আজকালের শহুরে জীবনে অনেকেই নিজের বাড়িতে তাজা ফল খেতে চান। কিন্তু জায়গার অভাবে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। তবে চিন্তার কিছু নেই! ছাদ বাগানে টবে ফলের গাছ লাগিয়ে আপনিও পেতে পারেন স্বাস্থ্যকর ও মজাদার ফল। এই পদ্ধতি খুবই সহজ এবং কম খরচে করা যায়।
ছাদ বাগানে টবে ফলের গাছ লাগানো এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু একটু সঠিক নিয়ম জানলেই আপনি সফল হতে পারেন। এই লেখায় আমরা জানাব কীভাবে সহজে ছাদে টবে ফল গাছ লাগাতে হয়।
ছাদে টবে ফল গাছ লাগানোর উপায়

ছাদে টবে ফল গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে সঠিক জায়গা বেছে নিতে হবে। সূর্যের আলো পড়ে এমন স্থান বেছে নিন। দিনে কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা রোদ পাওয়া জরুরি। টব বসানোর জায়গায় পানি জমে থাকা যাবে না।
মাটি প্রস্তুত করার সময় দোআঁশ মাটি, গোবর সার ও বালু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ফল গাছের জন্য খুবই ভালো। চারা লাগানোর আগে টবের তলায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। এতে পানি জমে গাছের ক্ষতি হবে না।
গাছ লাগানোর সময় খেয়াল রাখুন যেন শিকড় ভালোভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। চারা লাগানোর পর হালকা পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিন। প্রথম কয়েকদিন ছায়ায় রেখে পরে ধীরে ধীরে রোদে দিন।
ছাদে ফল গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ:
• উপযুক্ত সাইজের টব (২০-৩০ ইঞ্চি গভীর)
• ভালো মানের বীজ বা কলমের চারা
• দোআঁশ মাটি, গোবর সার ও বালুর মিশ্রণ
• পানি দেওয়ার পাত্র বা নল
• নিষ্কাশনের জন্য ইট বা নুড়ি পাথর
ছাদ বাগানের জন্য সেরা ফলের গাছ
ছাদ বাগানের জন্য এমন ফলের গাছ বেছে নিন যেগুলো টবে ভালো বেড়ে ওঠে। লেবু, কমলা, আমলকী, পেঁপে ও কলা গাছ টবে খুব ভালো হয়। এই গাছগুলো কম জায়গায় লাগানো যায় এবং ফলও ভালো হয়।
আম গাছের জন্য বামন জাতের গাছ বেছে নিন। কারণ সাধারণ আম গাছ অনেক বড় হয় এবং টবে সীমিত থাকে না। বামন জাতের আম গাছ ৩-৪ ফুট উচ্চতায় ফল দেয়। এগুলো ছাদ বাগানের জন্য একদম উপযুক্ত।
ড্রাগন ফল এখন খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এই গাছ টবেও ভালো জন্মে। তবে এর জন্য বড় টব লাগে। ড্রাগন ফল গাছে তাড়াতাড়ি ফল আসে এবং খেতেও খুব মজাদার।
ছাদ বাগানের উপযুক্ত ফলের তালিকা:
• লেবু জাতীয় ফল (কমলা, মাল্টা, লেবু)
• ছোট আকারের আম (বামন জাত)
• পেঁপে গাছ (সহজ চাষ)
• কলা গাছ (তাড়াতাড়ি ফল)
• আমলকী (পুষ্টিগুণ বেশি)
টবে আম গাছের যত্ন
টবে আম গাছের যত্ন নেওয়া একটু কঠিন মনে হলেও আসলে তা নয়। বামন জাতের আম গাছ বেছে নিলে কাজ অনেক সহজ হয়। গাছ লাগানোর পর নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে বেশি পানি দেওয়া যাবে না।
আম গাছে মুকুল আসার সময় বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এই সময় পোকা আক্রমণের ভয় থাকে। তাই নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
