধা-অসুবিধাই বা কী? আজকের এই নিবন্ধে আমরা ব্লকচেইনের প্রতিটি দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ইতিহাস

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ইতিহাস ও ডিজিটাল লেনদেনের বিকাশের গল্প

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ইতিহাস শুরু হয় ২০০৮ সালে। সাতোশি নাকামোতো নামক একজন ব্যক্তি প্রথম এই ধারণা উপস্থাপন করেন। তিনি বিটকয়েনের সাথে ব্লকচেইনের ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন।

প্রথমদিকে এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয়। ২০০৯ সালে প্রথম বিটকয়েন লেনদেন সম্পন্ন হয়। এরপর থেকে এই প্রযুক্তি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বর্তমানে হাজারো কোম্পানি ব্লকচেইন ব্যবহার করছে। প্রযুক্তিটির বিকাশ ক্রমাগত হচ্ছে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার

আজকালকার দুনিয়ায় ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক। শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় এটি ব্যবহৃত হয়।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগীর তথ্য সংরক্ষণে ব্লকচেইন কাজ করে। তাছাড়া, ভোটিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা আনতে এটি ব্যবহার করা হয়। রিয়েল এস্টেট সেক্টরেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট যাচাইয়ে এই প্রযুক্তি কার্যকর। এছাড়া বীমা শিল্পে দাবি নিষ্পত্তিতে ব্লকচেইন সহায়তা করে। প্রতিদিন নতুন নতুন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সম্প্রসারিত হচ্ছে।

খেলাধুলার জগতেও ব্লকচেইনের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের তথ্য সংরক্ষণ পর্যন্ত। এমনকি শিল্পকলার ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ রয়েছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি সহজ ভাষায়

অনেকেই জানতে চান ব্লকচেইন প্রযুক্তি সহজ ভাষায় কী। মূলত এটি একটি ডিজিটাল খাতা। যেখানে সব তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। একবার তথ্য এন্ট্রি হলে সেটি পরিবর্তন করা যায় না।

ব্লকচেইনকে একটি শেকলের সাথে তুলনা করা যায়। প্রতিটি ব্লক একটি শেকলের কড়ার মতো। একটি ব্লক আরেকটির সাথে যুক্ত থাকে। এভাবে একটি দীর্ঘ শৃঙ্খল তৈরি হয়।

প্রতিটি ব্লকে কিছু তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্যগুলো একাধিক কম্পিউটারে কপি থাকে। ফলে কেউ সহজে তথ্য পরিবর্তন করতে পারে না। এটাই ব্লকচেইনের মূল শক্তি।

এই প্রযুক্তি কেন্দ্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করে। মানে কোনো একক কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ন্ত্রণ করে না। বরং নেটওয়ার্কের সবাই মিলে এটি পরিচালনা করে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে এটা বুঝতে হলে কয়েকটি ধাপ জানতে হবে। প্রথমে কোনো লেনদেন শুরু হয়। এরপর সেটি নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়। নেটওয়ার্কের সদস্যরা লেনদেনটি যাচাই করে।

যাচাই সম্পন্ন হলে লেনদেনটি একটি ব্লকে রাখা হয়। এই ব্লককে আগের ব্লকের সাথে যুক্ত করা হয়। এভাবে একটি শৃঙ্খল তৈরি হয়। প্রতিটি ব্লকে একটি বিশেষ কোড থাকে যাকে হ্যাশ বলে।

হ্যাশ প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা। আগের ব্লকের হ্যাশও নতুন ব্লকে থাকে। ফলে পুরো সিস্টেম একসাথে যুক্ত থাকে। কেউ যদি কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে হ্যাশ পরিবর্তন হয়ে যাবে।

নেটওয়ার্কের অন্য সবাই এই পরিবর্তন দেখতে পাবে। ফলে প্রতারণা করা প্রায় অসম্ভব। এইভাবে ব্লকচেইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির সুবিধা

ব্লকচেইন প্রযুক্তির সুবিধা অনেক। প্রথমত, এটি অত্যন্ত নিরাপদ। তথ্য একবার এন্ট্রি হলে পরিবর্তন করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, এতে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই। ফলে খরচ কম।

স্বচ্ছতা এই প্রযুক্তির আরেকটি বড় সুবিধা। সবাই লেনদেনের তথ্য দেখতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে এটি খুবই কার্যকর। সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হয়।

