আমাদের দেশে নিরাপদ ভবন তৈরি করা খুবই জরুরি। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করলে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। আজকে আমরা জানবো কিভাবে সঠিক নিয়মে ভবন নির্মাণ করতে হয়।
বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড

বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী। এই নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করলে মানুষ নিরাপদে থাকে। সরকার এই কোড তৈরি করেছে সবার সুরক্ষার জন্য। প্রতিটি নতুন ভবনে এই নিয়ম মানতে হবে। পুরানো ভবনও এই কোড অনুযায়ী সংস্কার করা উচিত।
বিল্ডিং কোড এর নিয়মাবলী
Building Code এর নিয়মাবলী অনেক বিস্তৃত। এতে রয়েছে নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণের সব পর্যায়। প্রতিটি ধাপে আলাদা নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সঠিক নিয়ম মানলে ভবন হয় দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ।
ঢাকা শহরের বিল্ডিং কোড
ঢাকা শহরে বিশেষ বিল্ডিং কোড রয়েছে। জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় এখানে কঠোর নিয়ম। RAJUK এই নিয়ম তৈরি করে। প্রতিটি ভবন নির্মাতাকে এই নিয়ম জানতে হবে।
- ঢাকায় ভবনের উচ্চতা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হয়
- রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী ভবনের তলা নির্ধারণ হয়
- প্রতিটি তলায় নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রাখতে হয়
- পার্কিং এর জন্য আলাদা জায়গা রাখতে হয়
- বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়
বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ
বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ করা সবার দায়িত্ব। প্রথমে জমির মাপ ও অবস্থান ঠিক করতে হয়। তারপর সঠিক নকশা তৈরি করতে হয়। উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। কাজের প্রতিটি ধাপে তদারকি করতে হয়।
বাংলাদেশ জাতীয় Building Code
বাংলাদেশ জাতীয় Building Code সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য। এটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট প্রণয়ন করেছে। কোডে রয়েছে নির্মাণ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের সব দিক। সব ধরনের ভবনের জন্য আলাদা নিয়ম আছে।
ভবনের ধরন | সর্বোচ্চ তলা | প্রয়োজনীয় লাইসেন্স | নিরাপত্তা ব্যবস্থা |
আবাসিক | ১০ তলা | RAJUK অনুমোদন | ফায়ার এক্সিট |
বাণিজ্যিক | ১৫ তলা | ট্রেড লাইসেন্স | স্প্রিঙ্কলার |
শিল্প | ৮ তলা | পরিবেশ ছাড়পত্র | অ্যালার্ম সিস্টেম |
প্রাতিষ্ঠানিক | ১২ তলা | প্রতিষ্ঠানিক অনুমতি | জরুরি বহির্গমন |
Building Code আইন বাংলাদেশ
Building Code আইন বাংলাদেশে কঠোর। নিয়ম না মানলে জরিমানা হয়। মাঝে মাঝে ভবন ভাঙতেও হয়। সরকারি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত তদারকি করে। সবার উচিত আইন মেনে ভবন তৈরি করা।
অগ্নি নিরাপত্তা বিল্ডিং কোড
আগুনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এই কোড জরুরি। বাংলাদেশে প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়। সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখলে জীবন বাঁচানো যায়। প্রতিটি ভবনে এই নিয়ম মানতে হয়।
- প্রতি তলায় অন্তত দুইটি সিঁড়ি রাখতে হয়
- ফায়ার এক্সিট সবসময় খোলা রাখতে হয়
- স্মোক ডিটেক্টর বসাতে হয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়
- পানির ট্যাংক থেকে ফায়ার লাইন আলাদা করতে হয়
- জেনারেটর রুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হয়
ভূমিকম্প প্রতিরোধী Building Code
ভূমিকম্প প্রতিরোধী Building Code বাংলাদেশে নতুন। আমাদের দেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে। তাই এই নিয়ম মানা খুবই জরুরি। বিশেষ ধরনের রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। ভিত্তি শক্তিশালী করতে হয় বিশেষ পদ্ধতিতে।
টেকসই নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড
পরিবেশ রক্ষা করতে টেকসই নির্মাণ জরুরি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ ভবন তৈরি করে প্রকৃতি বাঁচানো যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি সম্ভব।
- পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হয়
- সূর্যের আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়
- বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়
- সোলার প্যানেল বসানোর সুবিধা রাখতে হয়
- গাছপালা লাগানোর জায়গা রাখতে হয়
আবাসিক ভবনের Building Code
আবাসিক ভবনের Building Code সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে মানুষ থাকে সবচেয়ে বেশি সময়। প্রতিটি ফ্ল্যাটে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হয়। রান্নাঘর ও বাথরুমে আলাদা বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফ্ল্যাট নির্মাণে বিল্ডিং কোড
ফ্ল্যাট নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা আবশ্যক। প্রতিটি ইউনিটের জন্য আলাদা মিটার লাগাতে হয়। কমন এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হয়। লিফটের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখতে হয়। সবার নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ফ্ল্যাটের ধরন | ন্যূনতম কক্ষ | বারান্দা | পার্কিং স্পেস |
স্টুডিও | ১টি | ১টি ছোট | ০.৫টি |
১ বেডরুম | ২টি | ১টি | ১টি |
২ বেডরুম | ৩টি | ২টি | ১.৫টি |
৩ বেডরুম | ৪টি | ২টি | ২টি |
সরকারি বিল্ডিং কোড বিধি
সরকারি ভবনের জন্য বিশেষ নিয়ম রয়েছে। এখানে অনেক মানুষ আসে প্রতিদিন। তাই নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি সতর্কতা দরকার। সবার সুবিধার কথা মাথায় রাখতে হয়।
- সরকারি ভবনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে হয়
- প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়
- পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা রাখতে হয়
- জরুরি মুহূর্তে দ্রুত বের হবার ব্যবস্থা রাখতে হয়
- সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হয়
Building Code অনুযায়ী নকশা
Building Code অনুযায়ী নকশা তৈরি করা খুব জরুরি। একজন দক্ষ স্থপতি দিয়ে নকশা করাতে হয়। নকশায় সব নিয়ম মেনে চলতে হয়। সরকারি অনুমোদন নিয়ে তবেই কাজ শুরু করতে হয়। নকশা পরিবর্তন করলে আবার অনুমোদন নিতে হয়।
নির্মাণ শ্রমিক ও বিল্ডিং কোড
নির্মাণ শ্রমিক ও বিল্ডিং কোড পরস্পর যুক্ত। শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হয়। নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হয়। মানসম্মত উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হয়। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
প্রশিক্ষণের ধরন | সময়কাল | উপকারিতা | প্রয়োজনীয়তা |
মৌলিক নিরাপত্তা | ৭ দিন | দুর্ঘটনা কমে | বাধ্যতামূলক |
কারিগরি প্রশিক্ষণ | ১৫ দিন | গুণগত কাজ | অভিজ্ঞতা অনুযায়ী |
যন্ত্রপাতি ব্যবহার | ৫ দিন | দক্ষতা বৃদ্ধি | যন্ত্র ব্যবহারকারী |
জরুরি অবস্থা | ৩ দিন | জীবন বাঁচানো | সকলের জন্য |
বিল্ডিং কোড অনুমোদন প্রক্রিয়া
অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ করা যায় না। এটি আইনি প্রক্রিয়া যা সবাইকে মানতে হয়। সঠিক কাগজপত্র জমা দিলে সহজে অনুমোদন পাওয়া যায়। ধৈর্য ধরে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।
- প্রথমে নকশা জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট অফিসে
- মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে হয়
- নিয়মাবলী মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়
- নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়
- অনুমোদন পেলে তবেই নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়
Building Code অনুযায়ী ফাউন্ডেশন
Building Code অনুযায়ী ফাউন্ডেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাটির ধরন বুঝে ভিত্তি তৈরি করতে হয়। গভীরতা ও প্রশস্ততা নিয়ম অনুযায়ী করতে হয়। মানসম্মত রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। ভিত্তি শুকানোর পর পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং কোড
পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং কোড এখন অত্যন্ত জরুরি। কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। সবুজ ছাদ বা দেওয়াল তৈরি করার চেষ্টা করতে হয়। সৌর শক্তি ব্যবহারের সুবিধা রাখতে হয়।
উচ্চতা সীমা বিল্ডিং কোড
ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে বিশেষ নিয়ম আছে। রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী উচ্চতা ঠিক করা হয়। এই নিয়ম না মানলে সমস্যা হয়। প্রতিটি এলাকায় আলাদা সীমা থাকতে পারে।
- রাস্তার প্রশস্ততা ৬ মিটার হলে সর্বোচ্চ ৪ তলা করা যায়
- ৯ মিটার প্রশস্ত রাস্তায় সর্বোচ্চ ৬ তলা করা যায়
- ১৫ মিটারের বেশি প্রশস্ত রাস্তায় আরও বেশি তলা করা যায়
- বিশেষ এলাকায় উচ্চতার অতিরিক্ত সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে
- পুরানো ঢাকায় বিশেষ নিয়ম রয়েছে উচ্চতার জন্য
ভবন নিরাপত্তা ও বিল্ডিং কোড

ভবন নিরাপত্তা ও বিল্ডিং কোড একসাথে কাজ করে। প্রতিটি ভবনে নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা রাখতে হয়। প্রবেশ ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হয়। জরুরি অবস্থায় যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হয়। নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে হয়।
নিরাপত্তার ধরন | প্রয়োগ ক্ষেত্র | খরচ | কার্যকারিতা |
সিসি ক্যামেরা | সব জায়গা | মাঝারি | উচ্চ |
এক্সেস কন্ট্রোল | প্রবেশপথ | বেশি | খুব উচ্চ |
অ্যালার্ম সিস্টেম | গুরুত্বপূর্ণ স্থান | কম | মাঝারি |
নিরাপত্তারক্ষী | ২৪/৭ | বেশি | উচ্চ |
আধুনিক বিল্ডিং কোড মানদণ্ড
আধুনিক বিল্ডিং কোড মানদণ্ড দিন দিন উন্নত হচ্ছে। স্মার্ট ভবনের জন্য নতুন নিয়ম যোগ হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য কঠোর মানদণ্ড তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মিলানোর চেষ্টা হচ্ছে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
উপসংহার
বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সঠিক নিয়ম মানলে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি। প্রতিটি ভবন নির্মাতাকে এই নিয়ম জানতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে। নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)
বিল্ডিং কোড কি সব ভবনের জন্য একই?
না, আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প ভবনের জন্য আলাদা নিয়ম আছে। প্রতিটি ধরনের ভবনের জন্য বিশেষ মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিল্ডিং কোড না মানলে কী হয়?
নিয়ম না মানলে জরিমানা হয়। কখনো কখনো ভবন ভেঙে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
পুরানো ভবন কি বিল্ডিং কোড মানতে হবে?
হ্যাঁ, পুরানো ভবনও যতটা সম্ভব নিয়ম মানতে হয়। সংস্কারের সময় অবশ্যই নতুন কোড মানতে হয়।
বিল্ডিং কোড অনুমোদন কতদিনে পাওয়া যায়?
সাধারণত ১৫-৩০ দিনের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে কাগজপত্র সঠিক থাকলে দ্রুত হয়।
ছোট বাড়ির জন্যও কি বিল্ডিং কোড লাগে?
হ্যাঁ, যেকোনো আকারের ভবনের জন্য বিল্ডিং কোড প্রযোজ্য। নিরাপত্তার জন্য সব ভবনেই নিয়ম মানতে হয়।
বিল্ডিং কোড অনুমোদনের খরচ কত?
ভবনের আকার ও ধরন অনুযায়ী খরচ হয়। সাধারণত ৫০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে খরচ হয়।
বিল্ডিং কোড ভাঙলে কত জরিমানা?
ভবনের আকার অনুযায়ী ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। মারাত্মক লঙ্ঘনে আরো বেশি।
এক তলা বাড়িতেও কি লিফট লাগবে?
না, সাধারণত ৫ তলার বেশি ভবনে লিফট বাধ্যতামূলক। তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প বা লিফট দিতে হয়।
বিল্ডিং কোড কে তৈরি করে?
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট এই কোড তৈরি করে। স্থানীয় সরকার প্রয়োগ করে।
বিল্ডিং কোড সম্পর্কে কোথায় জানা যাবে?
RAJUK, সিটি কর্পোরেশন বা উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত জানা যাবে। ইন্টারনেটেও তথ্য পাওয়া যায়।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