আম গাছে সার দেওয়ার নিয়ম আছে। মাসে একবার গোবর সার বা কম্পোস্ট দিন। ফল ধরার সময় পটাশ সার দিলে ফল মিষ্টি হয়। শীতকালে আম গাছে কম পানি দিতে হয়।
সময় | যত্নের ধরন | প্রয়োজনীয় কাজ |
বর্ষাকাল | পানি নিয়ন্ত্রণ | অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন |
শীতকাল | সার প্রয়োগ | গোবর সার ও কম্পোস্ট |
গ্রীষ্মকাল | পানি সেচ | নিয়মিত পানি দেওয়া |
মুকুল আসার সময় | পোকা দমন | জৈব কীটনাশক স্প্রে |
ছাদ বাগানে টবে লেবু গাছ
লেবু গাছ ছাদ বাগানের জন্য সবচেয়ে ভালো ফলের গাছ। এই গাছ টবে খুব সহজে বেড়ে ওঠে। সারা বছর ফল পাওয়া যায়। লেবু গাছে ফুল ও ফল একসাথে দেখা যায়।
ছাদ বাগানে টবে লেবু গাছ লাগানোর জন্য মাঝারি সাইজের টব যথেষ্ট। ১৫-২০ ইঞ্চি টবে লেবু গাছ ভালো হয়। মাটিতে গোবর সার মিশিয়ে দিন। নিয়মিত পানি দিন তবে পানি যেন না জমে।
লেবু গাছে পোকার আক্রমণ কম হয়। তবে মাঝে মাঝে পাতায় দাগ পড়তে পারে। এর জন্য নিম তেল স্প্রে করুন। লেবু গাছ ছাঁটাই করলে আরো বেশি ফল পাওয়া যায়।
লেবু গাছের যত্নের টিপস:
• সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিন
• মাসে একবার জৈব সার প্রয়োগ করুন
• পোকা দমনে নিম তেল ব্যবহার করুন
• নিয়মিত মরা ডাল কেটে দিন
• ফল পাড়ার পর গাছ ছাঁটাই করুন
ছাদে ফল গাছ চাষের নিয়ম
ছাদে ফল গাছ চাষের জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম মানতে হয়। প্রথমেই মনে রাখুন যে ছাদের পরিবেশ একটু আলাদা। এখানে বেশি গরম পড়ে এবং বাতাসও বেশি লাগে। তাই গাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
টব বসানোর আগে ছাদের মেঝে পরীক্ষা করুন। পানি জমে থাকার ব্যবস্থা থাকলে তা ঠিক করুন। টবগুলো এমনভাবে সাজান যেন সবাই সূর্যের আলো পায়। একই সাথে বৃষ্টির পানি যেন সহজে নিষ্কাশিত হয়।
গাছে পানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন। গ্রীষ্মকালে বেশি পানি লাগে। শীতকালে কম পানি দিন। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। এতে গাছের শিকড় পচে যাবে না।
টবে কলা গাছ লাগানো
টবে কলা গাছ লাগানো খুবই সহজ এবং লাভজনক। কলা গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং একবার লাগালে বার বার ফল পাওয়া যায়। ছোট জাতের কলা গাছ টবের জন্য বেশি উপযুক্ত।
কলা গাছের জন্য বড় টব দরকার। কমপক্ষে ২৫-৩০ ইঞ্চি টব ব্যবহার করুন। মাটিতে প্রচুর জৈব সার মিশিয়ে দিন। কলা গাছ অনেক সার খায়। তাই নিয়মিত সার দিতে হবে।
কলা গাছে প্রথমে একটি কাণ্ড থেকে ফল আসে। তারপর পাশ থেকে নতুন কাণ্ড বের হয়। পুরাতন কাণ্ড কেটে দিলে নতুন কাণ্ড আরো ভালো হয়। এভাবে অনেকদিন কলা পাওয়া যায়।
কলা গাছ লাগানোর ধাপ:
• বড় টব প্রস্তুত করুন (২৫+ ইঞ্চি)
• জৈব সার মিশ্রিত মাটি ব্যবহার করুন
• সুস্থ ও ভালো চারা বেছে নিন
• গভীরভাবে চারা রোপণ করুন
• নিয়মিত পানি ও সার দিন
ছাদ বাগানে কম গাছের যত্ন
ছাদ বাগানে কম গাছের যত্ন নেওয়া একটি বিশেষ দক্ষতা। কম গাছ মানে এই নয় যে কম যত্ন নিতে হবে। বরং প্রতিটি গাছের জন্য বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। কম গাছ থাকলে প্রতিটির সঠিক যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়।