নির্ভরযোগ্যতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ তথ্য একাধিক স্থানে সংরক্ষিত। একটি জায়গায় সমস্যা হলেও অন্যত্র তথ্য থাকে। ২৪/৭ সার্ভিস পাওয়া যায়। ছুটির দিনে ব্যাংক বন্ধ থাকলেও ব্লকচেইন কাজ করে।

জালিয়াতি রোধে এই প্রযুক্তি অগ্রগামী। প্রতিটি লেনদেন যাচাই করা হয়। ভুয়া তথ্য প্রবেশ করানো কঠিন। এসব কারণে ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির অসুবিধা

প্রতিটি প্রযুক্তির মতো ব্লকচেইন প্রযুক্তির অসুবিধাও রয়েছে। প্রথম অসুবিধা হলো বিদ্যুতের খরচ। মাইনিং প্রক্রিয়ায় প্রচুর বিদ্যুৎ লাগে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়।

লেনদেনের গতি অনেক সময় ধীর হয়। বিশেষ করে বিটকয়েনে লেনদেন সম্পন্ন হতে সময় লাগে। স্কেলেবিলিটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বেশি ব্যবহারকারী হলে সিস্টেম ধীর হয়ে যায়।

নিয়ন্ত্রক অস্পষ্টতা আরেকটি সমস্যা। সরকারি নিয়মকানুন এখনও স্পষ্ট নয়। অনেক দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত। প্রযুক্তিগত জটিলতা সাধারণ মানুষের জন্য বুঝতে কঠিন।

একবার লেনদেন সম্পন্ন হলে তা বাতিল করা যায় না। ভুল হলেও ফেরত নেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া প্রাইভেট কি হারিয়ে গেলে সব সম্পদ হারানোর ঝুঁকি থাকে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আগামী দশকে এর ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ শুরু হবে। স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট আরও জনপ্রিয় হবে।

সরকারি সেবায় এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। ভূমি রেকর্ড, পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সবকিছুতেই ব্লকচেইন আসবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সার্টিফিকেট যাচাইয়ে এটি প্রধান মাধ্যম হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবসায়েও ব্লকচেইনের প্রবেশ ঘটবে। কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিংয়ে এর ব্যবহার হবে। মেটাভার্স ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতেও এর গুরুত্ব বাড়বে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি উদাহরণ

ব্লকচেইন প্রযুক্তি উদাহরণ হিসেবে বিটকয়েন সবচেয়ে পরিচিত। এটি প্রথম সফল ক্রিপ্টোকারেন্সি। ইথেরিয়াম আরেকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এতে স্মার্ট কন্ট্র্যাক্টের ব্যবহার রয়েছে।

ওয়ালমার্ট তাদের খাদ্য সরবরাহ চেইনে ব্লকচেইন ব্যবহার করে। এতে খাদ্যের উৎস সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। মাস্টারকার্ড পেমেন্ট সিস্টেমে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

ডক্টোরালিয়া স্বাস্থ্যসেবায় ব্লকচেইন প্রয়োগ করেছে। রোগীর তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। এস্তোনিয়া সরকার ডিজিটাল পরিচয়পত্রে ব্লকচেইন ব্যবহার করে।

চাইনাতে ব্লকচেইন বেসড ভোটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। সিঙ্গাপুরে জাতীয় পরিচয় যাচাইয়ে এটি ব্যবহার হচ্ছে। দুবাই ২০২৫ সালের মধ্যে সব সরকারি কাজে ব্লকচেইন আনার পরিকল্পনা করেছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্লকচেইন হলো প্রযুক্তি, আর ক্রিপ্টোকারেন্সি তার একটি প্রয়োগ। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, বিএনবি সব ব্লকচেইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

প্রতিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন ব্লকচেইনে রেকর্ড হয়। এতে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। সব লেনদেন জনসাধারণের কাছে দৃশ্যমান। তবে ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকে।

মাইনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন কয়েন তৈরি হয়। মাইনাররা লেনদেন যাচাই করে পুরস্কার পান। এই পুরস্কার নতুন কয়েনের আকারে দেওয়া হয়। ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স (DeFi) এখন খুবই জনপ্রিয়।

স্টেবলকয়েন একধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। এর মূল্য নিয়মিত মুদ্রার সাথে যুক্ত। এতে দাম অস্থিরতা কম থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (CBDC) এর চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিরাপত্তা

ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিরাপত্তা এর ক্ষেত্রে এগিয়ে। এই প্রযুক্তিতে ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশিং ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ব্লকে আগের ব্লকের হ্যাশ থাকে। ফলে কোনো তথ্য পরিবর্তন করা কঠিন।

পাবলিক কি এবং প্রাইভেট কি দিয়ে লেনদেন সুরক্ষিত হয়। প্রাইভেট কি ছাড়া কেউ লেনদেন করতে পারে না। মাল্টিসিগনেচার ওয়ালেট আরও বেশি নিরাপত্তা দেয়। একাধিক স্বাক্ষর লাগে লেনদেনে।

কনসেনসাস মেকানিজম নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বাড়ায়। প্রুফ অব ওয়ার্ক এবং প্রুফ অব স্টেক দুটোই নিরাপদ। ৫১% আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।

স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট অডিট নিরাপত্তার অংশ। কোড পরীক্ষা করে দুর্বলতা খুঁজে বের করা হয়। কোল্ড স্টোরেজ দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ। হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমায়।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রভাব

আধুনিক বিশ্বে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রভাব ব্যাপক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বিপ্লব এনেছে। ব্যাংকিং সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স সহজ ও সস্তা হয়েছে।

সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এনেছে। কোথা থেকে পণ্য আসছে তা সহজে জানা যায়। খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নকল পণ্য শনাক্তকরণে সহায়তা করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে সার্টিফিকেট জালিয়াতি কমেছে। মেধা যাচাই সহজ হয়েছে। কর্মসংস্থানে যোগ্যতা নিরূপণ দ্রুত হয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবায় রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা পেয়েছে। চিকিৎসার ইতিহাস সহজে পাওয়া যায়। ওষুধের নকল রোধে এটি কার্যকর। চিকিৎসা গবেষণায় তথ্যের বিশ্বস্ততা বেড়েছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং খাত

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং খাত এর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলো এই প্রযুক্তি গ্রহণ করছে দ্রুততার সাথে। ক্রস বর্ডার পেমেন্টে সময় ও খরচ কমেছে। রেমিট্যান্স পাঠানো এখন আগের চেয়ে দ্রুত।

কেওয়াইসি (Know Your Customer) প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। গ্রাহকের পরিচয় যাচাই একবারই করলে হয়। বিভিন্ন ব্যাংকে আলাদা করে যাচাই লাগে না। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচে।

ট্রেড ফাইন্যান্সে কাগজপত্রের ঝামেলা কমেছে। লেটার অব ক্রেডিট ডিজিটাল হয়েছে। আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছে। জালিয়াতির সুযোগ কমে গেছে।

স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট দিয়ে ঋণ প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে। শর্ত পূরণ হলে ঋণ এবং সুদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়। এতে মানুষের হস্তক্ষেপ কম লাগে। ভুলের সম্ভাবনাও কমে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও এর ব্যবহারিক সুবিধা

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক গড়ে উঠছে। সরকার এই প্রযুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এর পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তবে ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। আইসিটি বিভাগ এর ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে এর ভূমিকা আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজেশনে এটি কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায়ও এর প্রয়োগ সম্ভব।

তরুণ প্রজন্ম এই প্রযুক্তিতে আগ্রহী। ফ্রিল্যান্সিং খাতে এর ব্যবহার বাড়ছে। স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করছে। দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তির গুরুত্ব

আধুনিক ডিজিটাল যুগে ব্লকচেইন প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি তথ্য নিরাপত্তায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষায় এর অবদান অনস্বীকার্য। সাইবার নিরাপত্তায় এটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

বিশ্বস্ততার সংকট সমাধানে এটি কার্যকর। তৃতীয় পক্ষের উপর নির্ভরতা কমায়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট লেনদেন সম্ভব করে। মধ্যস্থতাকারীর খরচ বাঁচায়।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনে। ভোটিং সিস্টেমে জালিয়াতি রোধ করে। সরকারি সেবায় দুর্নীতি কমায়। জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে।

উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি সুযোগ। প্রযুক্তিগত লিপফ্রগিং সম্ভব। কম খরচে উন্নত সেবা পাওয়া যায়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পায়।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেন ব্যবস্থা

ব্লকচেইন প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেন ব্যবস্থা অত্যন্ত দক্ষ। ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির চেয়ে এটি দ্রুততর। ২৪/৭ সেবা পাওয়া যায়। ছুটির দিন বা রাতে কোনো বাধা নেই।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে দিন খানেক সময় লাগত। এখন মিনিটেই সম্পন্ন হয়। ফি অনেক কম। ব্যাংকের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ হয়েছে।

স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট স্বয়ংক্রিয় লেনদেন করে। শর্ত পূরণ হলে নিজেই কার্যকর হয়। মানুষের হস্তক্ষেপ কম লাগে। ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মাইক্রোপেমেন্ট সহজ হয়েছে। ছোট পরিমাণ টাকা পাঠানো লাভজনক। কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা সরাসরি পেমেন্ট পান। মধ্যস্থতাকারীর ভাগ কাটা যায় না।

উপসংহার

ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই প্রযুক্তি আমাদের ডিজিটাল জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। তথ্যের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব অপরিসীম।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি বিশেষ সুযোগ। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে এর সঠিক প্রয়োগ হলে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুততর হবে।

যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে এসব সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক ব্যবহার। তাহলেই ব্লকচেইন প্রযুক্তির পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে।

এই প্রযুক্তি শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, বরং ভবিষ্যতের ভিত্তি। যারা আজ এটি গ্রহণ করবেন, তারাই আগামীর নেতৃত্ব দেবেন। তাই এই মুহূর্তেই ব্লকচেইন সম্পর্কে জানা ও শেখা জরুরি।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী?

ব্লকচেইন একটি বিকেন্দ্রীভূত ডেটাবেস সিস্টেম। যেখানে তথ্য ব্লক আকারে সংরক্ষিত হয়। প্রতিটি ব্লক আগের সাথে যুক্ত থাকে। এতে তথ্য পরিবর্তন করা কঠিন।

ব্লকচেইন কত প্রকার?

ব্লকচেইন মূলত চার প্রকারে ভাগ করা যায়। প্রতিটির আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার রয়েছে।সহজভাবে বললে –
Public = সবার জন্য উন্মুক্ত,
Private = কেবল নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য,
Consortium = একাধিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ নিয়ন্ত্রণ,
Hybrid = পাবলিক ও প্রাইভেটের মিশ্রণ।

ব্লকচেইন কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, ব্লকচেইন অত্যন্ত নিরাপদ। ক্রিপ্টোগ্রাফিক এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়। তথ্য একাধিক স্থানে সংরক্ষিত থাকে। হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব।

ব্লকচেইন ও বিটকয়েনের পার্থক্য কী?

ব্লকচেইন একটি প্রযুক্তি। বিটকয়েন সেই প্রযুক্তির একটি প্রয়োগ। ব্লকচেইনের আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে। বিটকয়েন শুধুমাত্র একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি।

ব্লকচেইন কীভাবে শিখবো?

অনলাইন কোর্স করুন। বই পড়ুন। ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখুন। প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্ট করুন। কমিউনিটিতে যোগ দিন।

বাংলাদেশে ব্লকচেইনের ভবিষ্যৎ কী?

বাংলাদেশে ব্লকচেইনের সম্ভাবনা অনেক। সরকারি সহায়তা বাড়ছে। তরুণরা আগ্রহী। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

ব্লকচেইন শেখার জন্য কী যোগ্যতা লাগে?

বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান থাকলেই চলে। প্রোগ্রামিং জানলে ভালো। গণিতের মৌলিক ধারণা দরকার। ধৈর্য ও আগ্রহ সবচেয়ে জরুরি।

স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট কী?

স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট হলো স্বয়ংক্রিয় চুক্তি। কোডে লেখা শর্ত পূরণ হলে নিজেই কার্যকর হয়। কোনো মধ্যস্থতাকারী লাগে না। খরচ ও সময় বাঁচে।

ব্লকচেইন কি পরিবেশের ক্ষতি করে?

কিছু ব্লকচেইন বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে। তবে নতুন প্রযুক্তি আরও কম শক্তি ব্যবহার করে। প্রুফ অব স্টেক পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব। ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে।

ব্লকচেইন কি বন্ধ হবে?

Public Blockchain (যেমন Bitcoin): বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব।
Private / Consortium Blockchain: মালিকেরা চাইলে বন্ধ করতে পারে।

🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍

Scroll to Top