কম গাছ থাকলে প্রতিদিন সব গাছ পরীক্ষা করা যায়। কোনো গাছে রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে তাড়াতাড়ি বোঝা যায়। এতে সমাধানও দ্রুত করা যায়। প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা যত্নের পরিকল্পনা করুন।
কম গাছের জন্য উন্নত মানের টব ও মাটি ব্যবহার করুন। দামি হলেও ভালো জিনিস ব্যবহার করলে ফলাফল ভালো হয়। নিয়মিত সার দিন এবং পানি দেওয়ার সময় সূচি মেনে চলুন।
টবে ফল গাছের সার ব্যবস্থাপনা
টবে ফল গাছের সার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমিতে লাগানো গাছের চেয়ে টবের গাছে বেশি সার লাগে। কারণ টবে সীমিত মাটি থাকে এবং পুষ্টি উপাদান দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
জৈব সার সবসময় রাসায়নিক সারের চেয়ে ভালো। গোবর সার, কম্পোস্ট, কেঁচো সার ব্যবহার করুন। এগুলো মাটির গুণাগুণ বাড়ায় এবং গাছের জন্য নিরাপদ। মাসে একবার জৈব সার দেওয়া যথেষ্ট।
ফল ধরার সময় পটাশ সার দিলে ফল মিষ্টি হয়। নাইট্রোজেন সার পাতা বৃদ্ধির জন্য ভালো। তবে বেশি নাইট্রোজেন দিলে ফল কম আসে। সার দেওয়ার আগে গাছের চাহিদা বুঝে নিন।
সারের নাম | ব্যবহারের সময় | পরিমাণ | উপকারিতা |
গোবর সার | মাসে ১ বার | ২-৩ চামচ | মাটির গুণ বৃদ্ধি |
কম্পোস্ট | ১৫ দিন অন্তর | ১-২ চামচ | পুষ্টি সরবরাহ |
পটাশ সার | ফল ধরার সময় | ১ চামচ | ফল মিষ্টি করে |
নাইট্রোজেন | বৃদ্ধির সময় | ১/২ চামচ | পাতা বৃদ্ধি |
সার প্রয়োগের নিয়ম:
• সকালে বা বিকালে সার দিন
• সার দেওয়ার পর পানি দিন
• মাটিতে সার মিশিয়ে দিন
• গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে দিন
• বেশি সার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
ছাদ বাগানে টবে আমলকী গাছ
আমলকী একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। ছাদ বাগানে টবে আমলকী গাছ লাগানো যায়। তবে আমলকী গাছ একটু বড় হয় তাই বড় টব লাগবে। কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি টব ব্যবহার করুন।
আমলকী গাছ একবার লাগলে অনেক বছর ফল দেয়। এই গাছে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। তবে শুরুতে ভালো মাটি ও সার দিতে হয়। আমলকী গাছ শীতকালে ফল দেয়।
আমলকী গাছে তেমন পোকার আক্রমণ হয় না। গাছ শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। একটি আমলকী গাছ থেকে অনেক ফল পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর জন্য আমলকী খুবই ভালো।
টবে পেঁপে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
পেঁপে গাছ টবে লাগানো সবচেয়ে সহজ। এই গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং তাড়াতাড়ি ফল দেয়। ৬-৮ মাসের মধ্যে পেঁপে ফল পাওয়া যায়। টবে পেঁপে গাছ লাগানোর জন্য মাঝারি সাইজের টব যথেষ্ট।
পেঁপে গাছের বীজ সংগ্রহ করা খুবই সহজ। পাকা পেঁপে থেকে বীজ নিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর টবে লাগান। ৭-১০ দিনের মধ্যে গজাবে। একসাথে কয়েকটি বীজ লাগিয়ে পরে ভালো চারা রেখে বাকি কেটে দিন।
পেঁপে গাছে নিয়মিত পানি দিতে হয়। তবে বেশি পানি দেওয়া যাবে না। এতে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। পেঁপে গাছে মাসে একবার জৈব সার দিন। গাছ বড় হলে খুঁটির সাহায্য নিন।
পেঁপে গাছের সুবিধা:
• দ্রুত ফল পাওয়া যায়
• কম যত্নে ভালো ফল
• সারা বছর ফল পাওয়া যায়
• পুষ্টিগুণ অনেক বেশি
- হজমের জন্য খুবই ভালো
ছাদে টবে ড্রাগন ফল চাষ
ড্রাগন ফল এখন খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফল দেখতে সুন্দর এবং খেতেও মজাদার। ছাদে টবে ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। তবে এর জন্য বড় টব ও বিশেষ ব্যবস্থা লাগে।
ড্রাগন ফল গাছ আসলে একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বেড়ে ওঠার জন্য খুঁটির সাহায্য নেয়। ছাদে একটি মজবুত খুঁটি লাগিয়ে তার সাথে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছ অনেক লম্বা হয়।
ড্রাগন ফল গাছে কম পানি লাগে। বেশি পানি দিলে গাছ মরে যেতে পারে। এই গাছ রাতে ফুল ফোটে এবং হাত দিয়ে পরাগায়ন করাতে হয়। ২-৩ বছর পর নিয়মিত ফল পাওয়া যায়।
টবে ফল গাছের পানি দেওয়ার নিয়ম
টবে ফল গাছের পানি দেওয়ার নিয়ম জানা খুবই জরুরি। ভুল পানি দিলে গাছ মরে যেতে পারে। প্রতিটি গাছের পানির চাহিদা আলাদা। গ্রীষ্মকালে বেশি পানি এবং শীতকালে কম পানি দিতে হয়।
পানি দেওয়ার সময় মাটির অবস্থা দেখে নিন। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিন। আঙুল দিয়ে মাটি টিপে দেখুন। ১-২ ইঞ্চি গভীরে মাটি শুকনো থাকলে পানি দেওয়ার সময় হয়েছে। বেশি পানি দিলে শিকড় পচে যায়।
সকালে বা বিকালে পানি দেওয়া ভালো। দুপুরের রোদে পানি দেওয়া যাবে না। পানি দেওয়ার সময় পাতায় পানি না দিয়ে মাটিতে দিন। এতে পাতায় ছত্রাকের সংক্রমণ কম হয়।
পানি দেওয়ার সময়সূচী:
• গ্রীষ্মকাল: প্রতিদিন বা একদিন অন্তর
• বর্ষাকাল: প্রয়োজন অনুযায়ী
• শীতকাল: সপ্তাহে ২-৩ বার
• ছোট গাছ: কম পানি, বার বার
• বড় গাছ: বেশি পানি, কম বার
ছাদ বাগানের জন্য টব প্রস্তুত করার উপায়
ছাদ বাগানের জন্য টব প্রস্তুত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিক টব প্রস্তুত করলে গাছ ভালো হয় এবং বেশি ফল পাওয়া যায়। টব কেনার সময় মানসম্পন্ন টব বেছে নিন। প্ল্যাস্টিক বা মাটির টব ব্যবহার করতে পারেন।
টবের নিচে অবশ্যই ছিদ্র থাকতে হবে। এতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। ছিদ্রের উপর ইটের টুকরো বা নুড়ি পাথর দিন। এর উপর মাটি দিন। এই ব্যবস্থায় পানি জমে থাকে না।
মাটি প্রস্তুত করার সময় ৫০% দোআঁশ মাটি, ৩০% গোবর সার ও ২০% বালু মিশান। এই মিশ্রণ ফল গাছের জন্য খুবই ভালো। চাইলে কম্পোস্টও মিশাতে পারেন। মাটি তৈরি করার পর ১৫-২০ দিন রেখে দিন।
টবে ফল গাছের রোগবালাই প্রতিকার

টবে ফল গাছের রোগবালাই একটি সাধারণ সমস্যা। তবে সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যা এড়ানো যায়। নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করুন। কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন।
পোকার আক্রমণের জন্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন। নিম তেল, সাবান পানি বা রসুনের রস স্প্রে করতে পারেন। রাসায়নিক কীটনাশক এড়িয়ে চলুন। এতে ফলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
ছত্রাকের আক্রমণে পাতায় দাগ পড়ে। এর জন্য বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। আক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে দিন। গাছের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন। এতে রোগ কম হয়।
রোগবালাই প্রতিকারের উপায়:
• নিয়মিত গাছ পরিদর্শন করুন
• আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলুন
• জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন
• পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
• অতিরিক্ত আর্দ্রতা এড়িয়ে চলুন
ছাদ বাগানে টবে ফল গাছের সুবিধা
ছাদ বাগানে টবে ফল গাছের অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এতে খরচ কম হয়। একবার টব কিনলে অনেক বছর ব্যবহার করা যায়। বাড়িতে বসে তাজা ফল পাওয়া যায়। বাজারের ফলে রাসায়নিক থাকলেও নিজের ফলে তা থাকে না।
ছাদ বাগানের ফল সম্পূর্ণ জৈব ও প্রাকৃতিক। এতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু নেই। পরিবারের সবাই নিরাপদে খেতে পারেন। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের জন্য এই ফল খুবই ভালো।
ছাদ বাগানে ফল চাষ করলে পরিবেশও ভালো হয়। গাছ অক্সিজেন তৈরি করে এবং বাতাস পরিষ্কার রাখে। ছাদে গাছ থাকলে ঘর ঠান্ডা থাকে। গরমে এসির খরচও কমে যায়। এভাবে পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটোই ভালো হয়।
ছাদ বাগানে টবে ফল গাছ লাগানো একটি আনন্দের কাজ। পরিবারের সবাই মিলে এই কাজ করতে পারেন। বাচ্চারা গাছের যত্ন নিতে শিখে। এতে তারা প্রকৃতির কাছাকাছি আসে এবং দায়িত্ববোধ বাড়ে।
উপসংহার
ছাদ বাগানে টবে ফলের গাছ লাগানো আজকের দিনে খুবই প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এই পদ্ধতিতে কম খরচে ও কম জায়গায় নিজের পছন্দের ফল পাওয়া যায়। সঠিক নিয়ম মেনে চললে যে কেউ সফল হতে পারেন।
আমাদের আলোচনায় দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ টবে লাগানো সম্ভব। লেবু, পেঁপে, কলা, আম, আমলকী সব ফলই ছাদে চাষ করা যায়। প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা যত্নের প্রয়োজন। তবে মূল নিয়মগুলো প্রায় একই।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য রাখা। গাছ বড় হতে সময় লাগে। ফল আসতেও কিছু সময় প্রয়োজন। তবে একবার ফল আসা শুরু করলে বছরের পর বছর ফল পাওয়া যায়। এতে বিনিয়োগের তুলনায় অনেক বেশি লাভ।
ছাদ বাগানে টবে ফল গাছ লাগিয়ে আপনিও হতে পারেন একজন সফল বাগানি। শুধু একটু চেষ্টা ও সঠিক জ্ঞান থাকলেই এই স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। আজই শুরু করুন এবং উপভোগ করুন তাজা ও স্বাস্থ্যকর ফলের স্বাদ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী(FAQs)
ছাদ বাগানে কোন ফল গাছ সবচেয়ে ভালো?
লেবু জাতীয় ফল যেমন কমলা, মাল্টা, কাগজি লেবু সবচেয়ে ভালো। এগুলো সহজে বেড়ে ওঠে এবং সারা বছর ফল দেয়। পেঁপে গাছও খুব ভালো কারণ এটি দ্রুত ফল দেয়।
টবে ফল গাছে কতদিন পর ফল আসে?
এটি গাছের ধরনের উপর নির্ভর করে। পেঁপে গাছে ৬-৮ মাসে ফল আসে। লেবু গাছে ১-২ বছর লাগে। আম গাছে ৩-৪ বছর সময় লাগতে পারে। কলা গাছে ১০-১২ মাস লাগে।
টবের সাইজ কত বড় হতে হবে?
ছোট ফলের জন্য ১৫-২০ ইঞ্চি টব যথেষ্ট। আম ও কলা গাছের জন্য ২৫-৩০ ইঞ্চি টব লাগবে। আমলকী ও ড্রাগন ফলের জন্য আরো বড় টব প্রয়োজন। গভীরতা কমপক্ষে ১৮-২০ ইঞ্চি হতে হবে।
কত টাকা খরচ হতে পারে?
একটি মধ্যম সাইজের টব ৫০০-১০০০ টাকা। চারা ১০০-৫০০ টাকা। মাটি ও সার ২০০-৩০০ টাকা। মোট ১০০০-২০০০ টাকায় একটি ফল গাছ শুরু করা যায়। একবার লাগালে বছরের পর বছর ফল পাওয়া যায়।
ছাদের গরমে গাছ মরে যায় না?
সঠিক যত্ন নিলে মরে না। নিয়মিত পানি দিন। গরমের সময় ছায়ার ব্যবস্থা করুন। সকালে ও বিকালে পানি দিন। দুপুরে পানি দেওয়া যাবে না। এছাড়া গাছের গোড়ায় খড় বিছিয়ে দিলে মাটি ঠান্ডা থাকে।
জৈব সার কোথায় পাবো?
গোবর সার গরুর খামার থেকে পাওয়া যায়। কেঁচো সার নার্সারিতে পাওয়া যায়। বাড়িতেই কম্পোস্ট তৈরি করতে পারেন। রান্নাঘরের খোসা, পাতা দিয়ে কম্পোস্ট বানান। এটি খুবই ভালো জৈব সার।
বর্ষাকালে কি বিশেষ যত্ন লাগে?
হ্যাঁ, বর্ষাকালে বিশেষ যত্ন লাগে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। টব যেন পানিতে ডুবে না থাকে। ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয় এই সময়। তাই গাছ পরিষ্কার রাখুন এবং প্রয়োজনে জৈব ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
একসাথে কয়টি গাছ লাগানো যায়?
এটি ছাদের আকার ও আপনার সময়ের উপর নির্ভর করে। নতুনদের জন্য ৫-১০টি গাছ দিয়ে শুরু করা ভালো। অভিজ্ঞতা হলে আরো বেশি লাগাতে পারেন। তবে মনে রাখুন, বেশি গাছ মানে বেশি যত্ন।
শীতকালে গাছের যত্ন কেমন হবে?
শীতকালে কম পানি দিতে হয়। সপ্তাহে ২-৩ বার পানি যথেষ্ট। ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করুন। ছোট গাছের জন্য প্ল্যাস্টিকের ঢাকনা ব্যবহার করতে পারেন। এই সময় গাছে সার দেওয়া ভালো।
পোকার আক্রমণ হলে কি করব?
প্রথমে পোকা চিহ্নিত করুন। তারপর জৈব পদ্ধতিতে দমন করুন। নিম তেল, সাবান পানি, রসুনের রস স্প্রে করুন। হাত দিয়ে বড় পোকা তুলে ফেলুন। রাসায়নিক কীটনাশক শেষ উপায় হিসেবে ব্যবহার করুন।
🔥 পোস্টটি শেয়ার করুনঃ 🌍